পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سمرbتہسر! খরচের ব্যাপার, কিন্তু চিকিৎসা ভাল হবার সম্ভাবনা আছে, সেটা ঠিক। আচ্ছ, খোকা আর একটু বড় হোক, তাই যাওয়া যাবে। টাকার অভাবের জন্য কখনও জীবনে কোনও কাজে পিছপা হই নি, সামান্য টাকা হ’লেও কাজের সময় টাকা সৰ্ব্বদাই কুলিয়ে গিয়েছে।” দোলার ভিতর পোকার মাথাটা নড়িয়া উঠিল, কদমফুলের কেশরের মত সোজা সোজা নূতন চুল গঙ্গাইয় মাথাটি ভারি চমৎকার দেখিতে হইয়াছিল। পোক মুখভঙ্গী করিবার সূচনা করিতেই মহামায়া বলিয়া উঠিলেন, “এইবার ত সিংহ গর্জন করবে? ওরে ও স্বধ, থোকার কথাটা বদলে দিয়ে যা না মা ; নইলে মহারাজের মেজাজ ঠাণ্ডা করতে সারাদিন লাগবে।” স্বধা ঘরের ভিতর স্তণ্টলি পামারের একটা বিস্কুটের টিনে তাহার কাচের ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়াইবার চেষ্ট৷ করিতেছিল, মায়ের ডাকে ছুটিয়া আসিয়া থোকার ভিজ কাথা বদলাইয়া নৃতম বাথ পাতিয়া দিল। মহামায়া স্বামীকে ঠেলিয়া নীচু গলায় বলিলেন, “মুধার হাত নাড়বার ভঙ্গী দেখেছ । দশ বছরের মেয়ে কাপড়চোপড় পাতছে যেন কত কালের পাকা গিল্পী " চন্দ্রকান্ত হাসিয়া বলিলেন, “ভগবানের রাজ্যে মান্তম যেমন ক’রে হোক আপনার পাওনা কিছু আদায় ক’রে নেয়। তোমার কাছে পাওনা নিয়ে থোকা এসেছে, তুমি ত অৰ্দ্ধেক ফাকি দিচ্ছ বেচারীকে । তাই মায়ের হাতের সেবাট দিদিষ্ট মিটিয়ে দিচ্ছে।” মহামায়া একটু বেদনাহত স্বরে বলিলেন, “ঐ হাত চেনাই ভাল, ভগবান হয়ত ঐ কচি হাতেই সব ভার তুলে দেবেন। আমি কি আর এ যাত্র উঠব ?” চন্দ্রকাস্ত বলিলেন, “যা ঘটবার তা ত ঘটবেষ্ট । তাই বলে অমঙ্গলকে ডেকে আগে থেকে দুঃখ পাবার কি কিছু দরকার আছে ?” মৃধা দোলার ভিতর থোকাকে পাশ ফিরাইয়া শোয়াইয়া চাপড়াইয়া তাহার গায়ে একটা কঁথা চাপা দিয়া আস্তে আস্তে দোলাটা নাড়িতে লাগিল। থোকাকে লইয়া তাহার নাড়ীচাড়া পুতুল-খেলারই মত আনন্দদায়ক ছিল। সে ইহারই ভিতর যেন তন্ময় হইয়া গিয়াছিল। হাওয়াভরা বেলুনের মত প্রবাসী ۔ ۔ ۔ رتبہ ب۔ نچے খোকার মন্থণ চকচকে গাল দুটি কি পরিষ্কার । একটা মাছিও উড়িয়া বসিতে ভয় পায়। হাত-পায়ের তেলোগুলি গোলাপ ফুলের মত রঙীন, নরম যেন রেশমে তুলায় গড়, মুঠি ছুটির ভিতর আঙল চালাইয়া যতবারই খুলিয়া দিতে চেষ্টা করে, ততবারই আঙুলের উপরেই মুঠি বন্ধ হইয়া যায়। লোভী ছেলের দুধ খাইবার লোভ দেখিলে হাসি পায় সব চেয়ে বেশী ! মা কোথায় তার ঠিক নাই, চোখ বুজিয় আপন মনেই গোলাপী ঠোঁট দুটি নাড়িয়া দুধ টানিয়া যাইতেছে। আবার স্বপ্ন দেখিয়া ঠোঁট ফুলাইয়া কাদে । ওমা! এক মুহূৰ্ত্ত পরেই আবার হাসি ! মহামায়া ডাকিয়া বলিলেন, “মৃধা যা রে, এবার খেলগে য, সারাক্ষণ ওকে অঁাকড়ে পড়ে থাকতে হবে না । তোর খেলাধূলা পড়াশুনে সব জলে গেল, তুষ্ট শেষে কি ছেলের ধাই হবি ?” চন্দ্রকান্ত ও মহামায়ার ইচ্ছা ছিল ছেলেমেয়েকে এমন করিয়া মানুষ করেন যে তাহারা যেন বংশের মুখ উজ্জ্বল করিতে পারে। বিবাহিত জীবনে কায়মনঃপ্রাণ দিয়া স্বামী ও সন্তানের সেবাই ছিল মহামায়ার ব্রত। তাহার ভবিষ্যং আশ ও আনন্দের স্বপ্ন ছিল ছেলেমেয়ের গৌরব লঙ্গয় । ছেলেমেয়ের আর একটু বড় হইলে নিজেদের সামান্ত সম্বল দিয়া কলিকাতায় গিয়া কেমন করিয় তাহাদের সকল বিদ্যায় পারদর্শী করিয়৷ তুলিবেন ইহা ছিল তাহাদের স্বামীর অতি প্রিয় গল্পের বিষয় । কিন্তু ছোটথোকা হইবার কয়েক মাস পরেও যখন মহামায়ার শরীরের কোনও উন্নতি দেখা গেল না, বাদিক্‌টা কেমন যখন-তখন ঝিম্‌ঝিম্ করিয়া অবশ বোধ হইতে লাগিল, তখন তাহার মনও অচিরাগত একটা ভয় ও নৈরাস্তে ভাঙিয়া পড়িতে লাগিল । শরীরের অবসাদ কি মানি একটু বাড়িলেই সমস্ত মন দুশ্চিন্তায় ছাইয়। যাইত। অবোধ সন্তানদের ফেলিয়া হয়ত তাহাকে অকালে সংসার ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে হইবে, নয় চিরকুল্ল ভগ্ন পঙ্গু দেহ লইয়া তাহাদের অধত্ববৰ্দ্ধিত দেহমনের দুর্গতি প্রতিনিয়ত দেখিয়া বেদনা পাইতে হইবে । যাহাদের এখনও সকল দিক দিয়া চারা গাছের মত সংসারের ঝড়ঝাপটার আড়ালে বাড়িতে দিবার কথা, তাহারাই সমস্ত ঝঞ্চাট