পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা রামমোহন রায়ের জীবনচরিতের উপাদান 翰 শ্রীরমাপ্রসাদ চন্দ জনসজোর জীবনচরিতের নাম ইতিহাস, এবং ব্যক্তিবিশেষের ইতিহাসের নাম জীবনচরিত। ঘটনার সমসময়ে কাৰ্য্যাচুরোধে যে চিঠি-পত্র লিখিত হয় তাহাঙ্গ ইতিহাসের উৎকৃষ্ট উপাদান। কিন্তু সরুপ চিঠি-পত্রও অবিচারে সত্য বলিয়া গৃহীত হইতে পারে না। এইরুপ পত্রের বিবরণ অসম্পূর্ণ হইতে পারে। লেখকের রুচি অন্তসারে বা প্রয়োজন অনুসারে এইরূপ বিবরণে সত্য বিরুত হইয়া থাকিতে পারে । যেখানে একই ঘটনায় দুইটি পরস্পরবিরোধী পক্ষের যোগ থাকে, সেখানে উভয় পক্ষের চিঠি-পত্র তুলনা করিয়া দেখিতে ন পারিলে সত্য উদ্ধার সম্ভব নতে। সাবধানে প্রমাণ-পরীক্ষা (critical sisting of evidence) #footfist of: ভিত্তি । তার পরের শ্রেণীর উপাদান, ঘটনার সমসময়ে লিখিত বিবরণ। যেমন ডায়েরা বা রোজনামচ, বা বার্ষিক বিবরণ (report) ইত্যাদি যাহা কতক পরিমাণে পাঠকগণের সন্তুষ্টির জন্য লিখিত হয়। এইরূপ বিবরণে সত্য বিকৃত হইবার অধিকতর সম্ভাবনা । তৃতীয় শ্রেণীর উপাদান, ঘটনার অল্পাধিক কাল পরে প্রত্যক্ষকারীর স্মরণশক্তির উপর নির্ভর করিয়া লিখিত বিবরণ। ডায়েরীতে যে দোষ ঢুকিতে পারে এইরূপ বিবরণেও সেই দোষ থাকিতে পারে। তাহা ছাড়া মাল্লষের স্মরণশক্তি অনেক সময় তাঙ্গকে বঞ্চনা করিতে পারে। চতুর্থ শ্রেণীর উপাদান, গল্প-গুজব মূলক বিবরণ। খবরের কাগজের সংবাদ এই শ্রেণীভূক্ত। এইরূপ সংবাদে ভুল-চুকের অবকাশ অনেক বেশী । পঞ্চম শ্রেণীর উপাদান, পরবর্তী কালে সংগৃহীত বিবরণ। এই রূপ বিবরণ সমসময়ের লিখিত কাগজপত্রমূলক হইতে পারে, অথবা জনশ্রুতিমূলক হইতে পরে। পরবর্তী কালে সংগৃহীত যে বিবরণ সমসময়ের লিখন মূলক বলিয়া সাব্যস্ত হইতে পারে, তাহাই ইতিহাসের উপাদানরূপে বিচার যোগ্য। ۹ -سسسد : যে জনশ্রুতির এই প্রকার মূল নিৰ্দ্ধারণ করা যায় না, তাহ প্রকৃত ঘটনার ( fact এর ) বিবরণের আকর হইতে পারে না। লোকে কথায় বলে, “নহমূল জনশ্রুতি:" “জনশ্রুতি অমূলক হইতে পারে না।” কিন্তু যেখানে সেই মূল অজ্ঞাত, সেখানে তাঙ্গ কল্পনা করিয়ালওয়ার কাহারও অধিকার নাই । অজ্ঞাতমূল জনশ্রুতি হইতে সত্য উদ্ধার করা অসম্ভব। সুতরাং তাহ ইতিহাসের বা জীবনচরিতের উপাদানের মধ্যে গণা হইতে পারে না । রাজা রামমোহন রায় সম্ভবতঃ ১৭৭২ সালের ২২শে মে হুগলী ( সেকালে বৰ্দ্ধমান ) জেলার অন্তর্গত রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, এবং ১৮৩৩ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ব্রিষ্টল নগরে দেহত্যাগ করিয়াছিলেন । রাজার এই ৬১ বৎররকাল ব্যাপী জীবন চারিভাগে বা যুগে বিভাগ করা যাইতে পারে। প্রথম যুগ, জন্ম হটতে ১৭৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে, রামমোহনের সাড়ে চব্বিশ বৎসর বয়সে, তাহার পিতা রামকান্ত রায় কর্তৃক নিজের সম্পত্তি বাটোয়ারা করিয়া তিন পুত্রকে দান পৰ্য্যস্ত। দ্বিতীয় যুগ, ১৭৯৭ সালে স্বাধীন ভাবে বিষয়কৰ্ম্ম আরম্ভ হইতে ১৮১৪ সালে চাকরী হইতে অবসর লইয়া স্থায়ীভাবে কলিকাতা আসিয়া বাস করা পর্যান্ত । তৃতীয় যুগ, ১৮১৪ সালে কলিকাতা আসিয়া ধৰ্ম্মপ্রচার আরম্ভ হইতে ১৮৩০ সালে ইংলণ্ড যাত্রা পৰ্য্যন্ত। চতুৰ্থ বা শেষ যুগ, ১৮৩১ সাল হইতে ১৮৩৩ সাল পর্য্যন্ত ইউরোপ প্রবাস। বর্তমান প্রস্তাবে রাজা রামমোহন রায়ের জীবনের বিভিন্ন যুগের বৃত্তাস্তের আকর উপাদান সকল সংক্ষেপে আলোচিত হইবে । প্রথম যুগ ( ১৭২২-১৭৯৬ ) রাজা রামমোহন রায়ের জীবনের প্রথম যুগ সম্বন্ধে সমসময়ের কোনও চিঠিপত্র এবং সমসময়ের লোকের দ্বার।