পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন বিক্রয় করিয়াছিলেন, এবং ঐ তারিখে বাংলা ভাষায় একখানি কবুলিয়ত সম্পাদন করিয়া দিয়া এই দুইখানি তালুক ছয় বৎসরের মিয়াদে ইজারা লইয়াছিলেন। দুর্গাদেবীর আর্জিতে রামমোহন রায়ের সম্পাদিত এই দুইখানি বাংল দলীলের এবং আরও একখানি বাংলা দলীলের ইংরেজী অল্পবাদ দেওয়া হইয়াছে। গোবিন্দপ্রসাদ রায় স্বয়ং তাহার মাতার নামে আনীত এই মোকদ্দমার তদ্বিরকারক ছিলেন । তাহার প্রমাণ, দুর্গাদেবীর স্বাক্ষরিত এটণী নিয়োগ পত্রে গোবিন্দপ্রসাদ রায় সাক্ষী স্বরূপ নাম সহি করিয়াছেন। অবশু দুর্গাদেবীর এই মোকদম তিনি চালাইতে পারেন নাই, এবং পরিচালনের অভাবে মোকদম ডিসমিস হইয়াছিল । গোবিন্দপুর এবং রামেশ্বরপুর খরিদ সম্বন্ধে পুত্রের এবং মাতার আর্জিতে এইরূপ: পরস্পর বিরোধী কথা থাকায় সিদ্ধান্ত হয়, হহার কোন কথাই সত্য নহে, রামমোহন রায়ের কথাই সত্য । নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় “মহাত্ম রাজ রামমোহন রায়ের জীবন চরিতে”র অষ্টম অধ্যায়ে (চতুর্থ সংস্করণ, ৩০১–৩০২ পু: ) রামমোহন রায়ের বরাবরে ১২২৬ সনের ১৪ই কাৰ্ত্তিক ( ১৮১৯ সনের অকৃটোবরে ) লিখিত গোবিন্দপ্রসাদ রায়ের একখানি চিঠি ছাপাইয়াছেন । এই চিঠিতে গোবিন্দপ্রসাদ স্বীকার করিতেছেন যে তিনি “শুপরেম কোটে একুহটিতে অজথা নালিশ” করিয়াছিলেন । চিঠিখানি আমার নিকট সন্দেহজনক মনে হয়। এই চিঠি অনুসারে কোন কাজই হইয়াছিল না ; গোবিন্দপ্রসাদ তাহার মোকদমা তুলিয়৷ লইয়াছিলেন না ; মোকদম ডিসমিস হইয়াছিল ; এই চিঠি লেখার দেড় বৎসর পরে গোবিন্দপ্রসাদের মাতা রামমোহন রায়ের বিরুদ্ধে আবার মোকদ্দমাও করিয়াছিলেন । তার পর প্রশ্ন হইতে পারে, জীবনচরিতকার কি রামমোহন রায়ের সকল কথাই বিশ্বাস করিতে পারেন ? জীবনচরিতকার বিনা বিচারে কাহারও কোন কথাই বিশ্বাস করেতে পারেন না । কিন্তু যেখানে কোন ব্যক্তির কোন কথার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পাওয়া না যায়, অথবা সেই কথা যে মিথ্য এরূপ সন্দেহেরও কোন কারণ না থাকে, অথচ সেই কথার সমর্থনে স্বতন্ত্র কোন প্রমাণও না থাকে, তবে সেই কথা অবিশ্বাস করা কর্তব্য নহে। রামমোহন রায়ের রাজা রামমোহন রায়ের জীবনচরিতের উপাদান جج 6 سموb অনেক কথার সত্যতার সমর্থনে আমরা যখন স্বতন্ত্র নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাইতেছি, তখন র্তাহার কোন কোন উক্তির সমর্থনে এইরূপ প্রমাণ না থাকিলেও সেই উক্তি অগ্রাহ করা অসঙ্গত হইবে। পাশ্চাত্য জগতে কোনও লেখক কাহারও জীবনচরিত লিথিতে বসিলে ঐ ব্যক্তির নিজের চিঠির এবং তাহার ডায়েরীর উপর অধিকতর আস্থা স্থাপন করিয়া থাকেন। র্যাহারা মনুষ্যচরিত্র অভিজ্ঞ তাহারা জানেন মানব সমাজে দুই প্রকার লোকই দেখা যায় । এক প্রকার লোক সত্য-মিথ্যার প্রভেদ লক্ষ্য করে না, অথবা সহজে মিথ্যা কথা বলে । আর এক প্রকার লোক স্বভাবতঃ সত্যবাদী । তাহীদের মধ্যে কেহ কেহ খুব দায়ে না পড়িলে মিথ্যা কথা বলে না ; আবার কেহ কেহ দায়ে পড়িলেও মিথ্যা কথা বলে না, বরং ক্ষতি স্বীকার করে । গোবিন্দপ্রসাদ রায়ের আর্জির উত্তরে দেখা যায়, রামমোহন রায় দায়ে পড়িয়াও সত্য ক্ষুণ্ণ করেন নাই । গোবিন্দপ্রসাদ আজ্জিতে বলিয়াছিলেন, রামকান্ত রায়ের সম্পত্তির বাটোয়ারার পর, রামলোচন রায় পৃথক হইয়া রাধানগর চলিয়া গেলে, রামকান্ত, জগমোহন এবং রামমোহন একান্নবৰ্ত্তী এবং সকল বিষয়ে একত্রিত

  • śīfāsān (became again and were joint and undivided in food property and in all respects)

হিন্দু পরিবারে একান্নবর্তিত অন্যান্য বিষয়ে ও ঐক্য সূচিত করে, এবং যে ব্যক্তি নিজেকে একান্নবর্তী স্বীকার করিয়া সম্পত্তির পার্থক্যের দাবী করে, সেই পার্থক্যের প্রমাণের ভার তাহার নিজের উপর পড়ে। লাঙ্গুড়পাড়ার বাড়ীতে মাতা তারিণীদেবীর অধীনে জগমোহন এবং রামমোহন উভয়ের পরিবার একান্নবর্তী ছিল জবাবে এই কথা স্বীকার করিয়া, রামমোহন রায়, তাহার সম্পত্তি যে সম্পূর্ণ পৃথক ছিল এই কথা প্রমাণ করিবার গুরুভার নিজের স্কন্ধে লইয়াছিলেন । জীবন চরিত সঙ্কলন কালে এইরূপ সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তির উক্তি বিশেষ আদরণীয়। তৃতীয় যুগ ( ১৮১৪–১৮৩০ ) ১৮১৪ সালে ৪২ বৎসর বয়সে চাকরী ত্যাগ করিয়া কলিকাতায় আসিয়া রামমোহন রায় ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রচার করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, এবং ক্রমশ: দেশহিতকর সকল প্রকার