পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tజసిడి প্রবাসী SN93Nరి পরে সে ফিরে এল। একটা এলুমিনিয়মের পাত্রে একটু জলসাগু আর কয়েকটা বিস্কুট নিয়ে এসে সত্যবানকে বললে, “প্রায় সমস্ত দিন তো আপনি না খেয়ে শুকিয়ে আছেন ; এইটুকু কোনরকম করে খেয়ে নিন ত। আজ আবার ক্ষেকের উপর থেকে কিসে যেন ফেলে দিয়েছে—কি যে 密 ত দি তা বুঝতে পারি নে " তার পর নিখিলের চেয়ে বললে, “ফল কিছু খেতে চান না, দেখুন ত এখন মি কি করি ?” বলতে বলতে তার চোখ ছলছল ক’রে উঠল। যে-প্রাণটাকে বাচাবার জন্যে সে তার সৰ্ব্বস্ব ছেড়ে এই নির্জন পরিত্যক্ত ভগ্ন মন্দিরটিতে আশ্রয় নিয়েছে, তার মৃত্যুযন্ত্রণাক্লিষ্ট দেহকে সে যে কিছুমাত্র শাস্তি দিতে পারছে না, এর চেয়ে মৰ্ম্মান্তিক দুঃথ অধুনা তার কাছে কিছুই ছিল না। সীমার কথা শুনে সত্যবান হেসে বললে, “পাগলী, থাবার কি ক্ষমতা আর আছে রে ? খিদে পেলে ত খাব ? তা’ ছাড়া তোর হাতের সাগুর সরবৎট। বড় সরেশ হয়। দেখ, না বরং একটু নিখিলকে খাইয়ে, ও কি বলে!” সীমা হেসে ফেলে বললে, “জলসাগু আবার সরবং কি ? থাক, ওঁকে আর সাগু খাইয়ে কাজ নেই। অম্নিতেই ওঁকে যা জব্দটা করা হয়েছে ! এখন ঘরের ছেলে ভালয় ভালয় ঘরে ফিরতে পারলে হয় ।” খাওয়ার চেষ্টায় সত্যবানের পরিশ্রম যা হ’ল খাওয়৷ তার কিছুই হ’ল না। নিখিল সীমাকে ইঙ্গিতে খাওয়াবার চেষ্টা থেকে বিরত হতে বললে, এবং পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখটা মুছিয়ে দিলে। সীমা ধীরে ধীরে বাতাস করতে করতে সত্যবান একটু ঘুমিয়েই পড়ল বোধ হয়। নিখিল তার পকেট-কেসের সরঞ্জাম গুছিয়ে নিলে। সত্যবানকে নিদ্রিত দেখে সীমা এক সময় আস্তে উঠে নিখিলকে বাইরে ডেকে নিয়ে গেল। বাইরে এলে সে নিখিলকে জিজ্ঞাসা করলে, “কেমন দেখলেন ?” নিখিল একটু চুপ করে রইল। এই নিঃসহায় মেয়েটির কাছে নিষ্ঠুর সত্যকে কি ভাবে সহনীয় ক’রে বলা যায় মনে মনে তারই মোহড়া দিতে দিতে বললে, “ভাল যে নয়, তা’ ত দেখতেই পাচ্ছেন। তবে এসব কেস্ত জোর করে বলা যায় না । আমাদের সর্বদাই মন্দটার জন্তে প্রস্তুত থাকৃতে হবে। এখনি একটা ইনজেকশন দিয়েছি, তাতে সাময়িক কিছু উপকার হতে পারে।” সীমা বললে, “প্রস্তুত ত আছিই। যন্ত্রণার যদি কিছু উপশম করা যায়—তাই বলছি। মুখে একটুও শব্দ করেন না বটে, কিন্তু যন্ত্রণায় এক এক সময় নীল হয়ে যান । সমস্ত শরীর কাপতে থাকে। মৃত্যু কি ওঁদের অকাম্য ?" এত বলে অন্ধকার বনের দিকে চেয়ে সে যেন কোন দূর দিনের দৃশ্বকে প্রত্যক্ষ করতে লাগল। খানিক পরে নিজের এই আত্মবিস্মৃতিতে লজ্জিত হ’য়ে নিজেকে সন্থত ক’রে নিলে। এবং একটু অতিরিক্ত সহজকণ্ঠেই বললে, “চলুন নিখিলবাবু, আজ আপনার কপালে অনেক দুর্ভোগ আছে। তার মধ্যে সব চেয়ে কঠিন দুৰ্দ্দৈব যেটা সেট সেরে নিন। রাত বারোটার আগে আজ আর আপনার নিজের আস্তানায় ফেরা হবে না। সত্যদা একটু একলা থাকুন, আমরা বেশী দেরী করব না।” এই ব’লে নিখিলনাথকে নিয়ে সে একটা ছোট কুঠরিতে গেল । নিখিলনাথ ঘরটির আয়োজন দেখে অবাক হ’ল । ঘরটির এক পাশে কয়েকখানি ইটের সাহায্যে একটা উল্লন মত করা হয়েছে । গুটি তিন-চার মাটির পাত্র এ-ঘরের আসবাব। একদিকে একটি আধ-ময়লা কাপড় চার ভাজ ক’রে একটি আসন পাতা ; আর তারই সামনে একটি সদ্যছিন্ন ধোয়া কলার পাতা, পাশে একটি মাটির ভীড়ে এক ভাড় জল ৷ নিখিলনাথ অবাক হয়ে মেয়েটির এই কৃচ্ছসাধনের ছবি মনে মনে আলোচনা করতে লাগল। কিসের প্রেরণায় সে আজ তার গৃহের শাস্তি আরাম মুথৈশ্বৰ্য্য পরিত্যাগ করে আনন্দে এই বিপদ এই দুঃখ এই নিদারুণ আত্মনিগ্রহকে বরণ করেছে। এইমাত্র সে শুনেছে যে তাদের দলে সে বেশী দিন ভৰ্ত্তি হয় নি । ওর দাদ প্রফুল্পর উপর ওর অসাধারণ ভালবাসা ও ভক্তির জোরে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ ক'রে মাস কয়েক আগে এদের দলের একেবারে মাঝথানে এসে পড়েছিল । অনন্যসাধারণ বুদ্ধি ও সাহসের জোরে দলের সকলেরই শ্রদ্ধা এবং স্নেহ সে পেয়েছে । আজ তারা কোথাও নেই। ভেলোয়ারের জঙ্গলে তাদের হারিয়ে আহত সত্যবানকে নিয়ে কেমন ক’রে যে সে গ্রামে জঙ্গলে উন্মুক্ত প্রাস্তরে পরিত্যক্ত কুটারে দিনের