পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t=Sలషి প্রবাসী ఫిల8Nరీ পারলুম যে ওখানকার পাট ওঠাতে হবে। সীমা কোথার থেকে একটা আধপাগল কুণ্ঠরোগীকে ধীরে এনেছিল। তাকেই দিন দশেকের মত খাবারদাবার ব্যবস্থা করে, হাতে পাচটা টাকা গুজে দিয়ে আমাদের প্রকৃসি’ দেবার জন্যে রেখে দিয়ে এলুম। “সাহায্য করবার লোক ছিল। রাত্রে সাড়ে তিন মাইল হেঁটে ষ্টেশনে এসে গাড়ী ধরতে হ'ল। তখন যেমন জ্বর তেমনি যন্ত্রণা। কোন রকম করে শুধু কপাল-জোরেই পালিয়ে এসেছি । কিন্তু আর বেশী দিন এ ভোগ যে ভুগতে হবে না, তা তোর ত অস্তত বুঝতে বাকী নেই। আমার শুধু ভাবনা ঐ মেয়েটার জন্যে। ওর বিশ্বাস যে ওর সত্যদা একটা দিকৃপাল। সে সেরে উঠলেই মুধু তার হুমকির জোরেই ইংরেজ-বাহাদুরকে দেশ ছাড়া করবে। ভারতবর্ষে দেশ বলতে যে কোথাও কিছু নেই তা ওর ধারণাতেই আসে -” নিখিল বাধা দিয়ে বললে,“তোমার কথাটা হেঁয়ালির মত শোনাচ্ছে, দাদা । আমারও ত ধারণায় আসছে না ভারতবর্ষে দেশ নেই মানে কি ?" “বেশী তর্ক করবার ক্ষমতা আমার নেই রে, শোন । শুধু এইটুকুই তোকে জিজ্ঞেস করি, যে, দেশ কি এই ভারতবর্ষের মাটি, যে বরাবরই ছিল আর বরাবরই আছে ? দেশটা মাতুষের দেশাত্মবোধের মধ্যে ; তাছাড়া দেশ বলতে আর যে কি বোঝাতে পারে আমি ত জানিনে। ভেবে দেখ ত, হাজার বছর ধরে প্রবঞ্চিত, আত্মজ্ঞানের অধিকারে বঞ্চিত এই লক্ষ-কোটি মুখ মূক শূদ্র ভারতবাসীর প্রাণে, আৰ্য্য, হিন্দু , শক, হুন, মোগল, পাঠান, ইংরেজ, কেউ কোনদিন দেশের বোধ জাগতে দিয়েছে ? তারা জানে শুধু রাজা আর প্রজা। সিংহাসনে তোর হিন্দু বক্ষক কি পাঠান বস্থক কি খ্ৰীষ্টান বস্থক, ‘তারা যে তিমিরে তারা সে তিমিরে। অথচ এরাই যুগে যুগে আমাদের থাওয়া জোগাবে, বিলাস জোগাবে এবং দরকার হ’লে প্রভুকে সিংহাসনে বহাল রাখবার জন্তে দল বেঁধে তার শত্রুর সঙ্গে লড়াই ক’রে মরবে। সেইটেই হবে তাদের দেশভক্তির পরাকাষ্ঠ । তার পর আবার কাজ ফুরোলেই যে তিমিরে সেই তিমিরে ” বলে সে নিতান্ত শ্রান্ত হয়েই বোধকরি চোখ বুজে পড়ে রইল ; এবং এই অতিরিক্ত কথা বলানোর জন্তে নিখিলনাথের মনে মনে অমৃতাপ হতে লাগল। খানিক পরে চোখ খুলে ধীরে ধীরে বললে, “তুই বুদ্ধিমান, নিখিল, কথাটা ভেবে দেখি । কিন্তু সীম ! তোকেই যে ওকে বোঝাবার ভার নিতে হবে । ওর ঐ পাগলের মত ভালবাসা এই দেশটার জন্যে—সে কি আশ্চৰ্য্য ! ওর কাছে এইটুকু শিখেছি, যে মাহুষ আর কিছু পারুক আর নাই পারুক, শুধু প্রাণ দিয়ে ভালবাসতে পারলে তার অনেক সমস্যা আপনিই সমাধান হয়ে যায়। নইলে ঐটুকু মেয়ে, ওর কিসের এত তেজ বল তো ! ওর লোক নেই, সমাজ নেই, ব্যক্তিগত মুখ শান্তি নেই, আছে শুধু ওর সীমান্তীন দুৰ্জ্জয় দেশভক্তি, আর তার জন্যে অকুষ্টিত অক্লাস্ত সেবা । “কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস। তুই এর মধ্যে আর জড়াস নে । যে আগুনট ছড়ানো গেছে, জানি না তা নেবাতে ওদের আর কতদিন লাগবে । কিন্তু ওকে বঁাচাবার ভার তোরই উপরে রইল । অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে পারি মা বলেই আজ আমার শেষমূহুর্বে তোকে অনেক কাল পরে স্মরণ করেছি। এর জন্যে তোকে হয়ত অনেক দুঃখ অনেক লাঞ্ছনা পেতে হবে । কিন্তু আমার শেষ সময়ে অস্ত কোন উপায় আমি ভেবে উঠতে পারছি নে । তুই আমায় কথা দে, তাহলে এত যন্ত্রণার মধ্যেও আমি একটু নিশ্চিন্ত হয়ে যেতে পারি।” নিখিল বললে, “দাদা, যার জন্যে এত ভাবনা, আমার ত বোধ হয় না সে তুমি ছাড়া আর কোন ভাবনাকেই মনে স্থান দেয়। তা ছাড়া তাকে আমি যত টুকু দেখেছি তাতে—” সত্যবান হেসেই উঠল। বললে, “পাগল, তুই ওকে কিছুক্ত বুঝি নি। ওর ভালবাসা কি কোন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে ? ব্যক্তিটা নিতান্তই উপলক্ষ্য। দেশই ওর সব । দেশের জন্ত এক মুহূৰ্ত্তে আমাকেও বিসর্জন দিতে ও একটুও কুষ্ঠিত হবে না। ওর সত্য ওর কাছে এত বড় এত প্রত্যক্ষ ব’লেই ওর জন্যে আমার এত চিন্তা । কোন ফাকিতে ওকে ভোলানো যাবে না । “আজ মৃত্যুর দরজায় দাড়িয়ে এইটুকু বেশ বুঝতে পারছি,