পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उपांश्विन्र গুপ্ত স্থানে লইয়া গিয়া রক্ষা করিবে। পরে তুরুদ্ধের উৎপাত দূর হইলে তাহারা আবার উহা ফিরাইয়া আনিবে। যদি তুরুষ্কের আক্রমণে বিহার ধ্বংস হয়, বিহারবাসী সকলে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, এই আশঙ্কায় মহাথের মহাশয়ের আজ্ঞাক্ৰমে পরবর্তীদিগের অবগতির জন্য অস্ত কৃষ্ণত্রয়োদশীর দিবসে এই লিপি উৎকীর্ণ হইল । ভগবান বুদ্ধের ইচ্ছা পূর্ণ হউক।” এইখানে লিপি শেষ হইয়াছে। লিপি পড়িতে পড়িতে আমার মনটাও অতীতের আবর্তে গিয়া পডিয়াছিল ; আট শত বৎসর পূৰ্ব্বে জেতবন-বিহারের নিরীহ ভিক্ষুদের বিপদ-ছায়াচ্ছন্ন ত্রস্ত চঞ্চলত যেন অস্পষ্ট ভাবে চোখের সম্মুখে দেখিতে পাইতেছিলাম ; বিচক্ষণ প্রবীণ মহাস্থবির বুদ্ধরক্ষিতের গম্ভীর বিষন্ন মুখচ্ছবিও চোখের উপর ভাসিয়া উঠিতেছিল। ভারতের ভাগ্যবিপৰ্য্যয়ের একটা ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ যেন ঐ লিপির সাহায্যে আমি কয়েক মুহূৰ্ত্তের জন্য চলচ্ছায়ার মত প্রত্যক্ষ করিয়া লইলাম। দেশব্যাপী সন্ত্রাস । শাস্তিপ্রিয় নিবাঁধা জাতির উপর সহসা দুরন্ত দুৰ্ম্মদ বিদেশীর অভিযান ! "তুরুষ্ক ! তুরুষ্ক ! ঐ তুরুষ্ক আসিতেছে ? ভীত কণ্ঠের সহস্র সমবেত আৰ্ত্তনাদ আমার কণ্ঠে বাজিতে লাগিল । তার পর চমক ভাঙিয়া গেল। দেখিলাম ভিক্ষু অভিরামের চোখে ক্ষুধিত উল্লাস ! গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলাম, 'মহাস্থবির বুদ্ধরক্ষিতের উদ্দেশু সিদ্ধ হয়েছে--কিন্তু কত বিলম্বে ? তিনি প্রদীপ্তশ্বরে বলিয়া উঠিলেন, ‘হোক বিলম্ব । তবু এখনও সময় অতীত হয় নি। আমি যাব বিভূতি বাৰু। সেই অন্তরনিৰ্ম্মিত পাষাণ-স্তম্ভ খুজে বার করব । কিছু সদ্ধানও পেয়েছি—উপলা নদীর বর্তমান নাম জানতে পেরেছি।-বিভূতি বাৰু, দেড় হাজার বছর আগে চৈনিক পরিব্রাজক কোরিয়া থেকে যাত্র স্বরু ক’রে গোবি মরুভূমি পার হয়ে দুস্তর হিমালয় লঙ্ঘন ক’রে পদব্রজে ভারতভূমিতে আসতেন। কি জন্তে ? কেবল বুদ্ধ তথ্যগতের জন্মভূমি দেখবার জন্তে । আর, আমাদের বিশ যোজনের মধ্যে ভগবান বুদ্ধের স্বরূপ-মূৰ্ত্তি রয়েছে, জানতে পেরেও আমরা তা খুজে বার করতে পাবব না ? চন্দন-মুক্তি

আমি বলিলাম, ‘নিশ্চয় পারবেন।' ভিক্ষু তাহার বিদ্যুদ্ধহিপূর্ণ চক্ষু আমার মুখের উপর স্থাপন করিয়া এক প্রচণ্ড প্রশ্ন করিয়া বসিলেন, “বিভূতি বাবু, আপনি আমার সঙ্গে যাবেন না ? ক্ষণকালের জন্ত হতবাক হইয়া গেলাম। আমি যাইব । কাজকৰ্ম্ম ফেলিয়৷ পাহাড়ে-জঙ্গলে এই মায়ামৃগের অন্বেষণে আমি কোথায় যাইব । ভিক্ষু স্পন্দিতস্বরে বলিলেন, ‘আট-শ বছরের মধ্যে সে দিব্যমূৰ্ত্তি কেউ দেখে নি। ভগবান শাক্যসিংহ আট শতাব্দী ধরে সেই স্তম্ভশীর্ষে আমাদেরই প্রতীক্ষা করছেন। —আপনি যাবেন না ? ভিক্ষুর কথার মধ্যে কি ছিল জানি না, কিন্তু মজ্জাগত বহিবিমুখতা ও বাঙালীসুলভ ঘরের টান যেন সঙ্গীতযন্ত্রের উচ্চ সপ্তকের তারের মত স্বরের অসহ স্পন্দনে ছিড়িয়া গেল। আমি উঠিয়া ভিক্ষুর দুই হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিলাম, ‘আমি যাব।' \ు এই আখ্যায়িক যদি আমাদের হিমাচল-অভিধানের রোমাঞ্চকর কাহিনী হইত তাহ হইলে বোধ করি নানা বিচিত্র ঘটনার বর্ণনা করিয়া পাঠককে চমৎকৃত করিয়া দিতে পারিতাম। কিন্তু এ-গল্পের ক্ষুদ্র পরিসরে তাহার স্থান নাই। দৈত্য-নিৰ্ম্মিত স্তম্ভ অন্বেষণের পরিসমাপ্তিটুকু বর্ণনা করিয়াই আমাকে নিবৃত্ত হইতে হইবে । কলিকাতা হইতে যাত্রা স্বরু করিবার দুই সপ্তাহ পরে একদিন অপরাহ্লে যে ক্ষুদ্র জনপদটিতে পৌছিলাম তাহা মনুষ্য-লোকালয় হইতে এত উৰ্দ্ধে ও বিচ্ছিন্ন ভাবে অবস্থিত ষে হিমালয়-কুক্ষিস্থিত ঈগল পার্থীর বাসা বলিয়া ভ্রম হয় । তখনও বরফের এলাকায় আসিয়া পৌছাই নাই ; কিন্তু সম্মুখেই হিমাদ্রির তুষারগুত্ৰ দেহ আকাশের একটা দিক আড়াল করিয়া রাথিয়াছে। আশেপাশে পিছনে চারি দিকেই নগ্ন পাহাড়, পায়ের তলায় পাহাড়ী কাকর ও উপলখও । এই উপলাকীর্ণ কঠিন ভূমি চিরিয়া তস্বী উপলা নদী ক্ষুরধারে নির্মাভিমুখে ছুটিয়া চলিয়াছে। আকাশে বাতাসে একটা জমাট শীতলত ।