পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবা ও রাত্রি শ্ৰীআৰ্য্যকুমার সেন প্রকাও বাড়ী। পূজার দিনে গোটা বাড়ীটাই লোকে ভত্তি। লাল রঙের মোটা মোটা থাম, লাল সিমেন্টের স্বপ্তে বারান্দা—তাহার উপর প্রকাও দুইখান খাটে সতরঞ্চির উপর ফরাস পাতা এবং তাহার উপরে সারাক্ষণ নানা বয়সের এবং নানা বেশের লোকের অবিশ্রান্ত জটলা। বাড়ীতে অনেকগুলি বড় বড় ঘর, উৎসবের দিনে সব কয়থানি অধিকৃত। বাড়ীর সকল লোক একত্র হইলে এত বড় বাড়ীতেও কুলায় না ; কাছে প্রায় এত বড়ই একটা জনশূন্য বাড়ীর একখানি ঘরে এ-বাড়ীর স্থায়ী বাসিন্দার পূজার উংসবের কয়টি দিন কোনরূপে কাটাইয়া দেয়। অবশ্ব অন্য সময় এক-এক জনে দুইখানি করিয়া ঘর নিজের অধিকারে রাখিলেও আকুলান হয় না। স্থায়ী বাসিন্দা এ-বাড়ীর অল্পই। অস্থায়ী যাহারা তাহার সারা বছর বাংলা বিহার প্রভৃতি স্থানের এদিক-ওদিক থাকেন ; সহসা কোন উৎসবে আসিয়া পড়িলে বাড়ী সরগরম হইয় উঠে, একটি বাড়ীর লোক সমস্ত গ্রামের লোক-সংখ্যাকে ছাড়াইয় উঠে। গ্রামখানি নিতান্তই ছোট। বাড়ীর ভিতরে ও বাহিরে মস্ত বড় দুই উঠান। মাঠ বলিলেও চলে। বাহিরের উঠানে, সদর দরজা দিয়া ভিতরে পা দিলেই ডান দিকে ছোট দুইটি ঘর চোখে পড়ে। পাশাপাশি এক মাটির ভিত্তির উপর কাঠের তক্ত দিয়া তৈরি, জীর্ণ চেহারা দেখিলে মনেও হয় না যে আর বেশী দিন এই উঠান অলঙ্কত করিয়া ইহারা টিকিয়া রহিবে। তিন বছর আগে বাড়ীর চেহারা ছিল অন্য রকম। চারিদিক দিয়া বাড়ী ভাঙিয়াপড়িতেছে, দেওয়ালে চুণবালির আবরণ খুলিয়া কোথাও ইট সম্পূর্ণ বাহির হইয়া পড়িয়াছে, কোথাও বা জৱাবৃত থাকিয়া আরও কুৎসিত হয় উঠছে। সংস্কার না হইলে হয়ত আর কিছুদিন পরে চিহ্নও দেখা যাইত না। কিন্তু এ তিন বছর আগের আরও পনর বছর আগে এ-বাড়ী আরও অন্য রকম ছিল। বাড়ীর বাহিরের রূপ মোটামুটি ১৩৩৯ সালেরই মত, কিন্তু মজবুত । এখন যেখানে বাদিকে মূল ও পালংশাকের একটি অনাবশ্বক অতি-ক্ষুদ্র খেত, এবং প্রয়োজন হইলে যেখানে খাট ফেলিয়া সখের থিয়েটারের ষ্টেজ তৈরি হয়, সেখানে ছিল প্রকাও আটচালী-ঘর। ঘর জুড়িয়া সতরঞ্চির উপর ফরাস, তাহার মধ্যে মধ্যে বড় বড় তাকিয়া মহাসাগরের বুকে দ্বীপের মত ছড়ানো। বাড়ীর র্যত রাশভারী প্রৌঢ় ও বৃদ্ধের দল এখানে আড়া বসাইতেন। সে আটচালা ঘর আজ নিশ্চিহ্ন, যেমন নিশ্চিহ্ন সে-সময়ের অধিকাংশ প্রৌঢ় ও বৃদ্ধের দল। তাহারও আগে হয়ত আরও অন্য রকম ছিল। বহুকাল আগে এক নগ্নগাত্র, বিরলকেশ বৃদ্ধ খড়ম পায়ে দিয়া সারা বাড়ী ঘুরিয়া বেড়াইতেন এবং অবসর সময় বেগুনের ক্ষেতের তদারক করিতেন। লোকে বলিত, “বেগুন-বেচা বুড়ো।” অবশু তিনি এখন অন্য জগতে। শুধু বাহিরের উঠানে যে জীর্ণ দুইখানি কাঠের ঘর মাটির ভিত্তির উপর অস্তিত্ব বজায় রাখিয়া চলিয়াছে, তাহার হয়ত তখনও এই রকমই ছিল। নায়েব-মশায়ের ঘর। আলকাংরা দিয়া লেপা দরজার চৌকাঠে খুদিয়া লেখা “মায়েব—শ্ৰীনিবারণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।” সে নায়েবের কথা বাড়ীর অল্পবয়সীদের কাহারও মনে নাই। "" নীচে আর এক জনের নাম।–“নান্তক মুখোপাধ্যায় "বাড়ীর নেহাৎ বাল ছাড়া এ নায়েব-মশাচ- বজাই বুখার অধিকার লুক্কুৰুলি 한 এলেট রহিল।