পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8Հ মতে “রস’ই “সকল-প্রয়োজন-মৌলীভুত”—বাক্যং রসাত্মকং কাব্যং”, অতুএব কাব্যরচন। ব্যপদেশে কবি রসেরই স্বষ্টি করেন। ইহার উত্তরে প্রথমেই বলিতে হয়, কবি কাব্যস্থষ্টিই করেন, রসস্থষ্টি কাব্যের মুখ্য প্রয়োজন নয় ? বস্তুতঃ এই কথাটিই প্রকৃত কাব্য-পরিচয়ের প্রধান ভিত্তি—ইহাই যদি অস্বীকার করা হয়, তবে কাব্যস্থষ্টি বলিতে যাহা বুঝি তাহার আলোচনার উপায় বা প্রয়োজন আর থাকে না। রস একটি নির্বিশেষ পদার্থ, কিন্তু কাব্য-প্রেরণা এতই বিশিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট যে, তাহ প্রত্যেক কাব্যে একটি নিজস্ব ও বিলক্ষণ রূপ লইয়া স্থপরিস্ফুট হইয় উঠে। কাব্যস্থষ্টিতে কবির সমগ্ৰ সাধনা ও চেষ্টা মুখ্যতঃ রসকে লইয়া ব্যাপৃত নয়, একটি অতি অপূৰ্ব্ব ব্যক্তিগত উপলব্ধিকে কেমন করিয়া যথাযথ আকারে মূৰ্ত্তিমস্ত করিয়া তুলিবেন, ইহাই কবির একমাত্র ভাবনা— ইহাতেই তাহার আনন্দ । যদি সেই সাধনায় কবি সাফল্য লাভ করেন, সেই সাফল্যের নামই হুষ্টি । যিনি কাব্যরসিক তিনি কবিকল্পনার এই বিশেষত্বেই মুগ্ধ। যিনি দার্শনিক তিনি সকল বৈচিত্র্যকে একাকার করিয়া হাফ ছাড়িতে চান, তাই তাহার কাব্যজিজ্ঞাসা রসত্তত্ত্বে পৌঁছিয়া তবে নিবৃত্ত হয়। স্তষ্টি অর্থেই বহু, কবির আনন্দ সেই বহুকে উপলব্ধি করিয়া,—দার্শনিকের আনন্দ সেই বিশেষকে নিৰ্ব্বিশেষে পরিণত করিয়া । কবির কাব্যরচনায় পাই— কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালে তারে বলে গায়ের লোক । মেঘল দিনে দেখেছিলাম মাঠে কালে মেয়ের কালে হরিণ-চোখ । ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মৈাটে, মূক্তবেণু পিঠের পরে লোটে। ۔-- কালে ? তা সে ধন্ডই কালে হোক - দেখেছি তার কালে হরিণু-চোখ । —ইত্যাদি। গায়ের লোক যাকে কালে বলিঙ্ক ছাড়িয়া দিয়াছে, কবির চক্ষে সে একটি বিশিষ্ট্ররূপ লইয়। ফুটয় উঠিয়াছে—সে-রূপ এত বিশিষ্ট যে কবি নিজে তাহার একটি নামকরণ করিয়াছেন। কবির মুগ্ধ হওয়ার প্রধান কারণ মেয়েটির ‘কালে হরিণ-চোখ’ বটে । কিন্তু তাহার সেই ভাবটি ঠিক স্পষ্ট করিয়া তুলিবার জন্য প্রবাসী—আশ্বিন, y৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড স্থান, কাল, এমন কি চাহনির ভঙ্গিটুকু পর্যন্ত ধরিয়া দিতে হইল । কারণ, “কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোথ” ত’ কত রূপে মুগ্ধ করিতে পারে, তাহার আকার ও ভঙ্গিম। কত মুহূৰ্ত্তে, কত অবস্থায়, কত রূপ হইতে পারে,—ঠিক ওই স্থান, ওই কাল, ওই চাহনিটি ধরিয়া দিতে না পারিলে, কবিব ব্যক্তিগত অনুভূতি বা কল্পনার বিশিষ্ট প্রেরণা মাঠে মারা যাইত,—যে particularity সকল কাব্যস্থষ্টির প্রাণ তাহারই অভাবে কল্পনার সত্য রক্ষ হইত না । কবির কাজ এই পর্যন্ত, তারপর ধে আনন্দ বা রসাস্বাদ । অনিবাৰ্য্যরূপে ঘটে, তাহার প্রকৃতি-নির্ণয় দার্শনিকের কৰ্ম্ম, কবির নয় । অতএব রসবাদীর রসতত্ত্ব যে কাব্যস্থষ্টির প্রেরণ নয়, ইহা নিশ্চিত । কবি যদি সৰ্ব্ববস্তুতে ‘ব্রহ্মাস্বাদ’ করিতেন, তবে আর কথা কহিতেন না, রিসে বৈ সঃ’ বলিয়া চুপ করিয়া যাইতেন, কবিকৰ্ম্মের কোন প্রয়োজনই থাকিত না । কাব্যস্থষ্টির প্রারম্ভে কবিচিত্তে যে রসোল্লাস হয়—সেই emotion অতিমাত্রায় বস্তুগত, ও ব্যক্তিগত, অতিশয় অনন্যসাধারণ ও স্বনির্দিষ্ট ; এই রসকে রূপ হইতে বিচ্ছিন্ন করা চলে না, ইহা নির্বিশেষ নয়, সৰ্ব্বত্রই বিশেষের অনুবন্ধী। এজন্য কাব্যবিশেষের ভাষা, ছন্দধ্বনি, শব্দচিত্র প্রভৃতি যাহা কিছু উপাদান—তাহার কোনটিকে বাদ দিবার বা একটু বদলাইবার যে নাই । এজন্য বিভিন্ন কবিতার যে নাম দেওয়া হয় তাহা নিরর্থক—সেই নাম হইতে কবিতার কিছুমাত্র পরিচয় ঘটে না । যতক্ষণ না কবিতার শেষ অক্ষর পর্য্যস্ত পাঠ করা যায়, ততক্ষণ কবির কল্পনাটি বিশিষ্ট ও পরিচ্ছিন্ন আকারে কবিতা হইয়া ওঠে না। একটি উদাহরণ দিব । জ্যোৎস্ন রাত্রির একটি রূপ, বিশেষ করিয়া তাহার স্তব্ধতার মাধুরী, কবি একটি শব্দচিত্রে এইরূপ আঁকিয়াছেন— হের, সখি, আঁথি ভরি’ শুভ্র নীরবতl, পাহাড়ের দুটি পার্থ জ্যোৎস্ন। আর মসী। নিথর নিশার কণ্ঠে কি দিব্য বারত, কাণ পেতে শোন হেথা বালুতটে বসি । নীরবে নদীর জল চলে সাৰধানে, সুর মিলাইয়ে ওই তারকার সাথে । পথ চেয়ে চেয়ে বায়ু মগ্ন কার ধ্যানে— সস্তুপণে হাতখানি রাখ মোর হাতে ।