পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و سيا তার দৈবী শক্তি প্রণোদিত বলিয়া বিচিত্র কৰ্ম্মসাধনাকে বুঝি না, বিশেষ বিশেষ কাৰ্য্যের প্রভাবেই আমরা বিচার করিয়া বসি। অথচ সত্য এই যে র্তার শক্তিই আমাদের সকলের মৰ্ম্মস্থল হইতে উৎসারিত হইতেছে। আমার অস্তিত্বের মধ্যেই যে সীমার সঙ্কীর্ণত ; কিন্তু সেই সীমা উল্লঙ্ঘন করিয়া আমরা যে প্রাণের আদি উৎসে পৌছিতে পারি। প্রকৃতির বুকে এমন কিছুই থাকিতে পারে না যাহা আমার কাজের জিনিষ না হইতে পারে ; সে মানুষই হোক আর বৃক্ষলতাদিই হোক। আমার সামনেই একটি গাছ দেখিতেছি অথচ সে সম্বন্ধে আমি উদাসীন। কিন্তু যাকে ভালোবাসি সে মাহ্য বৃদি সামনে আসে, তাহইলে কোথায় থাকে ঔদাসীন্য ? আসল কারণ এই যে, আমার দর্শন ও শ্রবণেন্দ্রিয়ের উপর গাছটার প্রভাব ক্ষীণ, কিন্তু আমার বন্ধু অবিরতভাবে আমার সমস্ত সত্তাকে যেন সঙ্গীতমুর্থর করিয়া রাখে , সুতরাং দেখিতেছি আমার উপর অপরে কি রকম এবং কতটা প্রভাব বিস্তার করিতেছে তাহা দিয়াই অপরের জীবনের মূল্য নিৰ্দ্ধারণ করি। এ যেন প্রতিধ্বনির প্রতিধ্বনি ! কিন্তু সত্যভাবে অপরকে দেখিতে, বুঝিতে, ভালোবাসিতে হইলে আত্মার মধ্যে সকলকে নিবিড় আলিঙ্গনে বাধিতে হইবে। সুতরাং প্রেমেই সকলের সত্যপ্রকাশ, সত্য প্রতিষ্ঠা—প্রেমই সব ; (Tout est Amour) এই চোখে দেপিলে বুঝিব আমার প্রিয়তম বন্ধু এবং ঐ যে গাছটি উদ্যানে শ্বামীতে স্নিগ্ধ হইয়া উঠিতেছে উভয়েই তুল্যমূল্য। দুইটিই ত শাশ্বত প্রাণের ক্ষণিক রূপতরঙ্গ—ক্ষণিকত্বে দুজনেই সমান-ধৰ্ম্মী । তবুও এ জীবনে যে আমি আমার আপনার জনদের, বন্ধুদের, আমার দেশমাতৃকাকে, আমার বিশ্বমানব, আমাদের এই পৃথিবী—এই ব্ৰহ্মাণ্ডকে যে বিশেষ করিয়া ভালোবাসি তা’রও একটা সার্থকতা আছে। জীবনের বিরাটু লীলানাট্যে এরা সকলেই আমার মত “ক্ষণিকের অতিথি।” সকলেই কোথায় চলিয়া যাইতেছে! তবু আমি ত বিশেষভাবে ওদের সঙ্গেই রঙ্গমঞ্চে নামিয়াছি—একই অঙ্কে অভিনয় করিতেছি, উহাদের হইতে নিজেকে বিচ্যুত এবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ { ২৬শ ভাগ, ১ম খ করিবার নিৰ্ব্বোধ প্রয়াসে কি হইবে ? বিচ্যুত হইতে যে পারি না । জীবন-নাট্যের প্রথম পটক্ষেপের সময় হইতেই অনুভব করিতেছি যে আমার বিশেষ ভূমিকায় আমার বোধ, আমার অনুভূতি, আমার ভালবাসা সবই ততক্ষণ সজাগ ও সক্রিয় যতক্ষণ আমার সার্থীরা আমার সঙ্গে অভিনয় করিতেছে। এই সঙ্গতের এই একত্র অভিনয়ের আনন্দ ছাড়িয়া হঠাৎ যদি আমার ও ঐ-সব সত্তাদের মধ্যে যে নিঃসীম নিরয় ভীষণ ব্যবধান হইয়া আছে তাহার ছবি আঁকিবার ব্যর্থ প্রয়াস করি, তাহা হইলে ধ্রুবকে ছাড়িয়া ছায়ার পিছনে ছোট হইবে। জানি ঐ নিরয়ও একটা সত্য এবং তাহার মধ্যে তলাইয়া তাহাকে পরে বুঝিতে চেষ্টা করিব—নিখিল প্রাণের ঐক্যতানে নিরয় কোন স্থান অধিকার করে সমগ্রতার দৃষ্টিতে তাঁহা দেখিতে প্রয়াস পাইব । নিখিল বিশ্বই ভূম । ভূমার মধ্যে আমাদের প্রেম নিৰ্ম্মলতায় ও গভীরতায় অনুপম। কিন্তু সেই ভূমার প্রেম আমাদের প্রত্যেকের জন্য বিশেয বিশেষ ব্যক্তিসত্তার মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করে ; আমাদের এই আপন-মানুষ ৰাছের মানুষদের শরীরে সেই প্রেম শরীরী ; তাহাদের চোখের দীপ্তি, অধরন্থত্যের ছন্দ, তাহীদের প্রত্যেক অঙ্গভঙ্গীটি যে সেই ভূমার প্রেমকে প্রতিমুহূর্তে পরিস্ফুট করিতেছে ; তাহদের কণ্ঠ যে ভূমার ব্যঞ্জনায় পূর্ণ ; ভূম আমার হইবেন বলিয়াই ত বঁধুর নিবিড় বাহুবন্ধনে ধরা দিতেছেন ; কিন্তু সেই আলিঙ্গনের মধ্যে ত মনে থাকে না যে, বক্ষে যে প্রিয়তমকে ধরিয়াছি সে শুধু সেই ছোট্ট মাচুষটি নয় সে এক ব্ৰহ্মাণ্ড । অথবা সে ও আমি এই দুজনের নিবিড় মিলনই সেই ব্ৰহ্মাও । স্বতরাং দেখিতেছি, বাহিরের জগৎ বলিয়া কিছু নাই, আছে তাহার মায়া এবং এ মায়া আমাদের চিত্তকে দখল করিয়া বসে। সত্য শুধু এক ভূম, অসংখ্যরূপের সহস্রদল পদ্ম। প্রত্যেক দলটিকে মনে হয় যেন একটি ক্ষুদ্র পুষ্প-পাত্র, আবার বোধ হয় যেন একটি ছোটখাট ব্রহ্মাণ্ড, তেমনি সমস্তই দেখি ; কখনও পদ্মকে ভুলি কখনও দলকে ভূলি ; এইভাবে কাহিকতার মোহিনী মৃগতৃঞ্চিক আমাদের বিভ্রান্ত করে।