পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] মৃত্যু-দূত »ፃፃ অদ্ভুত লোক ত ! মুমু মেয়েটাকে একটি কথা বলিলেই ত চুকিয়া যায়! জর্জ ত বলিয়া দিলেই পারে যে, ডেভিড, হলমের আত্মারাম খাচাছাড়া হইয়াছে ; এই দুনিয়ার লীলা-খেলাতে তার এখন প্রবেশ নিষেধ ; স্ত্রীপুত্রের অনিষ্ট করা ত দূরের কথা! তা না, জর্জ আসল কথাটা গোপন রাখিয়া মেয়েটাকে আরো যন্ত্রণ দিতেছে—একেই ত বেচারা দুঃখে অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে । জর্জ জিজ্ঞাসা করিল, “সিস্টার ঈডিথ, ডেভিড হলমের উপর তোমার কি কোনো জোর খাড়বে মনে কর ? সে অতি নিৰ্ম্মম, হৃদয়হীন—সহজে তার মন গল্বে না । তুমি আজ শুয়ে শুয়ে যে-ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছ সেটা আসলে হয়ত সত্যি নয়। তার প্রতিহিংসা কতটা বীভৎস হ’তে পারে—তার মনের রাগ কাজে পাটাতে পারলে সে কি করতে পারে তুমি তারই পরিচয় পেয়েছ ।” সিস্টার ঈডিথ, চীৎকার করিয়া উঠিল,“ন, না, অমন কথ! বোলে না—আমার ভারী কষ্ট হয় ।” মৃত্যুযানের চালক বলিল, “আমি তাকে তোমার চাইতেও ভাল ক’রে জানি । ডেভিড, হল্ম্ কেমন ক’রে এতট অধঃপতনে গেল তার ইতিহাস ও আমি জানি । সে বরাবর এমনটি ছিল ন৷ ” সিস্টার ঈডিথ ব্যাকুলভাবে বলিয়া উঠিল, “সে-কথা শুনতে আমার বড় ইচ্ছে করছে—তুমি বল। হয়ত সমস্তটা শুনে আমি তাকে ভাল ক’রে চিনতে পারব।” জর্জ বলিতে লাগিল, “অনেকদিন আগের কথা । ডেভিড তখন এসহরে আসেনি ; তখন প্রায় সন্ধে হ’য়ে এসেছে, জেলখানা থেকে একজন কয়েদী খালাস পেয়ে বাইরে এসে দাড়াল ; জেলখানার দরজায় তার জন্যে কেউ অপেক্ষা করে ছিল না । মূঢ়ের মত, সে সেখানে দাড়িয়ে রইল। তার মনে তখনে একটু ক্ষীণ আশা জাগছিল— কেউ হয়ত আসবে—তার এই দুঃখ-মুক্তির সময় অভিনন্দন করতে। ছাড়া পাওয়াতে যে-আনন্দ তার হচ্ছিল সে একৃলা যেন সেটা উপভোগ করতে পারছিল না ; এই স্বথের সময় তার মন সঙ্গী খুজছিল। মদ খেয়ে মাত লামী করার জন্তে লোকটার কয়েদ হয়েছিল।

  • লোকটার দুর্ভাগ্য—সে বাইরে এসেই একটা মৰ্ম্মাস্তিক আঘাত পেলে ; সে খবর পেলে যে, তার কয়েদ-অবস্থায় তার ভাই অধঃপতনের ধাপে-ধাপে দ্রুত নামৃতে স্বরু করে, শেষে একদিন মাতাল হ’য়ে একটা লোককে খুন করে ; সম্প্রতি সে জেলে আছে। জেলখানায় সে ঘূণাক্ষরেও ব্যাপারটা জানতে পারেনি ; জেলের ধৰ্ম্মযাজক প্রথম তাকে খবরটা দিয়ে তার ছোট ভাই ষে কুঠরীতে আটক ছিল সেখানে নিয়ে গেল। সে তখন হাতকড়ালাগানো অবস্থায় চুপটি করে বসে আছে—জেলের কুঠরীর ভেতরেও তাকে হাতকড়া দিয়ে রাখতে হয়েছিল, কারণ সে শাস্তভাবে জেলে থাকৃতে চায়নি। ভাইয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে যাজকটি তাকে জিজ্ঞেস করলে, ‘ওকে চিনতে পাৰ্বছ কি ? ভাইকে এই অবস্থায় দেখে কয়েদ-খালাস লোকটা মৰ্ম্মাহত হ’ল ; ভাইকে সে প্রাণ ভরে ভালবাস্ত । ধৰ্ম্মধাজক বললেন, “এই লোকটাকে আরো বহুকাল জেলে থাকৃতে হবে, কিন্তু ডেভিড, হল্ম্, আমরা সবাই জানি যে, আসলে তোমারই এই শাস্তি হওয়া উচিত ছিল, কারণ তুমিই ওকে প্রলোভন দেখিয়ে বিপথে নিয়ে গেছ ; তুমি এমন ভাবে তার সর্বনাশ করেছ যে, ভাল-মন্দ বোধ ওর একেবারে নষ্ট হয়েছে।’

“তার ভাই কয়েদঘরে ফিরে যাওয়৷ পৰ্য্যস্ত ডেভিড কোনোরকমে নিজেকে সাম্লে ছিল, কিন্তু ভাই যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে সে ছোট ছেলের মত ফুপিয়ে-ফুপিয়ে কাদতে লাগল, এমন কান্না সে বড় হ’য়ে কাদেনি। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞ করলে যে, বিপথে আর কখনো যাবে না। এর আগে সে কল্পনাও করতে পারেনি যে, তার পাপের ফলে তার পরম স্নেহের পাত্র ভাইকে এভাবে যন্ত্রণাগ্রস্ত হ’তে হ’বে । ভাইয়ের কথা ভাবতে-ভাবতে স্ত্রীর কথা ও তার ছেলেদের কথা ডেভিডের মনে প’ড়ে গেল। তার মনে হ’ল যে, তাদেরও নিশ্চয়ই দুরবস্থার একশেষ হয়েছে ; সে দ্বিতীয় বার প্রতিজ্ঞ কবুলে যে, তার নিজের দুষ্ট ব্যবহারে আর কখনো সে স্ত্রীপুত্রকে কষ্ট দেবে না। সেই রাত্রিতেই সে তার স্ত্রীর কাছে শপথ করবে, সে সম্পূর্ণ নতুন ক’রে জীবন গড়ে তুলবে।’ “কিন্তু সে তার স্ত্রীকে জেলের দরজায় দেখতে পেলে