পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৭৮ - প্রবাসী—জাখিন, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ,১ম খণ্ড না, রাস্তাতেও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হ’ল না। বাড়ী গিয়ে সে যখন দরজায় ঘ দিলে তখনও তার স্ত্রী এসে তার অভ্যর্থনা করলে না—ডেভিড হতাশভাবে দাড়িয়ে ভাবতে লাগল—কই এমন ত কখনো হয়নি, সে যখনই বিদেশ গেছে স্ত্রী উৎকণ্ঠিত চিত্তে তার প্রতীক্ষণ করেছে—আজ একি হ’ল ! নানারকমের বিপদের ভয়ে তার বুক দুরদুর করতে লাগল। সে কি তবে আর নেই-না, তা কথনই হতে পারে না, সে যখন জীবনের ধারা বলে ফেলবার জন্তে মনস্থির করেছে তখনই কি এতট। যন্ত্রণ তাকে সহ করতে হবে ? “ন, সে মিছে ভাবছে ! সে জানত তার স্ত্রী কোথাও যাবার সময় পাপোষের নীচে চাবি রেখে যেত, সে হাত ড়িয়ে ঠিক জায়গায় চাবি পেলে,—দরজা খুলে সে হতভম্ব হ’য়ে গেল—ভাবলে, সে স্বপ্ন দেখছে বুঝি ! ঘরখানা প্রায় একেবারে পালি, সামান্ত দু’চার খান মাত্র জিনিষ আছে—ত্রী বা ছেলেপুলেদের কোনো চিহ্ন নেই। “তার মনে হ’ল যেন বহুদিন সে-ঘরে কেউ বাস করেনি, ঘরে আগুন জ্বালা হয়নি, খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই, জালানি কাঠ—এমন-কি জানলায় পরদা পৰ্য্যস্ত নেই, সে পাগলের মতন তার প্রতিবাসীদের কাছে খবর জানতে গেল। সম্ভবতঃ তার অবর্তমানে সে অজখে পড়ে ; তাকে বোধ হয় কেউ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। প্রতিবাসীরা বললে, তার স্ত্রীর ব্যারাম-স্যারাম কিছু হয়েছিল ব’লে ত তারা জানে না, সে ত ভালই ছিল।তবে সে গেল কোথায় ?—তারা সে খবর জানে না। “ডেভিড দেখলে, তার এই দুরবস্থা দেখে তার প্রতিবেশীরা বেশ একটু আমোদ পাচ্ছে—তার দিকে কটাক্ষ করতেও ছাড়ছে না, তাদের ভাবটা—যাবে আবার কোন চুলোয়-স্থবিধা পেয়ে মাগী ছেলেপুলে আর জিনিষপত্র নিয়ে ভেগেছে ; স্বামী কয়েদখানা থেকে ফিরবে ব’লে তার ভারী মাথাব্যথা কি না : ডেভিডের চারদিকে সব কেমন খালি খালি বোধ হ’তে লাগল,যেন সে শূন্ত মরুভূমির মধ্যে এক্‌লা প'ড়ে আছে। স্ত্রী কাছে ফিরে আসবে এই কল্পনায় তার মনে কি স্থখটাই না হচ্ছিল—সে কি ব’লে স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইবে তা পৰ্য্যন্ত মনে মনে তালিম দিয়ে এসেছিল। সত্যি সত্যি তার ভাল হবার ইচ্ছা হ’য়েছিল। তার এক প্রাণের দোস্ত ছিল—লোকূটাভা বংশের হলেও একেবারে ব’য়ে গিয়েছিল। সে মনে মনে শপথ করেছিল তার সঙ্গে আর মিশবে না। জবিপ্তি সে যে শুধু তার বদভ্যস্বভাবের জন্যে তার কাছে যেত তা নয়—লোকটার পেটে বিদ্যেও ছিল অনেক । সে পরদিন থেকে তার পুরোনো মনিবের কাছে গিয়ে কাজ নেবে ব’লেও ঠিক করেছিল—তার ছেলেদের ও স্ত্রীর জন্যে সে ভূতের মত খাটুবে ; এবার থেকে, বউ ছেলে যাতে ভাল কাপড়চোপড় পরতে পারে, ভাল খেতে পারে, তার ব্যবস্থ৷ করবে--তাদিকে একটুকুও অভাবে ফেলবে না । এমন সময় তার অকৃতজ্ঞ স্ত্রী তাকে পরিত্যাগ ক’রে গেল । “সে রাগে আর দুঃপে ছট্‌ফট্‌ কবৃতে লাগ ল; এক-একবার তার মনে ভারী রাগ হ’তে লাগল ; স্ত্রীর নিষ্ঠুরতার কথা ভেবে সে গরগর করতে লাগল। হ্যা, সে যদি ব’লে-ক’য়ে সকলের সামনে ব’লে যেত তার কিছু বলবার ছিল না— সে ত যথেষ্ট সহ করেছে। তা না ক’রে সে চোরের মত পালিয়েছে—তাকে কোনো খবর না দিয়ে। শূন্ত ঘরে তাকে এম্নি ক’রে ফিরে আসতে হ’ল ! একটু খবর দিয়ে গেলেই ত হ’ত ; তাহ’লে জিনিষটা এত মৰ্ম্মাস্তিক হ’ত না । এজন্তে সেই অকৃতজ্ঞ মেয়েটাকে ক্ষম কর। চলে না । “তাকে, তার সমস্ত প্রতিবেশীর সামনে অপদস্থ হতে হ’ল ; লোকে তাকে দেখলেই মুচকি হেসে চ’লে যেত। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলে, এই হাসি সে বন্ধ করবে। তার স্ত্রীকে সে খুজে বের করবেই—তার পর তাকে ঠিক এমনি । ভাবে জব্দ করবে—ন, এর চাইতেও ঢের বেশী জব্দ করবে, তাকে সম্ঝিয়ে দেবে তিলে তিলে দগ্ধ হওয়া কাকে বলে । “সেই নিরানন্দ জীবনের এই হ’ল তার সাত্বনা— স্ত্রীকে একবার হাতে পেলে তার ওপর প্রতিহিংসা কেমন ভাবে নেবে তার মাথায় খালি এই কথাই জাগতে লাগল। তারপর পুরো তিন বছর ধ’রে সে স্ত্রীর খোজে পাগলের মত ঘুরেছে ; তার মনে পাক খেতে খেতে এই প্রতিহিংসা নেবার ইচ্ছাটা একটা ব্যারামে দাড়িয়ে