পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] ফ্যাসিষ্ট আন্দোলন-সম্বন্ধে যথার্থ সংবাদ জানিয়াছেন ও ইতালীর সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদসমূহের অনুবাদ পড়িয় তাহাদের মিথ্যা ভাষণের বহর দেখিয়াছেন। কবি যে-ভাবেই ইতালী সম্বন্ধে সত্য খবর জানিতে পারিয়া থাকুন না কেন, তাহার পক্ষে এইসকল সত্য পূৰ্ব্ব হইতেই অনুসন্ধান করিয়া ইতালী-ভ্রমণকালে তদেশীয় গভর্ণমেণ্টের আতিথ্য গ্রহণ না করিলেই ভাল হইত। আমাদের দেশেরও ইহাতে মঙ্গল হইত এই কারণে যে, কবি পূর্বে ইতালীয় গভর্ণমেণ্টের আতিথ্য গ্রহণ করিয়া ও তৎপরে তাহাদিগের সমালোচনা করিয়া ইতালীয়দিগের মনে যে-অসন্তোষের ভাব জাগ্রত করিয়াছেন তাহা ভারতের পক্ষে কোনপ্রকারেই লাভজনক হইতে পারে না। যে অতিথি ও যে আতিথ্য দান করে তাহীদের মধ্যে পরস্পর ব্যবহারের যে-আদশ তাহাও ইহাতে ক্ষুণ্ণ হইয়াছে । ইহাও না হইলেই ভাল হইত। কবি বর্তমানে বৃদ্ধ হইয়াছেন । তাহার পক্ষে ইয়োরোপীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সকল খবরাবর লইয়া দেশভ্রমণে বহির্গত হওয়া সম্ভব নহে । কোন দেশের কোন রাষ্ট্রনেতা কিভাবে নিজ দেশের উন্নতি বা অবনতি সাধন করিতেছেন তাহারও হিসাব রাখা কবির পক্ষে সম্ভব নহে । এরূপ ক্ষেত্রে তিনি যদি ভুলক্রমে সঙ্কীর্ণচেত। কোন রাষ্ট্রনেতার আতিথ্য গ্রহণ করেন ও র্তাহার সম্বন্ধে সখ্য ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপক কোন মত প্রকাশ করেন তাহ। দ্বারা ইহা প্রমাণ হয় না যে, কবি উক্ত রাষ্ট্রনেতার বিষয়ে সেই এক মতই চিরকাল পোষণ করিবেন বা করিতে বাধ্য। আমাদের দেশে কোন কোন বড় রাজকৰ্ম্মচারী বহুকাল ইংরেজ গভর্ণমেণ্টের “নিমক” থাইয়া ও উক্ত গভর্ণমেণ্টের সমর্থন করিয়া অবশেষে তাহাদিগের বিষয়ে নূতন জ্ঞানলাভ করিয়া তাহাদিগের নিন্দ ও বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছেন। তাহার জন্য আমরা এইসকল রাজকৰ্ম্মচারীর প্রশংসা ব্যতীত নিন্দ করি নাই। কবি যদি বিদেশে কোন ধূৰ্ত্ত রাষ্ট্ররর্থীর চক্রান্তে পড়িয় ভুল বুঝিয়া কোন কথা বলেন এবং পরে যদি নিজের ভুল বুঝিতে পারিয়া ভিন্নমত প্রচার করেন, তাহাতে দোষের কিছুই নাই। কিন্তু যদি তিনি বা র্তাহার কৰ্ম্মসচিবগণ উন্মুক্তচক্ষু অবস্থায় সঙ্কীর্ণ স্বদেশবাদের চরম উদাহরণ ইতালীর প্রভু মুসোলানির আতিথ্য গ্রহণ করিয়া প্রথমতঃ উন্নত ও উদার-বিশ্বপ্রেমবাদীর অনুপযুক্ত কাৰ্য্য করেন ও দ্বিতীয়তঃ যে-কোন কারণ দেখাইয়া তীব্র সমালোচনায় সেই মুসোলিনীর আতিথেয়তার প্রতিদান করেন ; তাহা হইলে অন্তত একথা বলিতে হয় যে, ব্যাপারটি সকল দিক্ হইতে দেখিলে আদর্শরূপে সম্পন্ন হয় নাই। দার্শনিক কবি সকল বাহ্যিক অবস্থা সম্বন্ধে উদাসীন হইতে পারেন ; বিবিধ প্রসঙ্গ—রবীন্দ্রনাথের মত-পরিবর্তন ఎbyఏ তাহাকে কাহারও আতিথেয়তা গ্রহণ করা বা না-করা বিষয়ে আধুনিক রাষ্ট্রজগতের সকল অবস্থা বিচার করিয়া কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে আশা করা আমাদের পক্ষে দুরাশা হইতে পারে ; কিন্তু তাহার বিচক্ষণ কৰ্ম্মসচিবদ্বয়, শ্ৰীযুক্ত রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শ্ৰীযুক্ত প্রশাস্তচন্দ্র মহলানবীশ ( যাহারা যুবক, বৰ্ত্তমান জগতের সকল অবস্থা সম্বন্ধে সজাগ, ইয়োরোপ-আমেরিকার বহু মনীষীর সহিত পত্রালাপে তৎপর এবং স্থচিন্তা ও স্বব্যবস্থায় বিচক্ষণ, র্তাহারা ) কি বলিয়া কবিকে ইতালীর স্বেচ্ছাচারী নেতা ও মানব-স্বাধীনতার আদর্শের বিরুদ্ধাচারী মুসোলিনীর গৃহে অতিথিরূপে লইয়া গেলেন ? মুসোলিনীর কার্য্যকলাপ যাহাই হউক, তাহার উদেশ্ব ভাল হউক বা মন্দ হউক, একথা সত্য যে, মুসোলিনীর মতামত কবির মতামতের প্রায় সম্পূর্ণ উল্টা । কবিকে এই মুসোলিনীর অতিথি করিয়া লইয়। যাওয়া উপরোক্ত বুদ্ধিমান যুবকদ্বয়ের পক্ষে কখনও উচিত হয় নাই। মুসোলিনী শব্দের অর্থ কি, তাহা তাহারা জানিতেন ( কবি না জানিলেও ) এবং ইতালীয় গভর্ণমেণ্টের সহিত সথ্য-স্থাপনের প্রচেষ্টার মধ্যে আমরা ইহাদিগের সেই মনোভাবেরই পরিচয় পাই, যে-পরিচয় আমরা তাহাদিগের বিশ্বভারতীর সহিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ স্থাপন চেষ্টার মধ্যে পাইয়ছিলাম। কবি রবীন্দ্রনাথ যে-বিশ্ববিদ্যালয় ও তাহার শিক্ষানীতির আজন্ম সমালোচক সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত যখন বিশ্বভারতীর সম্বন্ধ স্থাপনের চেষ্টা হয় তখন আমরা সে-চেষ্টার মধ্যে compromise বা আদর্শ ক্ষুণ্ণ করিয়া লাভের চেষ্টার পরিচয় পাই । এই অল্প লাভের আশা রবীন্দ্রনাথের ন্যায় মহান ব্যক্তির কল্পনাপ্রস্থত নহে । কারণ যে-কবি, যে-মহা-পুরুষ স্থান, কাল ও পাত্রের সকল প্রলোভন, অত্যাচার প্রভৃতি অগ্রাহ করিয়া দীর্ঘ পঞ্চাশ বর্ষাধিককাল নিজের জীবনের আদর্শের গতি শ্রেয়ের পথে রাখিবার জন্য প্রাণপণ করিয়া আসিয়াছেন, তিনি কদাপি ক্ষুদ্র স্থবিধার চেষ্টায় আদর্শকে বলিদান দিতে পারেন না। যে অদূরদর্শিতার ও আদর্শনিষ্ঠার অভাবের পরিচয় আমরা ঐ বিশ্ববিদ্যালয়-ঘটিত ব্যাপারে প্রথম পাই, আজ কবির কৰ্ম্মসচিবদিগের ইতালীয় “এ্যাড ভেনচারে” আমরা তাহারই পরিচয় দ্বিতীয় দফায় পাইলাম। দরিদ্র ভারত যদি কোনদিন জগতকে কোন সত্য বাণী শুনাইয়া থাকে, তাহা হইলে সে-বাণী উত্থিত হইয়া ছিল গভীর-অরণ্যবাসী নিঃসম্পদ রিক্তভূষণ ঋষির কণ্ঠ হইতে। তাহার পশ্চাতে ছিল নীরব নিরাভূম্বর সাধনা । কবি রবীন্দ্রনাথের জীবনেও তাহার শাস্তিনিকেতনে আমরা এই প্রাচীন যুগের কৰ্ম্মীদিগেরই