পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] মেয়ের গায়ে তেলজল পড়বে কখন ? শেষকালে কি অবেলায় চান ক’রে একটা ভালমন্দ বাধাবে ? মেয়েও ত তোমার তেমনি ! ষেটের কোলে দশবছর পেরিয়ে গেল, এখনও ধুলো ঘাট, পুতুল খেলাঘুচল না। শ্বশুরঘর করবে কি করে ?” বধু তরঙ্গিণী মাছের তেলঝাল রাধিতে ব্যস্ত ; শাশুড়ী রান্নাবান্না ছাড়া অন্তকাজে বড় ডাকেন না ; আজ র্তাহাকে অকস্মাং ডাকাডাকি করিতে দেখিয়া কোনো-প্রকারে মাথার কাপড় সাম্‌লাইতে-সাম্‌লাইতে বধ উঠিয়া বলিলেন, “সত্যি বলেছ মা ! আমি এই ছিষ্টির রান্না নিয়ে হাবুডুবু পাচ্ছি ; শীতের বেল, কোথায় নিজে যোগাড় ক’রে চানট আরটা ক’রে রাখবে, তা না কোন চলোয় নাচতে গেছেন ।” - বড় ঠাকুরুণ জিভ কাটিয়া বলিলেন, “মুখখনি অত আলগা দিও না, বেীমা । জামাই আসছে, আজকের দিনে অমন ক’রে কথা কইতে আছে ?” বৌমা লজ্জিত হইয়া বলিলেন, “সাত ঝঞ্চাটে আমার কি মাথার ঠিক আছে, ম' ? ঘাই, মেয়েটাকে ধ’রে এনে কলতলায় বসই । এদিকে মুড়ি-ঘণ্ট, দইমাছ, পটোলের দোলমা, সব বাকি প’ড়ে রয়েছে। কি ক’রে যে পাত সাজিয়ে সামনে দেব জানি না ।” ছোট বেী মুণালিনীর আজ মেজাজ ভাল ছিল । সে বলিল, “তুমি যাও-ভাই, মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করে ৎস । গায়ের চার পুরু তুলতেই তোমার বেলা ব’য়ে সাবে। আমি ততক্ষণে তিনটে রান্না নামিয়ে ফেলব।” তরঙ্গিণী মাছের গত ধুইয়া মেয়েব সন্ধানে চলিলেন। তিনি ভিতর বাড়ীর গণ্ডী ছাড়াইয়। বাহিরের উঠানে কখনও পা দেম না । বয়স হইয়াছে, পুত্ৰ কন্যাও অনেকগুলি, কিন্তু শাশুড়ী বর্তমানে আজও তাহাকে বধুর মতনই এ-সকল দিক সমৃঝিয়া চলিতে হয়। ভিতরের উঠানে গৌরীর দেখা নাই, বাহিরের দরজায় গিয়া যে ডাকাডাকি করিবেন তাহারও উপায় নাই ; কে আবার কোথা হইতে গলা শুনিতে পাইবে . লক্ষ্মী বঁী সদর দরজায় ধূলার উপর সেজ ঠাকুরঝির কোলের মেয়েটাকে বসাইয়া জগু বেহারার সহিত হাসি ও গল্পে মাতিয়া উঠিয়াছে ; এতদূর জীবনদোলা ᎼᏱ☾ হইতে তরঙ্গিণীর মুদু আহবান ও ইঙ্গিত তাহার কানেও পৌছিতেছে না। বড় ঠাকরুণের মামাতো বিধবা বোন সংসারে সকলকে হারাইয়া এই দিদির সংসারে আসিয়া আশ্রয় লইয়াছিলেন । র্তাহার বয়স সত্তরের কাছাকাছি ; সচরাচর অন্দরের বাহিরে তাহার ৪ গতিবিধি ছিল না । তবে দরকার পড়িলে থান কাপড়ে ঘোমটা টানিয়া কুজপ্রায় দেহে তিনি এদিক্‌ ওদিক্‌ তাকাইয়া কখনও-সখনও বাহিরের উঠান কি বৈঠকখানা ঘর ঘুরিয়া আসিতেন। তরঙ্গিণী কোনো সহায় না পাইয়া ছোট ঠাকরুণেরই শরণ লইলেন। তিনি তখন নাত-জামাইকে ঠকাইবার জন্য পিটলির ক্ষীরের ছাচ, কাকরের সিঙাড়া, লঙ্কাগোলার সরবং ইত্যাদি স্বাদু জিনিষ তৈয়ারীতে ব্যস্ত ছিলেন । তরঙ্গিণী গিয়া ডাকিলেন, “ছোটমা, গৌরীকে ত এ মুল্লুকে দেখছি না ; বোধ হয় বার বাড়ীর উঠোনে আছে । একবারটি না ডেকে দিলে ত তার হুস হবে না। নতুন জামাই আসছে ; মেয়ে ত আমার পুতুলখেলায় ডুবে আছেন। এখন থেকে নাইয়ে ধুইয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে ন৷ রাখলে কি দে কাণ্ড ক’রে বস্বে তা’র ত ঠিক নেই ? ভয়ে মরছি মা, মেয়ে না জানে ঘোমটা দিতে, না জানে গলা, নাবিয়ে কথা কইতে, ন জানে সম্ঝে চলতে । কুটমবাড়ী নিন্দে রটুলে আর কি রক্ষে আছে ! এই বেল। একবারটি ডেকে দাও, ভুলিয়ে ফুস্লিয়ে দেখি ।” ছোট ঠাকরুণ গল্পের গন্ধ পাইয়া উঠিবার তত তাড় দেখাইলেন না ; বলিলেন, ‘সত্যি মা, তোমার যা মেয়ে, নড়লে হয় ! সকাল্প ও আজি রাতে তোমার ঘর ছেড়ে বেলা আমায় বললে কি ! ছাঙ্গ পর । আমাকে মার কাছ থেকে আবার নিয়ে যাবে ! আমি ওকে রাস্তায় ঠেলে ফেলে দেব –আমি কত বোঝালুম—ঠাকুর বর এনে দিয়েছেন, মেয়েমান্তষের বরই সব, অমন কথা মুখে আনে না । তোমার মেয়ের কথা শুনেছ ? সে বলে,—ঠাকুরকে বলব আমার বিয়ে ফিরিয়ে দিতে। আমি ধুতি পর্ব, চল । কেটে ফেলব ; মেয়েমান্তষ হব না। আমি ঘরে-ঘরে ক্সিসকরব। বাড়ীতে ত কত লোক রয়েছে। পরের বাড়ীর বিয়ে আমি চাই না।”