পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃত্যু-দূত ১২৫ ১ম সংখ্যা ] সরিয়া বসিলেন যেন কন্যাকে বক্ষপুটে নিবিড় করিয়া ধরিয়া মৃত্যুর কবল হইতে রক্ষা করিবেন। কিছুক্ষণ পরে ঈডিথ চোখ খুলিল ; তাহার চোখে সেই অধীর চাঞ্চল্য। সিস্টার মেরীর আসন শূন্ত দেখিয়া তাহার মুখভাব শাস্ত লইয়া আসিল । সে নি:শবে পড়িয়া রহিল। তখন তার সম্পূর্ণ জ্ঞান ফিরিয়া আসিয়াছে—ঘুমের ভাবটাও কাটিয়া গিয়াছে। বাহিরে একটি দরজা খুলিবার শব্দ হইল। রোগী চকিত হুইয়া বিছানায় উঠিয়া বসিয়া কিসের যেন প্রতীক্ষা করিতে লাগিল । নিঃশবে সেই ঘরের দরজা খুলিয়৷ সিস্টার মেরী ঘরের ভিতর মুখ বাড়াইয় বলিলেন, “ক্যাপ্টেন অ্যাণ্ডারসন দয়া ক’রে এখানে একবারে আস্থান ! আমি ঘরের ভিতর ঢুকব না। বাইরের হাওয়ায় আমার জামা কাপড় ভিজে গেছে । আমি কাপড় ছেড়ে আসছি।" রোগিণীর দিকে চোখ পড়িতেই দেখিলেন সে একদুষ্টে তাহার দিকে তাকাইয়া আছে। তাহাকে লক্ষ্য করিয়ু বলিলেন, “ঈডিথ, আমি এখনো তা’কে খুঁজে বের করতে পারিনি ; তবে গুস্তাভাস্তানের সঙ্গে দেখা হ’ল । সে আর আমাদের দলের আরো দুজন যেমন ক’রে পারে :ডভিডকে খুঁজে আনবে।” তাহার কথা শেষ হইতে না হইতেই ঈডিথের চক্ষু বুজিয়া আসিল ; সে আবার সেই দারুণ দুশ্চিন্তার মধ্যে ডুবিয়া গেল। সিস্টার মেরী ঈডিথের এই তন্দ্র লক্ষ্য করিয়া বলিয়া উঠিালন, ঈডিথ বিকারের ঘোরে নিশ্চয়ই হলম্কে দেখতে পাচ্ছে । দেখছেন না, তা’র দৃষ্টি কেমন অভিমান-ক্ষুব্ধ । শান্তি শাস্তি—তার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।” তিনি পাশ্ববৰ্ত্তী ঘরে চলিয়া গেলেন ; ক্যাপ্টেম আ গুারসন তাহার অনুসরণ করিলেন । সেই ঘরের মাঝখানে একটি নারী দাড়াইয়াছিল । বখস ত্রিশের বেশী হইবে না। রং ফ্যাকাশে ও বিস্ত্রী ংইয়া গিয়াছে ; মাথার চুল অধিকাংশ উঠিয় গিয়াছে। গায়ের চামড়া কুঞ্চিত ; বুদ্ধাদের শরীরও এত ভাঙিয়া পড়ে না । তাহার পরিধেয় বস্ত্র এমনই জীর্ণ ও সামান্য যে মনে য সে ইচ্ছা করিয়া অতিরিক্ত ভিক্ষা পাইবার লোভে 'ছিয়া-বাছিয়া এই বস্ত্র পরিয়াছে। ক্যাপ্টেন সভয়ে মেয়েটির দিকে চাহিলেন । তাহার জীর্ণবেশ ও নষ্ট-স্বাস্থ্যই যে ভয়াবহ তাহা নহে ; মনে হইতেছিল যেন তাহার দেহ জমাট বাধিয়া পাষাণ হইয়া গিয়াছে ; সজীবতার লেশমাত্র নাই। সে যেন স্বপ্নাবিষ্টের মতন চলিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে ; কোথায় আসিয়াছে কেন আসিয়াছে জানে না । সম্ভবতঃ সে প্রাণে নিদারুণ আঘাত পাইয়া সকল বুদ্ধিবৃত্তি হারাইয়া ফেলিয়াছে। বদ্ধ উন্মাদ হইতে বুঝি আর বাকী নাই । সিস্টার মেরী বলিলেন, “ও ডেভিড় হলমের স্ত্রী। ডেভিড হলমের বাড়ীতে গিয়ে দেখি সে নিরুদেশ ; এই বেচার মূঢ়ের মতন বসে আছে। আমি যা জিজ্ঞেস করি কিছু বুঝতে পারে না, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ওকে সেখানে এই অবস্থায় ফেলে রেখে আসতে প্রবৃত্তি হ’ল না।” ক্যাপ্টেন বলিলেন, “ডেভিড হলমের স্ত্রী ! আমি যেন ওকে আগে কোথায় দেখেছি । ওর কি হয়েছে ? এমন-ধারা হ’ল কেন ?” হঠাৎ অত্যন্ত রাগিয়া উঠিয়া সিস্টার মেরী উত্তর করিলেন, “আজ কেন ? স্বামী দুৰ্ব্বত্ত দুৰ্দ্ধান্ত হ’লে যা হয় ওর তাই হয়েছে। সে যন্ত্রণ দিয়ে-দিয়ে ওর এই ' অবস্থা করেছে নিশ্চয়ই ।” ক্যাপ্টেন মেয়েটির আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিলেন। তাহার চক্ষু কোটর হইতে বাহির হইয়া আসিতে চায় ; চোখের তারা স্থির, নিশ্চল । অসহ মানসিক যন্ত্রণায় আঙুলগুলি মুষ্টিবদ্ধ, মাঝে-মাঝে একটা অন্তগূঢ় বেদনায় তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ থরথর করিয়৷ কাপিতেছিল । ক্যাপ্টেন আশ্চয্য হইয়া বলিলেন, “না জানি কি বিষম অত্যাচারে ওর এমন অবস্থ হয়েছে ।" সিস্টার মেরী বলিলেন, “কি জানি ? কোনো কথারই জবাব দিতে পারলে না কেবল থরথর ক’রে কাপতে লাগল। শুনলাম ওর ছেলেরাও কোথায় গেছে ; এমন কোনো লোক ছিল না যাকে জিজ্ঞেস ক’রে খবর কিছু জানতে পারি। হায়, ভগবান এমন দিনে কেন এর দূরবস্থা চোখে দেখালে । সিস্টার ঈডিথের আসন্ন অবস্থা ; এই উন্মাদকে নিয়ে এখন করি কি !" ও আমার