পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৪ মুখমণ্ডল সমাধি স্বচিত করিতেছে। এই প্রতিমার নিকটবৰ্ত্তী হইলে ভক্তের ত কথাই নাই, সাধারণ দর্শকের চিত্তেও ক্ষণেকের জন্য কায়োৎসর্গ করিয়া ধ্যানস্থ হইবার প্রবৃত্তি জাগিয়া উঠে। এইরূপ প্রতিমার উপাসনাকে পৌত্তলিকতা বলা যাইতে পারে না। ২ নং চিত্র কষ্টিপাথরের নিৰ্ম্মিত বদ্ধপদ্মাসনে উপবিষ্ট প্যানমগ্ন শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীরের মূৰ্ত্তি। পাদপীঠের লিপি দেখিয় অহমান হয় এই মূৰ্ত্তি খৃষ্টীয় দশম শতাদে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। ভক্তির নেত্রে এই মূৰ্ত্তির দিকে চাহিলে যাহা সূক্ষ্মাদপিস্তক্ষু যাহ পরাংপর প্রস্তর ভেদ করিয়া তাহার দিকে চিত্ত-ধাবিত হয়। অন্যান্য সম্প্রদায়ের এই যুগের প্রতিমা ও এইরূপ উচ্চ ভাবোদ্বীপক। গুপ্তযুগের পরে আর্য্যাবর্তের অন্যান্য প্রদেশে ভাস্কর্য্যের অধঃপতনের সূত্রপাত হয় । গৌড়ে পালরাজবংশের প্রতিষ্ঠার পরে ( খৃষ্টীয় অষ্টম ও নবম শতাবে ) ভাস্কৰ্য্য নবজীবন লাভ করিয়াছিল । গৌড়ে ভাঙ্গয্যের অধঃপতনের স্বচনা হয় একাদশ শতবে । তদবধি পৃষ্ঠফলকে কারুকাৰ্য্যের বাহুল্য এবং মূল প্রতিমায় ভাবসম্পদের হ্রাস লক্ষিত হয়। গুপ্তশিল্পের ধারা ক্রমশঃ সঙ্কীর্ণ হইয়া আসিলেও লক্ষ্মণসেনের সময় পৰ্য্যন্ত তাহ অক্ষুণ্ণ ছিল । কিন্তু মুসলমান আধিপত্য-স্থাপনের পরে সহসা যেন সেই ধারা একেবারে শুকাইয় গেল ; পাষণের প্রতিমা দেবত্ব হারাইয়া পুত্তলিকায় পরিণত হইল। দুষ্টান্তস্বরূপ ৩নং এবং ৪নং চিত্র দ্রষ্টব্য । ২ নং চিত্র রাজগৃহের অন্তর্গত বৈভরগিরির উপরকার একটি মন্দিরে স্থিত তীর্থঙ্কর পাশ্বনাথের মূৰ্ত্তি । মূৰ্ত্তির পাদপীঠে যে লিপি ছিল, তাহা এখন লুপ্তপ্রায় । মূর্তিটি খৃষ্টীয় চতুদশ শতাব্দীতে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল এইরূপ মনে করি বার যথেষ্ট কারণ অাছে। ৪ নং চিত্র রাজগৃহের অন্তর্গত রত্নগিরির উপরকার একটি মন্দিরের বাহিরের দেওয়ালের গায়ে বসান আছে। এই মূৰ্ত্তির পৃষ্ঠফলকে এবং পাদপীঠে খোদিত লিপিতে উক্ত হইয়াছে ইহা সংবৎ ১৫০৪ বর্ষে অর্থাৎ ১৪৪৭-৪৮ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। এই সময়ের এবং পরবর্তী কালের কৃষ্ণমূৰ্ত্তি এবং দেবীমূৰ্ত্তিও এইরূপ ভাবহীন এবং প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩০৩ [ २७* छांन, »म थ७ প্রাণহীন পাষাণপিণ্ড-মাত্র । সমসময়ের চিত্রকলা এবং হিন্দু দেবদেবীর চিত্র এমন নিজীব এবং ভাবহীন নহে। কিন্তু মুসলমান আমলের দেবদেবীর এবং তীর্থঙ্করগণের চিত্রে কায়োৎসর্গের বা ধ্যান-ধারণার ভাব দেখা যায় না, দেখা যায় লীলা-খেলার ভাব । গুপ্ত ও পালযুগের প্রতিমার সহিত মুসলমান যুগের প্রতিমার তুলনা করিলে বলা যাইতে পারে, শেষোক্ত শ্রেণীর প্রতিমার উপাসকগণ র্তাহীদের পূর্বপুরুষগণের অনুস্থত উন্নত সাধনপথ হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়া পৌত্তলিকের দশায় অধঃপতিত হইয়ছিলেন । মুসলমান যুগে ভাস্কর্য্যের এইপ্রকার অধঃপতনের কারণ কি ? প্রতিমা-নিৰ্ম্মাণ-শিল্পের অধঃপতনের কারণ যে আধ্যাত্মিক অধোগতি এ-কথা বলাই বাহুল্য। তবেই দেখা যাইতেছে হিন্দুর রাষ্ট্রের এবং শিল্পের অধঃপতনের মূলে একই কারণ নিহিত রহিয়াছে। হিন্দুর সৰ্ব্বনাশের কারণ আধ্যাত্মিক অধোগতির স্বচন যখনই হউক, পূর্বেই বলা হইয়াছে ইহার ফলের স্বচনা দেখ যায় খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দী হইতে । এখন জিজ্ঞাস্য, হিন্দুর «È STțąstfālzs ( moral and intellectual ) অধোগতির কারণ কি ? এই গুরুতর প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমরা উপমানপ্রমাণের ( analogy ) আশ্রয় লইব । ইউরোপের ভাস্কয্যের ইতিহাসের একটা যুগে এতদূর না হউক এইপ্রকার অধঃপতন দৃষ্ট হয়। এই অধঃপতনের সূচনা হইয়াছিল খৃষ্টীয় চতুর্থ শতবে এবং ইহার স্থিতি দ্বাদশ শতাব্দ পর্য্যন্ত । এই অধঃপতনের এক কারণ খৃষ্টীয় ধৰ্ম্মের যোগে মূৰ্ত্তিপুজার বিরোধী ইহুদী-সভ্যতার সহিত সংশ্ৰব, এবং আর-এক কারণ ইউরোপের উত্তরাংশ হইতে আগত রোমীয় সাম্রাজ্যের ধ্বংসকারী বর্বরগণের সংসৰ্গ । আমার মনে হয়, বর্বর সংসৰ্গই হিন্দুরও আধ্যাত্মিক অধোগতির কারণ । আমাদের দেশের একদিকে কোল, সাওতাল, ওঁড়াও প্রভৃতি জাতির বাস, আর-একদিকে গারো, মিকির, কাহারী, খাসিয়া প্রভৃতির বাস। এই উভয় শ্রেণীর মাহুষই আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে অধিকদুর অগ্রসর হয় নাই । একসময়ে বোধ হয় এইসকল জাতির মাস্থ্য সংখ্যায় আরও অনেক বেশী ছিল এবং