পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাল ঐ সরসীবালা বসু এক বাসর-ঘরে মোটেই ভিড় ছিল না। কন্যাকৰ্ত্তার বাড়ীতে মেয়ের সংখ্যা ছিল খুব কম ; তা’র উপর ক্রমাগত তিন- , দিন-ব্যাপী দুৰ্য্যোগের জন্যে নিমন্ত্রিতাদের সংখ্যা বাড়তেই পায়নি ; কেবল ক’নের সই সেবাব্রত ক’নের পাশে ব’সে বরের দিকে চেয়ে এক-আধটি ঠাট্ট-তামাসা করছিল ; আর মধ্যে-মধ্যে নীরব রসিকতাকেও ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা কবৃছিল। ক’নে প্রিয়ত্রতা নেহাং ছোটটি নয়, এবয়সে সে অনেকগুলি বাসর জেগে ক’নের জীবনের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে ; সুতরাং আধ-ঘোমটার ভিতর হতে ফিস্ফাস্ ক’রে সইএর রসিকতার জবাৰ দিতে সেও ছাড় ছিল না। আর ওপাড়ার ঠান্‌দি ত একাই একুশে হয়ে বর-কনে আগলে বিপুল দেহখানি নিয়ে সভা সাজিয়ে বসেছিলেন। পাড়াগায়ে হঠু ক'রে নতুন জামাইএর সামনে বেরোনো রীতি নয় ; কাজেই ক’নের মা দরোজার আড়ালে দাড়িয়েই মেয়ে-জামাইকে একটু ঘুমুতে দেবার জন্তে ঠানদিদিকে অনুরোধ করলেন। ঠানদিদি কিন্তু চড়া গলায় ব’লে উঠলেন—এই তো রাত্তির বারোটা বাছ, জামাই তোমার কচি থোকা নয় যে, এক্ষুনি ঝিমুতে লেগেছে। কত ভাগ্যে জন্মের মধ্যে এই বাসরের রাতটি জোটে, এ রাত কি ভগবান ঘুমুবার জন্যে দিযেছেন ? কি বলিস লো নাত নীরা ? ক’নের মা আর উচ্চ-বাচ্য না ক’রে নিজের কাজে চ’লে গেলেন । ঠানদি তখন একটু ন’ড়ে ব’লে বরের চিবুকটি নেড়ে দিয়ে বললেন—এইবার একটি গান গেয়ে শোনাও ত ভাই, মইলে-পরে নেংtং ফিকে লাগছে। সন্ধ্যে-রাত্তিরে বললে, উপোস ক'-র গলা শুকিয়ে কাঠ হ’য়ে আছে, তার পর সর রং, রসগোল্লা, এতে রকম ফল এইসব খেয়ে নিশ্চয় গলা ভিজে উঠেছে, এখন আর কোনো আপত্তি খাটুবে না। বর কেদার বেশ সপ্রতিভভাবেই জবাব দিলে— আমার নেহাৎ সী, রে, গা, মা সাধ। গলা, একি আপনাদের ভালো লাগবে ? ঠানদি বললেন—আমরার মধ্যে তো তোমারই ক’নে আর কনের সই—ওদের মনে এখন যে স্বর বাজ ছে তাতে তোমার স্বর বেম্বরে। হ’লেও চাপা প’ড়ে যাবে,আর আমার কথা ?—এ বয়সে আমার নতুন গলার সব স্বরই ভালো লাগে, ভাই ! কেদারের গান-বাজনার দিকে ঝোক ছিল খুব। তা’র বন্ধু প্রবাল এবিষয়ে বেশ একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছিল ; আর তা’র কাছ হ’তে কেদার একটু-আধটু শিখেও ছিল, আর শেখ বিদ্যার পরিচয় দিতে আগ্রহের তা’র মোটেই অভাব ছিল না, বিশেষ ক’রে পুরুষ-জীবনের মস্ত বড় রঙ্গভূমি এই বাসর-ঘরে জীবনে এই রঙ্গমঞ্চের নায়ক সেজে প্রবেশ করবার সুযোগ এখনকার দিনে পুরুষের ভাগ্যে একবারের বেশী আর মেলে কই ? যাদের একবারের বেশী দু’তিন বার মিলে যায় তা’রা হয়ত সৌভাগ্যবান ; তবে বাসর-ঘরে অসংখ্য নারীগণের মধ্যে ব’সে সঙ্গীতচর্চা অতি-বড় বীর পুরুষের পক্ষেও সহজসাধ্য নয় । যেহেতু বাঙলা দেশের মেয়েদের কোমল করাঙ্গুলি বর বেচারীকে বাজনার দলে ফেলে কান মোচড়াতে খুব বেশী অভ্যস্ত—তা’র ওপর স্থর ভূল হ’লে তো কথাই নেই। তবে কি না কেদার বেশ পরিষ্কার চোখে চেয়ে দখলে যে এ-ক্ষেত্রে রঙ্গমঞ্চ একেবারেই দর্শকশুন্ত—যে দু'টি তরুণী নারী উপস্থিত তাদের প্রাণের মধ্যেই . এখন এমন স্বর বাজছে যা সহজেই কেদারের সঙ্গীতকে ছাপিয়ে বিরাজ কৰ্ত্তে পারবে , আর আছেন বৃদ্ধা ঠানদি ; তিনি তো নিজেই অন্তরোধ