পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8や নিটোল। জীবন-বসন্তের এই সোহাগ-মুধা-সিঞ্চিত দিনগুলির একটি মুহূৰ্ত্তও কি অবহেলা-উপেক্ষায় হারাবার জিনিষ? সমস্ত ইন্দ্রিয় প্রিয়ার মুখখানি দেখবার জন্যে সৰ্ব্বদাই কত ব্যাকুল। রাত্রে কয় ঘণ্টার জন্য মাত্র নিরাল মিলনের অবসর জোটে, সারাদিন ত ঠিক চখ-চর্থীর দশা। দুই পারে দুটি মিলন তৃষ্ণাতুর প্রেমিক হৃদয়— মধ্যে টল-টল বারিরাশি—পরিপূর্ণ দীর্ঘিকার স্তায় বিপুল সংসারের অবস্থান।—ত যে চোখোচোথি হবার অবসর ঘটে সেটা কিছু কম লাভ নয়। এই লোভের কথা মনে রেখেই কেদার আজ শনিবারের এক. বেলার ছুটিতে বন্ধুদের বোটানিকেল গাডেন যাবার অনুরোধ এড়িয়ে চ’লে এসেছে। প্রবাল ঠাট ক’রে বলেছিল— হঠাৎ বাড়ীর ওপর তোমার এতটা অনুরাগ মন্দ লোকে সন্দেহের চোকে দেখতে পারে হে বন্ধু। আর আমার মতো সংলোক যারা—তারাও বলবে যে রাতের ভাগ দিনে ভোগ করবার চেষ্টা করলে রাতের অংশে শূন্ত পড়ে যাবে। কেদার সে পরিহাসটুকু গায়ে মাথোন ; চলে এসেছে দুটো পানের থিলি চাইবার অছিলায় বা মার ভাড়ারের কুঁজে থেকে এক গেলাস ঠাণ্ড জলের ছুতোয় ও এমনি আরও দু-একটা টুকিটাকি কাজে সে মার কাছে এলেই প্রিয়র সঙ্গে অন্ততঃ বার-দুই চোখোচোথি হ’য়ে না গিয়ে ত পারবে না। সেই এক মুহূৰ্ত্তের দৃষ্টি-বিনিময়ে যে কাজ হবে তা বেতার টেলিগ্রাফের চাইতে মোটেই কম না । কিন্তু এসেই দেখতে হ’ল কি, না প্রিয়ার কান্নাভরা চোখ-দু’টি ! মার আহ্বানে তখনি কেদার ফিরে এসে বললে—“হ্যা প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ o [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ম, যদি কুটুমের ধনে এতই লোভ তা হ’লে গরীবের ঘরে সম্বন্ধ না করলেই পারতে। যথন করেইছ, তখন রাতদিন বেচারীর বাপ-মার দেওয়া-থোওয়া নিয়ে খুৎ পাড়বার কী দরকার শুনি ? বড়বউই তোমার কোন বড়-মানুষের ঘরের মেয়ে ? ভাই তো এক দালালের দালালি ক’রে বেড়ায়। বাপের বাড়ী থেকে কত ধনদৌলৎ যে যৌতুক এনেছিলেন তা ত সবাই জানে। আর বীণা যে এত ফটফট করছে তা তোমরা ত দেওয়া-থোওয়ার কিছু কস্থর করনি তবু কি ওর শ্বশুরশাশুড়ীর মন পেয়েছে? সাতজন্মে ত ওকে নিয়ে যায় না, নিয়ে গেলেও যত্নটত্ব কিছু করে ?” কথাগুলার এক অক্ষরও মিথ্যা ছিল না। তা ছাড়া কেদারের রাগের মুখে নয়নতারা কি বীণা কেউ আর টু টা করতে সাহস পেলে না। মধুমতী বললেন—“সত্যি বাছ, তোরা ছোটবেীমাকে রাতদিন অমন খিটমিট করিসূনে। আমিও এসব মোটেই ভালো বাসিনে । কেদার তুই বইগুলো রেখে কিছু খাবি আয়, আজ তাড়াতাড়িতে ভালো ক’রে খাওয়া হয়নি। ছোটবউম, ও-ঘর থেকে বঁটিখানা আর আখ গেপে নিয়ে এস ত, ছাড়িয়ে দিই। প্রিয় শাশুড়ীর হুকুম পালন করতে গেল। বীণা—“বড়বউদি, তুমি যে কাপেটট বুনছিলে একটু দেখাবে চলো না” বলে নয়নতারার সঙ্গে সে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। কেদার বেশ খুলী হ’য়েই বইগুলো রেখে আসতে চলল। এসে মার কাছে সাকার-নিরাকার দুই আহারই জুটুবে এই মধুর ভাবনায় মনটা তার ছলেদুলে উঠতে লাগল। - ( ক্রমশ: )