পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2(tఫి ইহা আমার জীবনে শাস্তি দিয়াছে, মৃত্যুসময়েও শান্তি দান করিবে ।” দারাও উপনিষদে সৰ্ব্বশেষে উপনীত হন এবং চরম শান্তি পান । তত্ত্বজ্ঞানের পিপাসায় তিনি নানা ধৰ্ম্মের গ্রন্থ পাঠ করেন এবং নানা সম্প্রদায়ের সাধুর চরণে শরণ লন। কাশ্মীরবাসী মুল্লা শাহ মুহম্মদ নামক সুফী কবি, লাহোরের বিখ্যাত পীর মিয়ানমিরের শিষ্য মুহম্মদ শাহ লিসামুল্ল, ইহুদী ফকির সরমদূ—ইহারা সকলেই দারার ধৰ্ম্মগুরু ছিলেন । কিন্তু সুফীধৰ্ম্ম, খৃষ্টীয় আদিগ্রন্থ, কিছুই কুমারের চিত্তের পিপাসা মিটাইতে পারিল না। দারা নিজ গ্রন্থ সির-ই-আসরার এক ভূমিকায় লিখিয়াছেন— “আমি মুস-রচিত প্রথম পাচ গ্রন্থ ( ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রথমাংশ ) খৃষ্ট-চরিত (নিউ টেস্টামেণ্ট ), গাথা (ছাম্স্) এবং অন্যান্য অনেক ধৰ্ম্মগ্রন্থ পাঠ করিয়াছি। কিন্তু বেদে, বিশেষতঃ বেদের সার বেদান্ততে অদ্বৈতবাদ [ তৌহিদ ] যেমন পরিষ্কার করিয়া বিবৃত করা হইয়াছে, এমন আর কোথাও পাই নাই ।” - দারা হানিফি সম্প্রদায়ের মুসলমান, সুতরাং বেদান্তের অন্বেষণে তিনি স্বীমত গ্রহণ করিলেন। কিন্তু হিন্দু সন্ন্যাসীদের সহবাসে যখন জানিলেন যে সুফীমত এবং বেদান্তের মধ্যে পার্থক্যটা শুধু কথাগত, তখন তিনি আরএকখানি গ্রন্থ লিখিয়া ঐ দুই ধর্মের সামঞ্জস্য স্থাপন করিলেন । এই ফার্স পুস্তকের নাম “মজমুয়া উলবহারয়েন" অর্থাং দুই সমুদ্রের সঙ্গম । ইহাতে হিন্দু বেদান্তে যে সব শব্দ ব্যবহার হয়, তাহার প্রতিশব্দ সুফী সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত ফাসী শব্যাবলী হইতে দিয়া ব্যাখ্যা করা হইয়াছে। বাবা লালদাস নামক একজন হিন্দু যোগীর সেই সময়ে বড় নাম ছিল। কুমার দারা তাহার চরণে উপনীত হইয়া ধৰ্ম্মপ্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেন—আত্মার স্বরূপ কি ? পরলোক কি ? কিসে সদগতি হয় ? চিত্তশুদ্ধির উপায় কি ? ইত্যাদি । যোগী এইসব প্রশ্নের যে উত্তর দিলেন তাহা কুমারের অম্লচর, শাহজাহানের সভার মুন্সী দক্ষ ফারসী লেখক চন্দ্রভাণ নামক ব্রাহ্মণ, ফরাসীতে লিপিবদ্ধ করিলেন। গ্রন্থের নাম হইল “প্রশ্নোত্তর অর্থাৎ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড দারাশুকো ও বাবা লালের সওয়াল-জবাব।” এই তিন গ্রন্থেরই নকল খুদাবখশ পুস্তকালয়ে আছে। কিন্তু দারা ইসলামধৰ্ম্ম হইতে কখনও ভ্রষ্ট হন নাই । তিনি ১৬৪০ খৃষ্টাবে সফিনং-উল-আউলিয়া নামক এক ফার্সী গ্রন্থ লিখিয়া তাহাতে মুহম্মদ হইতে আরম্ভ করিয়া র্তাহার নিজ সময় পৰ্য্যন্ত সকল ইসলামীয় সাধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী দেন, এবং তাহারা সকলেই যে একই ঈশ্বর-প্রেমিক পরিবারের অন্তর্গত তাহ প্রমাণ করেন। তিন বৎসর পরে সকিনৎ-উল-আউলিয়াতে সাধু মিয়ান মীরের জীবনকাহিনী বর্ণনা করেন। দার। এই সাধুর সম্প্রদায়ে শিয়ারূপে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাহার চারি বৎসর পরে আরব ও পারস্য দেশীয় সুফীধৰ্ম্মের এক সরল ব্যাখ্যান "রসাল-এ-হকৃত্যুমা নামে রচনা করেন। এই শেষোক্ত গ্রন্থখানির এবং সফিনতের ভূমিকার ইংরাজীতে মৰ্ম্মাহুবাদ vশ্ৰীশচন্দ্র বস্তু রায় বাহাদুর এলাহাবাদে ১৯১২ সালে প্রকাশিত করেন। দারার ভগিনী জহানারা ও ফার্সী ভাষায় “মুনীসূ-উরআবুওয়া” নামে শেখ মুইন্‌উদ্দীন চিশতীর একখানি ছোট জীবনী লেখেন, এবং এই চিশতী সম্প্রদায়ে দীক্ষিত৷ হন । নিজ গ্রন্থে তিনি দারাকে নিজের ধৰ্ম্ম গুরু বলিয়৷ বর্ণনা করিয়াছেন। এইসকল গ্রন্থপাঠে স্পষ্টই বুঝা যায় যে প্রকৃতপক্ষে দ্বারা বৈদান্তিক ছিলেন, কখনও হিন্দু বা পৌত্তলিক হন নাই। ১৬৫৭ খৃষ্টাব্দে যখন পিতৃসিংহাসন লইয়। যুদ্ধ বাধিল, তখন আওরংজীব গোড়া মুসলমান জনতা ও সৈন্যদলকে নিজপক্ষে আনিবার জন্য ঘোষণা করিয়া দিলেন যে দারা বিধৰ্ম্মী অর্থাৎ কাফির হইয়াছে। কিন্তু অনুসন্ধান করিয়া দেখিলে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলিয়া প্রমাণ হয় । আওরংজীবের আজ্ঞায় রচিত এবং র্তাহার দ্বারা সংশোধিত সরকারী ফার্সী ইতিহাস “আলমগীরনামা”তে বলা হইয়াছে যে দারা ইসলাম হইতে ভ্ৰষ্ট হয়েছিলেন, কারণ (১) তিনি ব্রাহ্মণ যোগী ও সন্ন্যাসীর সহিত মিশিতেন, তাহীদের ধৰ্ম্ম-উপদেষ্ট ও তত্ত্বজ্ঞ‘বলিয়া গণ্য করিতেন এবং বেদ-( অর্থাৎ বেদান্ত ) কে দৈব গ্রন্থ মনে করিয়া তাহার চর্চা ও অনুবাদে দিন যাপন করিতেন।