পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—দাঙ্গায় গবন্মে ন্টের শক্তিহীনতা, বুদ্ধিহীনতা, না অবহেলা ? ১১৩ এবং ভিন্নমতাবলম্বীকে আঘাত ও বধ করিবার ইচ্ছার আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু তাহারা ভ্রান্ত হইলেও কোন কোন বিষয়ে তাহাদিগকে আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলিয়া মনে করিতে আমরা প্রস্তুত আছি । তাহাদের যে মতগুলি আমরা ভ্রান্ত মনে করি, তাহাতে তাহাদের বিশ্বাস যেরূপ দৃঢ়, আমরা আমাদের যে মতগুলি সত্য বলিয়া মনে করি, তাহাতে আমাদের বিশ্বাস হয়ত তত দৃঢ় নয় । তাহারা নিজের মত ও বিশ্বাসের খাতিরে যে অন্যের প্রাণবধ পৰ্য্যন্ত করিতে পারে, ইহা সাতিশয় নিন্দনীয়। কিন্তু তাহাদের কেহ কেহ নিজেদের বিশ্বাসের প্রেরণায় নিজেদের প্রাণকে পর্য্যস্ত সঙ্কটাপন্ন করিতে প্রস্তুত হয় ; আমরা অনেকেই তাহ পারি না । স্বীকার করিতে হইবে, যে, এই বিষয়ে শিক্ষিত ও ভদ্র আমরা অনেকে তাঙ্গাদের চেয়ে নিক্লষ্ট । যাহা হউক, মোটের উপর কোন শ্রেণীর লোক শ্রেষ্ঠ ও কোন শ্রেণীর লোক নিকৃষ্ট, তাহার বিচার না করিয়া ইহা অনায়াসেই বলিতে পারি, যে, হিংস্র প্রকৃতির লোকদিগকে ও নিরস্ত করিবার অন্য সব উপায় অবলম্বন করা হইয়া গেলে ও তাহাতে ফল না হইলে তবে গুলি চালান উচিত। অবশ্য মারপিট ও উত্তেজনার সময় পুলিসের পক্ষে ও মাথা ঠিক রাখা কঠিন, ইহা স্বীকার করি। কিন্তু মাথা ঠিক রাখিয়া কাজ করাই যে তাহাদের কর্তব্য, ইহাও ভুলিলে চলিবে না। গুলি চালানর একান্তবিরোধী দলের লোক ও আমরা নহি । গোড়াতেই অশান্তি ও অরাজকতা থামাইবার যথেষ্ট চেষ্টা না হওয়ায়, অন্ততঃ পক্ষে উচ্ছ স্থল অবস্থা শীঘ্ৰ শেষ না ঠ ৪য়ায়, লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার নষ্ট হইয়াছে ; ডাক ও টেলিগ্রাম প্রায় বন্ধ হওয়ায় কলিকাতার অধিকাংশ ভারতীয় লোককে কলিকাতার বাহিরের লোকদের সহিতে যোগশূন্ত অবস্থায় বাস করিতে হইয়াছে ; বিস্তর নিরপরাধ লোক আহত ও হত হইয়াছে। এরূপ অবস্থায় কতকগুলি লোকের জখম ও খুন হওয়া যদি অনিবাৰ্য্যই ছিল, তাহ হইলে, মাগবী দল বাধিয়া অন্যের ক্ষতি ও প্রাণবধ, করিতে উদ্যত হইয়াছিল, নিরপরাধ লোকদের পরিবৰ্ত্তে, গিড়িাতেই গুলিবর্ষণে তাহদের প্রাণ গেলে যে আপেক্ষিক অবিচার বেশী হইত, তাহা আমরা মনে করি না। বরং মনে করি, তাহাতে আপেক্ষিক সুবিচার হইত ও ফল ভাল হইত। সব বিষয়ে ঠিক খবর পাওয়া কঠিন । কিন্তু খবরের কাগজে যাহা পড়িয়াছি, তাহাতে মনে হয়, একটি বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সুবিবেচনার পরিচয় দেন নাই । দেখা গিয়াছে যে, পুলিস ভারতবর্ষের বৃহত্তম শহরে, বঙ্গের রাজধানীতে, ভারতবর্যের ভূতপূৰ্ব্ব রাজধানীতে, মানুষের প্রাণ ও সম্পত্তি রক্ষা করিতে পারে না । এরূপ অবস্থায় বেসরকারী স্বেচ্ছারক্ষীদের দল গঠনে উৎসাহ দেওয়া, কিংবা গঠিত তদ্রুপ দলের কার্য্যে উৎসাহ দেওয়া ও তাহাদের সাহায্য লওয়া গবন্মেণ্টের উচিত ছিল । কিন্তু তাহা করা হয় নাই। বরং প্রকারাস্তরে তাহাদিগকে নিরুৎসাহ করিবার ভাবই দেখা যায়। অবশ্য, বিদেশী গবন্মেণ্টই যে আমাদিগকে রক্ষা করিতেছেন, আমরা যে নিজে কিছুই করিতে পারি না, এইরূপ বিশ্বাস আমাদের ও জগদ্বাসীর মনে জন্মাইবার স্বাভাবিক একটা প্রবৃত্তি বিদেশী আমলাগণের আছে। কিন্তু এই প্রবৃত্তি চরিতার্থ করিবার জন্য মানুষের ধনপ্রাণ সঙ্কটাপন্ন ও বিনষ্ট হইতে দেওয়া উচিত নহে। দাঙ্গায় গবন্মেণ্টের শক্তিহীনতা, বুদ্ধিহীনতা, না অবহেলা ? এত বড় সহরে অলিগলিতে গুপ্ত ঘাতকেরা যাহ। কারতেছে, শীঘ্র ও সম্পূর্ণরূপে তাহা নিবারণ করা অসম্ভব বা কঠিন হইতে পারে; কিন্তু এমন কিছু কিছু কাজ আছে, যাহ! গবন্মেণ্টের করা উচিত ছিল, না-করায় তাহার শক্তিমত্ত, বুদ্ধিমত্তা বা উদ্যোগিতায় লোকের সন্দেহ হইতেছে । একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি— কলিকাতায় রাজাবাজারে একখানা মোটর ডাক গাড়ীর চালক তথাকার কোন কোন মুসলমানের দ্বারা হত হইয়াছে। আমহাষ্ট ষ্ট্রীট ডাকঘর আক্রমণের চেষ্টাও একাধিক বার হইয়াছে। হয়ত আরো কোথাও এরূপ আক্রমণচেষ্ট হইয়া থাকিবে, যদিও তাহা আমরা জানি না। কিন্তু তাহার জন্ত উত্তর কলিকাতার সমুদয়