পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—দাঙ্গায় গবষ্মেণ্টের শক্তিহীনতা, বুদ্ধিহীনতা, না অবহেলা ? ২১৫ রাজনৈতিক বন্দীদিগকে খালাস দেওয়া হউক, অমনি সেই সময়ে কোথা হইতে বিপ্লবোত্তেজক রক্তবর্ণ পত্রী বা পুস্তিক বিতরিত হইতে লাগিল, এবং প্রমাণ হইয়া গেল, যে, দেশের অবস্থা তখনও দমন-আইন উঠাইবার বা রাজনৈতিক বন্দীদের খালাস দিবার মত ঠাণ্ড হয় নাই । দেশের লোক সভা করিয়া চাহিল, যে, সুভাষ বস্থ প্রভৃতি রাজনৈতিক বন্দীদিগকে খালাস দেওয়া হউক। তাহার পরেই দক্ষিণেশ্বরে বোমা ও বিপ্লবকারী আবিষ্কৃত হইয়া প্রমাণ করিল, যে, দেশে তখনও বিপ্লববাদ থাকায় রাজনৈতিক বন্দীদিগকে খালাস দেওয়া যাইতে পারে না। ইত্যাদি। এ সকল স্থলে ঘটনাবলীর যে যোগাযোগ, তাহাদের ষে প্রায় যুগপৎ আবির্ভাব, তাহা আকস্মিক, কিম্বা কোন কারণে ঘটিলে কি কারণে ঘটে, বলা যায় না। ইহাতে মানুষের কোন কারসাজি আছে বলা কঠিন, নিশ্চয়ই নাই বলাও অসম্ভব। যদি প্রবল ও প্রভুত্ববিশিষ্ট পক্ষের স্বার্থরক্ষার অহুকুল ও স্ববিধাজনক ঘটনা যখন যেমন দরকার তখন তেমনিটি বার বার ঘটে, তাহা হইলে তাহাতে মামুষের কারসাজি আছে বলিয়া সন্দেহ হয়। এরূপ সন্দেহ অমূলক হইতে পারে, কিন্তু অস্বাভাবিক নহে। কলিকাতার দাঙ্গণহাঙ্গামার অব্যবহিত কারণ যাহা তাহা আমরা খবরের কাগজে পড়িয়াছি । কিন্তু উহা যে এতটা ব্যাপ্তিলাভ করিল ও গুরুতর আকার ধারণ করিল কেন ও কি প্রকারে, তাহা কেহই বলিতে পারেন না। আমাদের অর্থাৎ দেশের অনেক লোকের ইহার জন্য “য়িত্ব অস্বীকার করা যায় না। অনেকে সাম্প্রদায়িক বিষয়ে বক্তৃতা, তর্কবিতর্ক ও কাগজে লেখালেখি এমনভাবে করিয়াছে, ও করিতেছে যাহাতে সাম্প্রদায়িক সদ্ভাবের পরিবর্তে অসদ্ভাব, রেষারেষি ও বিদ্বেষই বাড়িয়াছে ও বাড়িতেছে । কিন্তু ইহা কলিকাতায় আবদ্ধ মহে, এবং ইহা আজ নূতনও নহে। এই জন্য কলিকাতার অরাজকতাটা ঠিক বিনামেঘে বজ্রাঘাত না হইলেও, মেঘের বিস্তৃতি ও ঘনঘটা অপেক্ষ বজের নিনাদ ও প্রলয়তাগুব • অতিরিক্ত রূপ বেশী মনে হইতেছে। যাহা হউক, এখন অন্য কথা বলি । দেশের শিক্ষিত রাজনৈতিকৰুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা চান । স্বরাজ এবং দেশ তাহার জন্য অনেকটা প্রস্তুত হইয়াছে মনে করেন । বিদেশী আমলাতন্ত্র ও র্তাহাদের সমর্থক বেসরকারী ইংরেজরা তাহা স্বীকার করেন না। তাহার স্বরাজে বহু বিলম্ব ও বিঘ্ন দেখেন। একটা অন্তরায় দেখেন, আমাদের হিন্দু মুসলমানের মারামারি কাটাকটে ! র্তাহারা বলেন, যে, ইহা নিবারণের জন্য তৃতীয় পক্ষ তাহাদের থাকা উচিত ;–যদিও তাহদের বিদ্যমানতা সত্ত্বেও মারামারি কাটাকাটি না কমিয়া কেন বাড়িয়াই চলিতেছে, তাহার কোন সদুত্তর তাহারা দিতে পারেন না । যাহা হউক, আমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি যত করিব, বিদেশী প্ৰভুদের যুক্তি ততই প্রবল হইবে, এইরূপ তাহারা ও তাহদের পক্ষাবলম্বী অন্য পাশ্চাত্যেরা মনে করেন। অধিকন্তু, এখন একজন নূতন বড়লাট সবে-মাত্র দেশে পদার্পণ করিয়া কাৰ্য্যভার লইতেছেন। র্তাহার মনে ভারতবর্ষ সম্বন্ধে প্রথম যে ধারণা হইবে, তাহাতে র্তাহাকে, ভারতের স্বরাজপ্রাপ্তি শীঘ্র বা বিলম্বে হওয়া উচিত, তদ্বিষয়ে একটা মত গঠনে প্রবৃত্ত করিবে। র্তাহার শাসনকালের গোড়াতেই এত বড় একটা অশান্তি ও অরাজকতার দৃষ্টান্ত ঘটায় ভারতীয়দিগের আত্মশাসন-ক্ষমতার অভাব বা নূ্যনত যে প্রমাণিত হইতেছে, বিদেশী আমলাতন্ত্রের মত তিনিও তাহ অবশ্যই স্বভাবতই বিশ্বাস করিবেন। এখন কথা হইতেছে এই, যে, এই বিশ্বাস কি সত্য ? এবং ইহা জন্মাইবার জন্য কি বিধাতা, বা জগৎ-কারণ, বা বিশ্বনিয়ম, বা ঘটনাচক্র দাঙ্গ ঘটাইলেন, না ইহার মধ্যে মানুষের কারসাজিও কিছু আছে ? অন্য দিকে স্মৰ্ত্তব্য ও বিভাব্য, এই, যে, ব্যবস্থাপক সভাগুলির নূতন প্রতিনিধি নির্বাচন এবং তদুপলক্ষে স্বরাজ্য-লাভে প্রবলতম-ইচ্ছাযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপক হইবার সময় ঘনাইয়া আসিতেছে ; ৬ই হইতে ১৩ই এপ্রিল পৰ্য্যস্ত "জাতীয় সপ্তাহ” নামে অভিহিত সাতটি দিনে শীঘ্র স্বরাজ্যলাভ-কল্পে হিন্দুমুসলমানের মিলন সাধন ও অন্যান্য জাতিগঠনমূলক কাৰ্য্য করিবার ব্যবস্থা ছিল ; এবং অনেকগুলি রাজনৈতিক দলকে সম্মিলিত করিয়া একটি জাতীয় দল গঠনপূর্বক স্বরাজ্যলাভ-চেষ্টা সংহত করিবার প্রশ্বাস বোম্বাইয়ে হইতেছিল। কলিকাতার দাঙ্গা