পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—এংলো-ইণ্ডিয়ানদিগের স্ববুদ্ধি ২২৭ ইহাও বিবেচ্য, যে, ব্রিটিশ ভারতে আসিয়া যদি কোন দেশী রাজার প্রজ। নরহত্যা করে, ও যদি সেই অপরাধে তাহার ফাসী হয়, এবং এরূপ সন্দেহ করিবার কারণ থাকে, যে, উক্ত রাজারও ইহার সহিত যোগ ছিল, তাহা হইলে কি তিনি রাজা বলিয়াই অপরাধের সহিত র্তাহার সম্পর্ক আছে কি না সেবিষয়ে কোন অনুসন্ধানও হইবে না ? অন্য দিকে ইহাও জিজ্ঞাসা করিতে পারা যায়, যে, যদি ভারতবর্ষের বাহিরের কোন বাস্তবিক স্বাধীন দেশের রাজার এদেশী কোন লোককে খুন করাইবার সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলিয়া ভারত সরকার সন্দেহ করিতেন, তাহা হইলে গবন্মেণ্ট কি করিতেন বা করিতে পারিতেন ? অবশ্য ইহার উত্তরে বক্তব্য এই, যে, ভারতীয় রাজারা ত বাস্তবিক স্বাধীন নহেন । তাহারা যে নিজনিজ গদীতে বসিয়া আছেন, তাহাও ব্রিটিশ বেয়নেটের জোরে । সুতরাং স্বাধীন নৃপতিদের সহিত র্তাহাদের তুলনা করিয়া কোন কথা বলা বৃথা । মহারাজা হোল্কারকে আমরা বাওলার হত্যার সহিত নিশ্চয়ই জড়িত বলিয়া মনে করি না। কিন্তু ইহা মনে করা অসঙ্গত নহে, যে, মমতাজকে, জোর করিয়াও, ইন্দোরে অনিবার হুকুম হয়ত মহারাজের ছিল ; কিন্তু কেহ তাহাতে বাধা দিলে খুন পৰ্য্যন্ত করিতে হইবে, এরূপ হুকুম থাকা না-থাকা দুই-ই সম্ভব। এমনও হইতে পারে, যে, কতকগুলি লোক মহারাজকে খুলী করিবার জন্য মমতাজকে বলপূৰ্ব্বক অপহরণ করিতে আসিয়া উদেশ্ব ব্যর্থ হয় দেখিয়া খুন পৰ্য্যস্ত করিয়া বসিয়াছে। প্রকৃত কথা যাহাই হউক, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই, যে, দাম্পত্য-সম্বন্ধে মহারাজের নিষ্ঠ থাকিলে এবং চরিত্রে সংযম থাকিলে, এই-সব গৰ্হিত ও লজ্জাকর ব্যাপার ঘটিত না। তাহার পদত্যাগ বস্তুতঃ পদচ্যুতি। অসংযত চরিত্রের রাজাদের পদচ্যুতির দণ্ড কোন আইনে থাকু বা না থাকৃ, হোল্কারকে যে নিজের কৰ্ম্মফল ভুগিতে হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। ইহাতে আমরা দুঃখিত। কারণ, শিক্ষার উন্নতি সাধন, বিদ্যোৎসাহিতা, প্রজাদিগকে কোনকোন রাষ্ট্রীয় অধিকারদান, শিল্প-বাণিজ্যের উৎসাহ-দান, সমাজসংস্কারার্থ কোন-কোন আইন-প্রণয়ন প্রভৃতি কারণে মহারাজা লোকপ্রিয়ও ছিলেন । র্তাহার ভাগ্যে যাহা ঘটিল, তাহা হইতে অন্য মহারাজারা সাবধান হইয়া চরিত্র সংশোধন করিলে তাহদের ও দেশের মঙ্গল হইবে । এংলো-ইণ্ডিয়ানদিগের সুবুদ্ধি লক্ষ্মেীর লী-মার্টিনিয়ার কলেজের বাৎসরিক পুরস্কার বিতরণের সময় আগ্রা ও অযোধার গবর্ণর স্যার উইলিয়ম ম্যারিস এক বক্তৃতা দেন । তাহাতে তিনি বলেন, যে, তিনি ভারতবর্ষে প্রায় ত্রিশ বৎসর কাল আছেন এবং এই দীর্ঘকাল এ-দেশে অবস্থান-কালে তিনি এক বিষয়ে বিশেষ পরিবর্তন দেখিতেছেন। পূৰ্ব্বে এংলো-ইণ্ডিয়ান ও এদেশের অধিবাসী ইংরেজগণ নিজেদের ভারতের অপরাপর লোক হইতে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন এবং গবর্ণমেণ্টের উপর তাহাদের বিশেষ কতকগুলি দাবী আছে বলিয়া মনে করিত। এখন তাহারা ক্রমশঃ উপলব্ধি করিতেছে যে, ভারতবর্ষের রাষ্ট্রে তাহদের যে পদমৰ্য্যাদ, তাহা শুধু তাহাদের নিজেদের গুণাগুণ ও কৰ্ম্মক্ষমতার উপরেই নির্ভর করে এবং এই নব-উপলব্ধ জ্ঞানের আলোকে তাহার বিশেষ করিয়া নিজেদের উন্নতির জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। স্যার উইলিয়ম্ যাহা বলিয়াছেন, তাহা যদি সত্য হয়, তাহ হইলে স্বথের বিষয় । ভারতে নানা জাতির বাস । তাহাঁদের নানা প্রকার ধৰ্ম্মমত, আচার, ব্যবহার ও গুণাগুণ । ইহাদের মধ্যে ফিরিঙ্গী ও ইংরেজও যদি জনকতক বসবাস করে, তাহা হইলে আপত্তি করিবার কিছু নাই। কিন্তু ইহারা ইংরেজ-শাসনের আরম্ভ হইতেই রাজার জা’তের সহিত রক্ত-সম্পর্কের গুণে নিজেদের প্রাপ্যের অধিক পাইয়া আসিয়াছে । আজ যদিও স্যার উইলিয়ম ম্যারিস বলিতেছেন, যে, ফিরিঙ্গী ও ইংরেজগণ এখন সকলের সহিত সমান অধিকারে থাকিতে প্রস্তুত হইতেছে, তথাপি আজই অনুসন্ধান করিলে দেখা যাইবে, যে, সহস্ৰ-সহস্র উপরোক্তজাতীয় লোক শুধু ভাষা ও জীবনযাত্র-প্রণালীর দোহাই দিয়া যোগ্যতার তুলনায় অধিক বেতন ভোগ করিতেছে। স্যার উইলিয়ম যাহা বলিয়াছেন, তাহা ভবিষ্যৎ-সম্বন্ধে থাটিতে পারে, কিন্তু