পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] দেশহিত করিতে চান ও পারেন, তাহাদের সহিত আমাদের কোনই ঝগড়া নাই। কিন্তু এইভাবে সহযোগিতা এবং মধ্যে মধ্যে গবন্মেন্টের সমালোচনা ও বিরোধিতা করিয়া যে ইংরেজকে ভাগ্য-বিধাতার পদ হইতে সরান যাইবে না, ইহাও আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস। ইহাও আমরা মনে করি, যে, ইংরেজের আসন টলাইতে হইলে খুব প্রবল সম্মিলিত চেষ্টার প্রয়োজন। এরূপ চেষ্টা একবার দুবার দশবার ব্যর্থ হইলেও আবার করিতে হইবে। তাহ ভিন্ন উপায় নাই। ইহাও মনে রাখিতে হইবে, যে, ইংরেজ যখন যখন দেশের কোন দলের মারফৎ ভারতবর্ষকে কিছু ইনাম, বখশিশ বা বর দিয়াছে, তখন প্রবলতর অন্য দলের অস্তিত্বের জন্যই তাহা করিয়াছে, এবং তাহার উদ্দেশ্য পূৰ্ব্বোক্ত দলকে হাত করা । এই সকল কারণে আমরা এরূপ একটি প্রবল রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব আবখ্যক মনে করি, যাহাদের প্রধান কাজ ও উদ্দেশ্য হইবে বিদেশীদিগকে সৰ্ব্বেসৰ্ব্বা থাকিতে না-দেওয়া। এই কারণে স্বরাজীদের শত দোষ সত্ত্বেও আমাদের সহানুভূতি তাহাদের মূল নীতি ও লক্ষ্যের সহিত অধিক আছে, ইহা গোপন রাখা অনাবশ্বক মনে করি । ব্যবস্থাপক সভায় প্রবেশ করিলে সভ্যদের ঐ নীতি অবলম্বন করা অন্য নীতি অপেক্ষ আমরা অধিক বাঞ্ছনীয় মনে করি। কিন্তু ইহা বলাও দরকার মনে করি, যে, ব্যবস্থাপক সভায় না-যাওয়াই আমরা শ্রেষ্ঠনীতি মনে করি। ব্যবস্থাপক সভায় গিয়া সভ্যের কাজ করিবার নিমিত্ত যত সময় দিতে হয় ও পরিশ্রম করিতে হয়, সেই সময় ও শক্তি স্বাধীনভাবে দেশহিতসাধনে নিয়োগ করিলে স্বফল অধিক হইতে পারে বলিয়া আমরা মনে করি । - যাহারা পরস্পরের সঙ্গে “ক্লীন ফাইট্‌” (ইহা পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয় ও মিস্টার জিন্নার ব্যবহৃত কথা ) করিবার জন্য অস্ত্র শানাইতেছেন, তাহারা তাহাদের সমুদয় যুদ্ধোৎসাহ, রণদক্ষতা ও সামরিক শক্তি আমলাতন্ত্রের অব্যাহত শক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করিলে দেশের হিত বেশী হইবে, এবং অধিকন্তু তাহারা এই যুদ্ধটা স্বরাজীদের চেয়ে বেশী উৎসাহ ও উদ্যোগিতার সহিত বিবিধ প্রসঙ্গ—রাজনৈতিক দলের কাগজ ২৩১ চালাইতে পারিলে দেশের লোকদের হৃদয়সিংহাসন হইতে স্বরাজীদিগকে চু্যত করিয়া নিজেরা তথায় অধিরূঢ়ও হইতে পারিবেন। “ক্লীন ফাইট” বলিতে এরূপ যুদ্ধ বুঝায়, যাহাতে যাহার জন্য যুদ্ধ সে বিষয়টার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় এবং শত্রুপক্ষে আর লড়িবার ইচ্ছা বা লড়িবার লোক বাকী থাকে না । - রাজনৈতিক দলের কাগজ ভারতবর্ষে বাস্তবিক বলিতে গেলে রাজনৈতিক দল দুটি ; এক বিদেশী প্রভুদের দল, দ্বিতীয় দেশী অধীন লোকদের দল। দ্বিতীয় দলের উপদলগুলির মধ্যে যে মতভেদ, তাহা অবাস্তর । কিন্তু তাহা হইলেও দেখা যায়, যে, উপদলগুলির মতের, কাৰ্য্যপ্রণালীর ও তাহাদের নেতাদের ব্যক্তিগত অনেক কথার আলোচনা উপদলসমূহের মুখপত্র খবরের কাগজগুলিতে যতটা এবং যত চোখে পড়িবার মত উৎকৃষ্ট জায়গা পায়, প্রভূদের দলের সমালোচনা অনেক সময় তাহা পায় না। আমরা নিজেদের মধ্যে যত কথা কাটাকাটি করিয়া ও পরম্পরের দোষোদঘাটন করিয়া ক্লান্ত হই ও প্রভুদের আমোদ উপভোগের ব্যবস্থা করিয়া দি, প্ৰভুদের কাগজগুলি পরস্পরের দোষোদঘাটনে দিনের পর দিন তেমন করিয়া ব্যাপৃত থাকে না। আমাদের উপদলগুলির পরম্পরের সমালোচনার কোন আবশ্যক নাই বা তাহ সম্পূর্ণ অকৰ্ত্তব্য, বলিতেছি না ; কিন্তু তাহা মাত্রা রাখিয়া সংযম ও মিতভাষিতার সহিত করা উচিত। সৰ্ব্বদাই মনে রাখা উচিত, আমরা দেশহিতার্থে সাধারণ যুদ্ধে লিপ্ত সহযোদ্ধা । আমরা স্বয়ং সমগ্র জাতির স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্প, কৃষি, সাহিত্য, ধৰ্ম্ম এবং আর্থিক, সামাজিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য কি করিতে পারি, তাহার আলোচনার ও তাহার উপায় ও প্রণালী আবিষ্কারে আমাদের সকলের চেয়ে বেশী মন দেওয়া উচিত। তৎপরে গবন্মেন্টের কাজ ও অকাজ, এবং সরকারী কৰ্ম্মচারীদের কৃতিত্ব ও ক্রটি আলোচিত হইতে পারে। তাহার পর