পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8● প্রবাসী—বৈশাখ, ১০০৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আবেদন বলিল, “লেখাপড়া ত যারা চাকরী করে তা’র সহিত সাদৃত ও সহানুভূতি অধিক তাহার পক্ষে সে জাতীয় করে ; আমি কেন লেখাপড়া করতে যাব ?” জীবের সহিত কারবার করাই শ্রেয়। কাক তাহাকে কানে ধরিয়া হেয়ার স্কুলে ভৰ্ত্তি করিয়া দিলেন । অতঃপর কিছুকাল আবেদন স্কুলের সহপাঠিদিগের নিকট প্রহার ও মাষ্টারদের কাছে তাড়া খাইয়া সন্তানদেবতা ভাব কথঞ্চিং ভুলিবার পথে অগ্রসর হইতে লাগিল । কিন্তু শিশুকালে যে ভাব মনের উপর গভীর হইয়া একবার বসিয়া যায় তাহ সম্পূর্ণরূপে অপস্থত কোন কালেও হয় না । আবেদন আগের দ্যায় আর আজকাল সকল কথায় কথা বলিত না বটে, কিন্তু যখন কথা বলিত তখন তাহার প্রতি অক্ষরে বড়লাট ও তারকেশ্ববের মোহস্তমিশ্রিত একটা ভাব পরিষ্কার ফুটিয়া উঠিত। এইরূপে আবেদন স্কুলজীবন অতিবাহন করিয়া সংসারযাত্রার সেই চৌরাস্তায় আসিয়া উপস্থিত হইল যেখানে দাড়াইয়৷ মানুষ স্থির করে সে উকিল, মোক্তার, ডাক্তার, হাতুড়ে, লেখক, নিষ্কৰ্ম্ম, ইঞ্জিনিয়ার, ওভারসিয়ার, ধৰ্ম্মপ্রচারক, সেয়ারের দালাল, প্রফেসর, আই সি-এস, মোটর ড্রাইভার, অর্ডারসাপ্লায়ার, স্বরাজিষ্ট ইত্যাদি নানা প্রকার জীবের মধ্যে কোন যুথের অনুসরণ করিবে । কাক বলিলেন, আবেদনের যেরকম উৎকৃষ্ট-ধরণের মগজ, তাহাতে তাহার লেখাপড়ার দিকে না যাইয়া কোনো হাতের কাজে মনোনিবেশ করা উচিত। পিসিমা বলিলেন, “ও এল্‌-এ পাশ দিয়ে ওকালতি করুক। ও পরে ঠিক ডেপুটি হবেই হবে।” জ্যাঠা বলিলেন, “দিদি তুমি যা বোঝ না সে-বিষয়ে কথা বলে কেন ? ওরকম ক’রে ডেপুটি মহাভারতে নকুল-সহদেব হয়েছিল শুনেছি, আজকাল ওরকম হয় না। দেখ, আবেদনকে তা’র চেয়ে ডাক্তারি পড়াও।” কাকার অপত্তি সত্ত্বেও আবেদন ডাক্তারী পড়িবে ঠিক করিয়া আই-এস্-সি, পড়িতে আরম্ভ করিল। তবে দুই বৎসর পরে যখন তা’র নাম পাশ-লিষ্টে রেজিষ্টারের সহির অতি নিকটেই দেখা গেল তখন সকলে তাহার ডাক্তার হওয়ার আশা ত্যাগ করিয়া তাহাকে ভেটেরিনারী কলেজে গরু-ঘোড়ার চিকিৎসক হইতে পাঠাইলেন। কাকা বলিলেন, যাহার যে-জাতীয় জীবের |o আবেদনের মাতামহ বড় পাখোয়াজী ও গাইয়ে ছিলেন। আবেদনের জীবনে বংশানুক্রমিতার জন্য সঙ্গীত ও নিজ প্রতিষ্ঠালন্ধগুণে হোমিওপ্যাথি, এই দুইটি জিনিসের বিশেষ প্রভাব তাহার বাল্যকাল হইতেই দৃষ্ট হয়। জননবিজ্ঞানে বলে যে বংশানুক্রমিক গুণাগুণ এক পুরুষ ছাড়িয়া তৃতীয় পুরুষেই অধিক প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে এই ধারণার নিভুলত প্রমাণ হইয়াছিল। অতি বাল্যকাল হইতেই আবেদন সকল আবদার ও ক্ৰন্দন স্বর করিয়া করিত। যথা সে ভাত খাইবার সময় হইলে চীৎকার করিত > + 1 So I == A | | 1 || | | | | | র * | * গ | র গ | র | আ মি ভ। ত খ৷ ভাহার পিতার মৃত্যুর কিছুকাল পূৰ্ব্বে সে “ওরে নীল আকাশের পার্থী ; আমার খাচায় আসবি না কি” বলিয়া একটা গান বাধিয়া সকাল হইতে রাত্রি অবধি গাহিত । এই গানের স্বরটাকে রামকেলি-মিশ্রিত বেহাগ বলিলে ভুল হইবে না। তাহার এত অল্প বয়সে এরূপ স্বরসিদ্ধত দেখিয়া সকলে অবাক হইয়া গিয়াছিল। অতি অল্প বয়সে একবার ভুল করিয়া হোমিওপ্যাথিক গ্লো-বিউল এক মুঠ খাইবার পর হইতেই হোমিওপ্যাথির প্রতি আবেদনের একটা বিশেষ ভালবাসার স্বচনা হয়। এই ভাব ক্রমে বাড়িয়া তাহাকে বাল্যে গোড় হোমিওপ্যাথি-ভক্ত করিয়া তুলে। এমন-কি, সে হাতপ কোথাও কাটিয়া-কুটিয়া গেলে কদাপি আর্ণিকা ছাড়িয়া টিংচার আইয়োডিন ক্ষত স্থানে লাগাইতে দিত না । স্কুলে পাঠের সময়েও সে পাঠ্য ও অপাঠ্য জাতীয় সকল পুস্তক ফেলিয়া চিলে কোঠায় বসিয়া “সরল হোমিওপ্যাথিক শিক্ষায়" মনোনিবেশ করিত। আবেদন যে সময়ে ভেটরিনারি কলেজে ভর্তি হইল সে-সময়ে তাহার হোমিওপ্যাথি-প্রতি বিশেষ গভীরতা লাভ করিয়াছিল ।