পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૬૭૨ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড যাইত গভীর নিশীথে চন্দ্রিকাচকিত তিনতালার ছাদে নিদ্রাহীন আবেদনের আবেগক্লিষ্ট কণ্ঠের বেহাগ-নিনাদে । সেই কম্পমান কড়ি-মধ্যমের ঢেউ জ্যোৎস্নাসিক্ত পবনহিল্লোলে বাহিত হইয়া যখন অৰ্দ্ধস্নগ্ধ প্রতিবেশীদিগের কর্ণকুহরে প্রবেশ করিত, তখন তাহারা যাহা বলিত তাহ এ কাহিনীর অন্তর্গত নহে । ছয়মাস ২২২ টাকা মূল্যের একটি হারমোনিয়া ও মাতামহের আমলের একটি তানপুরাকে প্রতিবেশীদিগের সহিত সমবেদনায় কাদাইয়া আবেদন অবশেষে তাহার কাকাকেও সজাগ করিয়া তুলিল। তিনি বলিলেন, “ছোড়াকে চাব কিয়ে আমি সিধে করব।” কিন্তু কার্ঘ্যের বেলা দেখা গেল, আবেদনের মাতা, পিসিমাতা, ও জ্যেষ্ঠতাতের সহিত পরামর্শ করিয়া তিনি আবেদনকে আমেরিকায় পাঠাইবার বন্দোবস্ত করিতে লাগিলেন। আমেরিক হোমিওপ্যাথির তীর্থস্থান । ছেলেটির যখন হোমিওপ্যাথির দিকেই এতটা টান রহিয়াছে, তখন না হয় ও হোমিওপ্যাথিই শিক্ষা করুক। আবেদন অতঃপর একদিন দুইটি চাদনীর “হাল ফ্যাসনের” স্কট এবং একটি গোলাপী রঙের পাগড়ি লইয়া আমেরিকার পথের পথিক হইল, সঙ্গে লইল সে তা’র তানপুরাটি । le/s নিউইয়র্কের এক হোমিওপ্যাথিক কলেজের পুরাতন খাতাপত্র ঘাটিলে এখনও আবেদনের নাম পাওয়া যাইবে । সেখানে সে বেশী দিন ছিল না, কিন্তু এখনও কলেজের কেহ কেহ তাহার নাম করিলে সহাস্তমুখে তাহার কথা স্মরণ আছে বলিয়া স্বীকার করিয়া থাকে। যেদিন সে প্রথম গোলাপী পাগড়িটি পরিধান করিয়া কলেজে ষায়,সেই দিন হইতে কলেজের সকলে তাহাকে দেখিলেই অকারণে মুচকি হাসি হাসিত। ইহাতে আবেদন মনে বড় ব্যথা পাইল । সে হোমিওপ্যাথির জন্য সব সদ্ধ করিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু অপরে যে তাহাকে লইয়া অযথা তামাল করিবে, ইহা তাহার পক্ষে সহ করা একটু দুরূহ হইয়া জাড়াইল। কলেজের একটা ক্লাবের সেক্রেটারী তাহাকে একদিন বলিল, “মিষ্টার পাকড়াশী, তুমি একদিন আমাদের ভারতবর্ষ-সম্বন্ধে কিছু বলে না ?” আবেদন বলিল, “আমি আর কি বলতে পারি বলো না ? কোনো বিশেষ বিষয় বললে চেষ্টা করতে পারি।” ইয়াঙ্কি ছোকরাটি বলিল, “এই ভারতীয় সঙ্গীত ও হোমিওপ্যাথি সম্বন্ধেই কিছু বলে ।” আবেদন বলিল যে, সে চেষ্টা করিবে । সেদিন বাসায় ফিরিয়া আবেদন অনেক চিন্তা করিল, এবিষয়ে কি বলা যায়। অনেক ভাবিয়া সে একটা সিদ্ধাস্তে উপনীত হইল। পরদিন কলেজে গিয়া সে ক্লাবের সেক্রেটারীকে বলিল, “আচ্ছ,তুমি যে বিষয়ের নাম করেছ, সেই বিষয়েই আমি কিছু বলব।” যেদিন বিকালবেলা আবেদনের বলিবার কথা সেদিন সে কলেজে যাইবার পূৰ্ব্বে দেশ হইতে আনীত একখানা সঙ্গীত সংক্রান্ত পুস্তক হইতে অনেক-কিছু একটা কাগজে টুকিয়া লইল । কলেজেও সে কাগজখানা বাহির করিয়া মধ্যে-মধ্যে পড়িয়৷ লইতে লাগিল। সন্ধ্যাবেলা সকলে একজোট হইলে পর আবেদনকে তা’র বক্তৃতা দিবার জন্য একটা বড় টেবিলের উপর সকলে উঠাইয়া দিল । আবেদন যাহ। বলিল, বাংলা ভাষায় তাহার সারমর্ম এই – “স্মৃষ্টির সঙ্গে-সঙ্গেই সঙ্গীতের আরম্ভ। প্রথমে ছিল স্বষ্টিকৰ্ত্ত ব্রহ্মের ইচ্ছাশক্তির প্রচণ্ড প্রবাহের শব্দহীন তরঙ্গ-সংঘাতের অশব্দ সঙ্গীত। তা’র পর স্বাক্টর বস্তু-ঝঞ্জার উন্মত্ত আলাপ । তা’র পর এসেছিল নানান প্রাণীর জয়পরাজয় ; আনন্দ-বেদনার নিনাদ । সৰ্ব্বশেষে এসেছিল মাহমু, আর এসেছিল তার কণ্ঠনিঃস্থত মনোভাবের অভিব্যক্তি। এই যে নাদ বা স্বর ভাবব্যঞ্জক শক ইহাইব্ৰন্ধের স্বরূপ প্রকাশ করে । আমাদের শাস্ত্রে বলে— ন নাদেন বিনা জ্ঞানং ন নাদেন বিনা শিবম্। নাদরূপং পরং জ্যোতিনদিরূপী স্বয়ং হরিঃ ॥ অর্থাৎ নাদ বিনা জ্ঞান ও মঙ্গল অসম্ভব, নাদের । মধ্যেই পরজ্যোতি ও হরিরূপ প্রকাশ পাইতেছে। স্বষ্টির অসংখ্য শঙ্কের মধ্যে সকলই নাদ নহে। মাত্র তেরটি শব্দই নাদ বা স্বর। উহা সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি ও উহাদের কড়ি ও কোমল ছয়টি। এই তেরটি.স্বরের