পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] মাকে বলি গিয়ে ?” উত্তরের অপেক্ষ না করিয়াই চুল জুলাইয়া আঁচল লুটাইয়। ঝাঝমলের শব্দে দিক প্রকম্পিত করিয়া সে আবার অন্তঃপুরে ছুটিতেছিল। কিন্তু হরিকেশব ব্য গ্রহস্তে তাহাকে কোলের ভিতর টানিয়া লইয়া বলিলেন, “ন, মা, মা মণি, তোমায় এখন মা’র ঘুম ভাঙাতে যেতে হবে না ; তুমি ছোট ঠাকুমার ঘরে গিয়ে রামায়ণের ছবি দেখ ।” গৌরী দুই হাতে বাবার গলা জড়াইয়া মাথাট। পিছনদিকে উণ্টাইয়। ঝুলিয়া পড়িয়া পিল্‌ খিল করিয়া হাসিতে হাসিতে বলিল, “তুমি কিছু জান না, বাবা । মা বুঝি দুপুর বেলা ঘুমোয় ? এত এত বড়ি আর আচার শুকোতে হয় না ? আর ছোটঠাকুম পড়তেই জানে না, তার আবার রামায়ণ কই ? মেজ পিসিমার আছে । শৈল আর ময়না দিনরাত টানাটনি করে বলে’ বাক্সে তালাচবি বন্ধ কবে রেখেছে । আমি চাইলেই আমনি দিলে কি না ! ইস্, তা আর দিতে হয় না ।" গেীরীর অনগল বাক্যস্রোতের কাছে হরিকেশবকে মানিতে হইল। কিন্তু তাছাকে কোনো প্রকারে খেলা-ধূলায় লাগাইয়া দিবার জষ্ঠ তাহার মন চঞ্চল ইষ্টয়া উঠিতেছিল, পাছে গৌরীর সামনেই তাহার শ্বশুরবাড়ী হইতে কোনো টেলিগ্রাম আসিয়া পড়ে । অকস্মাং শৈল, ময়না, টিনি ও ট্যাব আসিয়া তাহার সমস্যার মীমাংস করিয়া দিল । তাহার একটা নুতন বিড়াল-ছান। আবিষ্কার করিয়াছে। শীতে পাছে সে কষ্ট পায় তাই হাহার একটা ঘর তৈয়ারী করা দরকার । গৌরী দলের সঙ্গে নাচিতে নাচিতে চলিয়া গেল । একলাটি বাহিরের ঘরের দরজার কাছে হরিকেশব উত্তরের প্রতীক্ষায় বসিয়াছিলেন । ক্ষণে ক্ষণে ভয় হইতেছিল, পাছে তাহার অসংখ্য অনুচর, পাশ্বচর, কি ভক্তের ভিতর কেহ আসিয়া পড়ে । রক্ষা এই যে, এ সময়ে তাহার বাড়ী-থাকার সম্ভাবনার কথাও কেহ কল্পনা করে নাই । 始 ঘণ্ট। দুই পরে রাস্তার মোড়ে বাইসিকূল আরোহী পিয়নের মূৰ্ত্তি দেখা দিল । সে যে কাহার বাড়ীতে কি সংবাদ লইয়া আসিতেছে, তাহ কেন জানি না, (تہ سب- 2)(-\ (* マ。 হার জীবনদোলা ২৭১ হরিকেশবের বুঝিতে বিলম্ব হইল না । একবারও তাহার মনে হইল না যে হয়ত কোনো কারণে রাগ কি অভিমান করিয়া বেয়াই-বেয়ান জামাইকে আসিতে বাধা দিয়াছেন অথবা আকস্মিক দৈব ঘটনার চক্রে পড়িয়া সে বাড়ী হইতে বাহির হইতে পারে নাই । তাহার মন বলিতে লাগিল, সৰ্ব্বনাশ হইয়। গিয়াছে, আর টেলিগ্রাম খুলিয়া কি হইবে ? পিয়নটা তাহারই দুয়ারে দাড়াইল। তিনি হাত বাড়াইয়। কাগজখানা এমন করিয়! লষ্টলেন যেন উহার দিকে চোখ দেওয়া-না-দেওয়া একই কথা । খুলিয়া, যাহা ভাবিয়াছিলেন, তাহাই দেখিলেন । মুখখান এক নিমিযে র্তার কালে। হইয়া গেল ; এত শীতেও গা বাহিয়া ঘাম ঝরিতে লাগিল । দুই দিনের ইনফ্লুয়েঞ্চ জ্বরে তাহার এত সাধের জামাই চিরবিদায় লইয়াছে । কাল হইতেই তাহাকে কে যেন বলিতেছিল গেীরীর কপাল ভাঙ্গিয় গিয়াছে । আজ সে সংবাদ তাহার কাছে নূতন লাগিল না ; কিন্তু কাগজের উপরের ঐ কয়ট অক্ষর তাহার শরীরের সমস্ত শক্তি যেন হরণ করিয়া লইল । কেমন করিয়া একথা তিনি গেীরীর মাকে বলিবেন কেমন করিয়া গৌরীর মুখের দিকে আর তিনি তাকাইবেন । হরিকেশব ভয়বিহ্বল চিত্তে ধীরে তাহার গাড়ীখান। ডাকাইয়। পলাতকের মত বাড়ী ছাড়িয় গঙ্গার ধারে গোপনে পলাইয়া গেলেন। গাড়ীর হুড, তুলিয়া এমন অসময়ে বড়বাবুকে হঠাৎ গঙ্গার ধারে যাইতে দেখিয়া গাড়ীর চালক বিস্ময়ে তাহার দিকে চাহিয়া রহিল । সে ঠিক শুনিয়াছে কিন। তাহার নিজেরই সন্দেহ হইতে লাগিল । আজ পাচ বৎসর সে এবাড়ীতে কাজ করিতেছে, বৎসরে একবার পূজার সময় শেষরাত্রে বাবুকে সে গঙ্গাস্বান করিতে লইয়। গিয়াছে, তাছাড়। কখনও ত সে তাহাকে গঙ্গার ধারে ধাইতে দেথে নািহ । সন্দিগ্ধ মনেই সে গাড়ী চালাহল, বাবুকে জিজ্ঞাসা করিতে সাহস হুইল | 1 ষ্ট্র ও রোডের পাট গুদামের পাশ দিয়া গঙ্গার ঘাটে ঘাটে গাড়ী লইয়া ঘুরিয়া-ধুরিয়া সে হয়রান হইয় গেল কোনো ঘাটে বা খানিকক্ষণ দাড়াইল । কৌতুহলী