পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳ Հ থালাসীর কি ফিরিঙ্গীর ছেলেমেয়ের আরোহীকে নামিতে না দেখিয়া যখন গাড়ীর আশে-পাশে উকি মারিতে লাগিল, তখন বড়-বাবু আদেশ দিলেন, “আর এক ঘাটে চল।” চালক অবাকু হইয় গেল । তাহার বাবু ত কোনো দিন নেশ করেন না, তবে লাজ তার কি হইল ? অনেক রাত্রে হরিকেশব বাড়ী ফিরিয়া আসিলেন । আজ তিনি বাহিরের ধরে বসিলেন না । চাকর চটি ত। লইয়া দৌড়াইয় আসিল, তাহার দিকে তাকাইলেন ন। রান্নাবাড়ীতে ছেলে মেয়েদের আহারের পর তরঙ্গিণী খাবার আগলাইয়া বসিয়াছিলেন, পুত্রবধূ লাবণ্যও শ্বশুরশাশুড়ীর অপেক্ষায় সেইখানে বসিয়া সকালের তরকারী কুটিয়া গামলার জলে ধুইয়া তুলিতেছিল। বিস্মিত ভূত্য সেখানে আসিয়া বলিল, “মা, বড়বাবু জুতে জামা ছাড়লেন না । একেবারে উপরে চলে’ গেলেন । আপনি একটু দেখবেন আস্কন ।” তরঙ্গিণী বিস্মিতনেত্রে একবার তাহার দিকে তাকাইলেন। তাহার পর লাবণ্যকে বলিলেন, “বেীমা, তুমি বাছ খেয়ে নাও, তোমার কোলে কচি ৷ আমি দেখি গে আবার উপরে কি হ’ল ?” গৃহিণী চঞ্চলচরণে উপরে চলিয়া গেলেন । হরিকেশব ঘরে ঢুকিয়াই আলনায় ও মেজেতে কাপড় জামা ছাড়িয় তাড়াতাড়ি শয্যার আশ্রয় লইয়াছিলেন । তরঙ্গিণীর কাছ হইতে কি করিয়া লুকাইবেন ইহাই হইয়াছিল তাহার ভাবন । তরঙ্গিণী স্বামীকে নাড়া দিয়৷ বিস্মিত স্বরে বলিলেন, “হঁ্যাগা, বাড়া ভাত পড়ে রইল, তুমি এসেই শুলে যে বড় ? শরীর খারাপ লাগছে নাকি ?” ব্যস্তভাবে তিনি হরিকেশবের মাথায় কপালে হাত বুলাইয়া দেখিলেন । হরিকেশব কোনো সাড়া দিলেন না। স্ত্রী আবার ডাকিলেন, “ওগো শুনচ ? কথার উত্তর দাও না কেন ?" - হরিকেশব স্ত্রীর হাতখানা বুকের ভিতর টানিয়া লইয় বলিলেন, “কি উত্তর দেব তরু ? বল ! উত্তর দেবার যে কিছুই নেই।” এমন আদরের স্বরে অথচ এমন বিষাদমাথা স্বরে তরঙ্গিণী বহুকাল স্বামীকে কথা বলিতে শোনেন নাই । প্রবাসী-জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সহস্র কাজের মাঝে অন্যমনস্ক ভাবে একটা কথার উত্তর দেওয়াই স্বামীর অভ্যাস বলিয় তাহার ধারণা হইয়। গিয়াছিল। এমন একান্ত কাছের মানুষের মত প্রেম ও ব্যথাজড়িত স্বর তাহার মনটা ও কেমন বেদনার স্বরে ক্টাপাইয়া দিল । কি হইয়াছে ? কিসের ব্যথায় বিশ্বভোল৷ স্বামীটি তাহার আজ এতকাল পরে তাহাকে এমন করিয়া কাছে টানিতেছেন ? তরঙ্গিণী স্বামীর বুকের উপর মাথ৷ রাখিয়া স্তব্ধ হইয়া রছিলেন । আর প্রশ্ন করিতে তাহার ভয় করিতেছিল । অমঙ্গল আশঙ্কায় তাহার কণ্ঠ নীরব হইয়া গিয়াছিল। না জানি ইঙ্গর পর কি শুনিবেন ভাবিতেও সাহস হইতেছিল না । হরিকেশব সহসা উঠিয়া বসিয়। তরঙ্গিণীকে বাহিরে টানিয়া লইয়া গিয়া বলিলেন, “তরু, তোমার কাছে যা লুকিয়ে রাখতে পারব না, তা আজকেই বলে’ ফেলা ভাল । বল, আমার কথা শুনে কঁদবে না, চোখের জল পড়তে দেবে না ; বল, একথা গৌরীকে ঘূণাক্ষরেও জানতে দেবে না। পাযাণ হ’য়ে তার কাছে হাসিমুগে থাকুবে ।” তরঙ্গিনীর বুকের ভিতর ‘ধডাস্ করিয়া উঠিল । কেন, কেন, কি হইয়াছে ? তবে কি যাহা ভাবিতে নাই, গেীরীর কপালে সেই নিদারুণ দুঃখ আসিয়াছে ? তরঙ্গিণী দৃঢ় করিয়৷ স্বামীর হাতটা চাপিয়া ধরিলেন ; ঠোট দুখান বেদনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নীল হইয়া গিয়াছে ; তিনি কোনো কথা কহিতে পারিলেন না । হরিকেশব বুঝিতে না পারিয়া বলিলেন, “তোমার গৌরী আবার তোমারই ঘরে আজন্ম বাধা পড়ল। ওর আর কেউ নেই। একথা কোনো দিন তুলো না। তার কচি মনে যেন—” তরঙ্গিণীর কাণে যে শেষকথাগুলি আর যায় নাই তাহা হরিকেশব সহসা বুঝিলেন যখন তরঙ্গিণীর মূচ্ছিত দেহভার তাহারই অঙ্গে লুটাইয়া পড়িল । তরঙ্গিণী স্বামীর কথা রাখিয়াছেন, অশ্বরোধ করিয়াছেন; কিন্তু হৃদয়কে জয় করিতে পারেন নাই । অসহ ভারে তাহা ভাঙ্গিয়া পড়িল । সেদিন হইতে আজ পর্য্যন্ত গৌরী কিছুই জানে না । হরিকেশবের কড়া শাসনে সমস্ত পরিবার গৌরীর নিকট