পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] লোক দুটি এ প্রশ্নের উত্তর না করিয়া বারবার তাহাকে সিস্টার ঈডিথের নিকট যাইতে বলিল, সেও হাসিয়া তাহাঁদের কথা উড়াইয় দিল এবং শেষে বিরক্ত হইয়া তাহাদিগকে কদৰ্য্য গালি দিতে মুরু করিল। মাতাল দুইজনেও ততক্ষণে রাগিয়া আগুন হইয়াছে। তাহার বলিল সে নিজে হইতে এখনই সেখানে না গেলে তাহার তাহাকে শিক্ষা দিবে। তাহার। আস্তিন গুটাইতে লাগিল । দীর্ঘকায় লোকটির বিশ্বাস ছিল সে সহরের মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষ শক্তিশালী। তাহাদের ক্ৰোধ সে সম্পূর্ণ উপেক্ষ করিতে লাগিল বরং বেচারীদের উপর তাহার করুণ। হইল । সে বলিল, “তোমরা এভাবে যদি ব্যাপারটার মীমাংসা করতে চা ও বহুত আচ্ছা। কিন্তু মশাইরা ঝগড়াঝাটি মিটিয়ে ফেলেই ভাল হয় নাকি ? বিশেষ ক’রে এখনই যে গল্পটা শুনলে সেটার কথাও ত ভেবে দেখা উচিত । কিছু ত - 1 |” কি গু মাতাল দুই জনের তখন বিচারের ক্ষমতা লোপ পাইয়াছে। তাহার কেন মারামারি করিতে যাইতেছে তাঙ্গ সম্পূর্ণ বিস্মৃ ত হইয়াছে । কিন্তু তাহাদের পাশব প্রবৃত্তি জাগিয়া উঠিয়াছে—এখন তাহাদিগকে নিরস্ত করা অসম্ভব । প্রতিপক্ষের অসুর-শক্তির কথা গ্রাহ না করিয়া তাহার। হিতাহিত জ্ঞানশূন্ত হইয়। মুষ্টি দৃঢ় করিয়া ংtহাদের সঙ্গীকে আক্রমণ করিল। কিন্তু আক্রান্ত লোকটি ব্যস্ত না হইয়া সম্পূর্ণ নিৰ্ব্বিকার ভাবে বসিয়া বসিয়াই ত হীদের আঘাত প্রতিরোধ করিতে লাগিল—আত্ম শক্তিতে তাহার এতই বিশ্বাস ! তাহারা তাহার নিকট সেন এক জোড়া কুকুর-ছান । কিন্তু তাহারা ও নিরস্ত হইল না ; কুকুরছানার মতই গে। ধরিয়া তাহাকে আঘাত করিতে চেষ্টা করিল। এই ধস্তাধস্তির মধ্যে একজন অতর্কিতে উপবিষ্ট লোকটির বুকে প্রচণ্ড আঘাত করিল। পরক্ষণেই তাহার চারিদিক অন্ধকার হইয়া আসিল ; মাথা ঝিম্ ঝিম্ করিয়া উঠিল। তাহার মনে হইল যেন তপ্তরক্ত স্রোত বুক হইতে মুখে উঠিতেছে—বুঝি তাহার ফুস্কুল ফাটিয়া গিয়াছে। দেখিতে দেখিতে সে মৃত্যু দূত २४-७ মৃচ্ছহিতের ন্যায় মাটিতে পড়িয়া গেল ; তাহার মুখ দিয়া অবিশ্রাম রক্তস্রাব হইতে লাগিল । বেচfরার দুর্ভাগ্য ; তাহার অবস্থা আরো সাংঘাতিক হইল যখন সম্বিত হইয়া সে দেখিল মাতাল দুইজন রক্ত দেখিয়া ভড়কাইয়া গিয় তাহাকে একদম খুন করিয়াছে ভাবিয়া পলায়ন করিয়াছে । সে একাকী সেখানে পড়িয়া আছে । রক্তপ্রাব বন্ধ হইয়াছে বটে কিন্তু একটু নড়িলে চড়িলেই আবার তাহ দেখা দিতেছে। সেরাত্রে বিশেয শীত ছিল না কিন্তু সেই ভিজ মাটিতে পড়িয়া থাকিয় তাহার কেমন শীত শীত করিতে লাগিল ; হাত পা যেন জমাট বাধিয়া গিয়াছে। সে কেমন একটা অদ্ভুত আসোয়াস্তি অনুভব করিতে লাগিল । তাহার ভয় হইল যদি কেহ সে দিকে আসিয়া তাহাকে সাহায্য না করে তবে তাহার মৃত্যু অনিবাৰ্য্য। অথচ সে-সহরের একেবারে বুকের উপরে বসিয়া। উৎসব উপলক্ষ্যে দলে-দলে লোক রাস্তায় বাহির হইয়াছে ; তাহীদের পায়ের শব্দ তাহার কানে আসিয়া বাজিতেছে ; তাতাদের হাস্য কৌতুকালাপ সে স্পষ্ট শুনিতে পাইতেছে। কিন্তু কেহ নিকটে আসিল না। হায়, সাহায্য এত কাছে থাকা সত্ত্বে ও কি তাহাকে এমন ভাবে মরিতে হইবে । সেই ভয়াবহ অসহ চিন্তায় সে অস্ফুট আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল । সে পরম আগ্রহে সাহায্যের প্রতীক্ষা করিতে লাগিল । শীতের প্রকোপ ক্রমশঃ অসহ বোধ হইতে লাগিল । এই দুৰ্ব্বল শরীরে উঠিয় দাড়াইবার চেষ্টা বৃথা । সে প্রাণপণে বলসঞ্চয় করিয়া সাহায্য প্রার্থনা করিয়৷ চীৎকার করিল। ঠিক সেই মুহূৰ্ত্তে তাহার মাথার উপরে গির্জার ঘড়িটি ঢং টং করিয়া বাজিয়া উঠিল—সে যেন মৃত্যুর আহবান । সে শিহরিয়া স্তব্ধ হইল । সেই বিরাট ধাতুমস্ত্রের শব্দে তাহার ক্ষীণ আৰ্ত্তনাদ ডুবিয়া গেল ; কেহই সাহায্য করিতে আসিল না। আবার প্রবল বেগে শোণিতস্রাব সুরু হইল। যদি অবিলম্বে কেহ তাইকে রক্ষা করিতে না আসে তাহ হইলে বুঝি তাহার শরীরের সমস্ত রক্ত এমনি ভাবে নিঃশেষিত হুইবে ।