পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৮ করিয়াছে। তাহারই সহিত নিজের বিবাহের কথাট। আলোচিত হইতেছে । জীবনের গতি ঘুরাইয়া সে কোথায় কাহার ঘরণী হইতে চলিয়াছে শিশিরের কাছে সেই ংবাদটা প্রচারিত হুইল দেপিয়া সে কুষ্ঠা বোধ করিতে লাগিল । তাহার এতদিনকার কথা-বার্তা কাজ-কৰ্ম্মের সঙ্গে এই বিবাইট সেন খাপ খাইতেছে না, অত্যন্ত বেস্থর বোধ হইতেছে। যতই নিজের মনকে বুঝাইল এ কথা ঠিক নয়, দুইয়ের মাঝে বিরোধ নাই, ততই যেন সঙ্কোচটা চাপিয়া-চাপিয়া ধরিতে লাগিল। তবু সমস্ত সঙ্কোচ ঠেলিয়া ফেলিয়া সে শিশিরের সম্মুখে আসিয়া কহিল, কতক্ষণ এলেন ? আপনার মন্দিরের মুস্কিল আসান হ’ল ? নন্দবাবু উঠিয়া গিয়াছিলেন । শিশির এক-এক বসিয়া বোধহয় অমিতারই প্রতীক্ষা করিতেছিল। তাহার প্রশ্নটা শুনিয়া সে অবাক হইল। "মন্দির” খেন তাহারই, অমিতার যেন কোনও সংস্রব তাহতে নাই । কহিল, কই আর হ’ল ? তবে আপনি একটু দয়া করলেই হয়। অমিতা নিতান্ত একটা কিছু বলিবার জন্যই কথাট। বলিয়াছিল, ভাবিয়া বলে নাই । অপ্রতিভ হইয়া কহিল, বেশ, আমি দয়া কবুলে কি রকম ! দয়-অদয়ার কথা এল কিসে ? অমিতার কথায় ঝাজ ছিল । শিশির সে-কথার জবাব না দিয়া কহিল, চমৎকার ফুলগুলি ত স্বশাস্ত-বাৰু পাঠিয়েছেন বুঝি ? খাস পছন্দ তার । অমিতা কহিল, হা বড় বড় গোলাপ ফুল এক রাশ কিনতে খুব পছন্দের দরকার হয় । বলিয়া সেগুলি এক দিকে ঠেলিয়া দিয়া পুনরায় কছিল, বাবা বলছিলেন কোথায় নাকি আপনি যাবেন ? শিশির কহিল ষ্টা, সেই জন্যই ত বলছি, কাগজটা এইবার আপনাকে একটু দেখতে হবে। বেশী কিছু— —কোথায় যাচ্ছেন ? —মফস্বলে কাজ পেয়েছি ? —কলকাতায় বুঝি কাজ পাওয়া যায় না ? —কই যায়। যদি বা ভাগ্যগুণে হঠাৎ বেকার কিছু জোটে শেষ পৰ্য্যন্ত অদৃষ্টে টেকে না । সে যা-হোক, প্রবাসী জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আপনার বাবার আফিসের যদু-বাবুই সব করেন। আপনি শুধু একটু নজর রাখবেন লেখা-টেখাগুলো একটু গুছিয়ে— অমিত অসহিষ্ণুভাবে বলিল, আমি পারব না। আপনি ও আপদ তুলে দিয়ে যান। —সে কি, দিব্যি চলছে । —চলুকগে । বলিয়৷ অমিত উঠিয়া চলিয়া গেল । শিশির অনেকক্ষণ বসিয়া রহিল । কিন্তু অমিতা আর আসিল না । 赛 赛 赛 砂 অমিত বসিয়া-বসিয়া ভাবিতেছিল দিব্য আরম্ভ করা গিয়াছিল। একটা জ্যোতিৰ্ম্ময় ভবিষ্যং ধীরে-ধীরে রূপ লইয়া ফুটিয়া উঠিতেছিল। হঠাৎ যেন তাহার সম্মুখে চিরদিনের মতন কালো পর্দা ঝুলিয়া পড়িল । জীবনের সব কিছু যেন হু হু করিয়া বদলাইয়া যাইতেছে। পূৰ্ব্ব জীবনের শেষ স্থতি ঐ মন্দির ক্ষণপূৰ্ব্বে নিজেই ধূলিসাৎ করিয়া দিয়া অতীত গৌরবের সমস্ত চিহ্ন যেন আপন হাতে মুছিয়া ফেলিয়াছে। সেদিন রাত্রে পিতা অনেক সুখ-দুঃখের কথার পর অমিতাকে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া শুইতে গেলেন । অমিতাও শয্যায় পড়িয়া নিজের ভাগ্যের কথাটাই ভাবিতেছিল । কিন্তু সেই অন্ধকারে মুশান্তর মূৰ্ত্তি কিছুতেই চিন্তার মাঝে ফোটে না । সে যেন সভামঞ্চে ঝকৃ ঝকৃ করিবার মতো মুখ—নিশীথ রাত্রে নির্জনে শয়ন করিয়া অন্ধকারে লেপিয়া মুছিয়া একাকার হইয় গেল। অমিতা ভিতরে-ভিতরে ভয়ানক অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল । উঠিয়া জানালায় আসিয়া দাড়াইল । নিস্তদ্ধ, নিঝুম রাত্রি । গলির মোড়ের শিশিরাচ্ছন্ন গ্যাসের আলোটা ঘুমন্ত রাত্রির শিয়রে দাড়াইয়া যেন ঝিমাইতে কিমাইতে পাহার দিতেছে। সম্মুখের শ্রেণীবদ্ধ বাড়ীগুলির সমস্ত দরজা জানাল বন্ধ । সেই নিশীথ রাত্রির গভীর প্রশাস্তির মাঝে অমিতার অঙ্করতম সাধনার ধ্যানরূপটি তাহার চোখে ফুটিয়া উঠিল । সে অবাকৃ হইয়া দুই চোখ ভরিয়া দেখিল, কোথায় সাহিত্য, কলা, সমাজ, শিক্ষা, কোথায় স্বশাস্ত। পথ-চলার মুখে যাহাকে পথের পাশে ফেলিয়া গিয়াছে, সে অলক্ষ্যে হৃদয়ে প্রবেশ করিয়া সমস্ত আস্তর