পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

یوه وه প্রবাসী-জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড অজবিলাপে বৰ্ণিত, “গৃহিনীসচিবকলামিঞ্চ” পদটি নিতান্ত মাঠে মারা যায়। তাতেই কেদার স্ত্রীকে বললে তোমায় ভালো ক’রে পড়া শিখতে হবে”— প্রিয় প্রথমটা সলজ্জ ভাবে বললে “বুড়োবয়সে আবার পড়া শিপ বো। ছিঃ !” কিন্তু তার বুদ্ধিশুদ্ধি বেশ ভালই ছিল । তার পর স্বামীর মোটামোট বই গুলোর দিকে তাকিয়ে সেগুলোকে আয়ত্ত করবার আশায় সে পড়তে রাজী হ’য়ে গেল। তবে বাজনা শিখতে সে মোটেই উৎসাহ দেখালে না, বললে ওটি আমি পারব না। কেদার তাতে হাল ছাড়লে না। একটা থেকেই ত সুরু কর ধাকৃ, এই ভেবে সে অধ্যপনাটাই আরম্ভ ক’রে দিলে । রাত্রি ৯টার পর আহারাদি সেরে প্রিয় ঘরে এসে স্বামীর কাছে বসে বই খুলে স্থবোধ ছাত্রীর মতো he is on সে হয় উপরে’ ‘I am in আমি হই ভিতরে’ আবৃত্তি করতে লেগে যেত। কিন্তু আর সে ক’মিনিটের জন্যে ? একটু পরেই বেচারীর শ্রাস্ত-ক্লাস্ত চোখ দুটি কেদারের পাঁচবার নিযেধ সত্ত্বেও ঘুমের ঘোরে ঢুলে পঙত আর তার নিদ্রালস দেহখানি স্বকোমল শয্যার উপরে লুটয়ে যেত। অগত্য। কেদার শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করে, ছাত্রের অসেন নিয়ে পাঠ্য পুস্তকে মনোনিবেশ করত। ঢং ঢং ক’রে দেওয়ালের ঘড়ীতে দশটার পর এগারোট। বেজে যেত। অদূরে হুগলীর বিখ্যাত ইমামবাড়ীর প্রকাগু ঘড়ীতে তার প্রতিধ্বনি সশব্দে জেগে উঠে বাতাসকে কঁাপিয়ে তুলত । অভ্রাণের শেষে শিউলী ফুলের তখন পূরে রাজত্ব ; বাতাস তারই মদির-গন্ধ ব’য়ে এনে অধ্যয়নরত যুবকের নাসারন্ধের ভিতর সহজে পথ ক’রে নিয়ে তার হৃদয়ের রন্ধে-রন্ধে, এক অজানা পুলক-স্পন্দন জাগিয়ে তুলত। কেদার বেচারীর পড়া আর এগোতে চাইত না ; বইএর অক্ষরগুলো যেন সব হঠাৎ সঙ্গীন-হাতে-করা সেপাই মূৰ্ত্তিতে পরিণত হ’য়ে তার চোখে খোচা দিতে• চাইত। তাদের আয়ত্ত করবার দুরাশা পরিহার ক’রে কেদার তখন চেয়ার ছেড়ে শখ্যার ‘পাশে গিয়ে দাড়াত। পালঙ্কের উপর গভীর স্বপ্তিময় কি মুন্দর, স্বকোমল প্রিয়ার সেই মুখখানি-কি মধুর লাবণ্যজড়িত তার স্বঠাম দেহবল্পী ! বাতির আলোয় স্বভাবস্থদর স্ত্রী যেন দ্বিগুন ঝলমল করছে। সপ্তমীর চাদের মতো প্রিয়ার স্ব বঙ্কিম ললাট, ঘন কৃষ্ণ নিবিড় চুলগুলির মাঝে শুভ্র সিথির দাগ-যেন কবিবর্ণিত নীল আকাশের বুকে ছায়াপথের রেখা , তার পূরোভাগে সিন্দুরের রক্তরাগ চিহ্ন। কেদার সব ভুলে প্রীতি-বিহবল-মুগ্ধচিত্তে সুপ্ত প্রিয়ার মুখে বার-বার অমুরাগের চিহ্ন একে দিয়ে তার পাশে স্থান গ্রহণ ক’রে অগাধ নিদ্রায় মগ্ন হ’য়ে পড়ত । প্রিয়ত্রতাকে সে আদর ক’রে প্রিয় ব’লেই ডাক্ত । সত্যি কথা বলতে কি কেদার বেচারীর অধ্যয়নঅধ্যাপন—দুটিই দিনের পর দিন আর অগ্রসর না হ’য়ে মধ্যপথে স্থিতিশীল হবার জোগাড় করতে লাগল । চার তখন ফাঙ্কনের শেষ , কেদারদের প্রকাও বাগানে আম গাছগুলো মুকুলে মুকুলে ভ’রে গেছে। তার গন্ধে পাগল কোকিলগুলো সবে মাত্র গলার জড়ত দূর করবার জন্যে স্বর-সাধা সুরু করেছে। দুপুর বেলা চারদিক্‌ কেমন একটা নির্জনতার আভাসে থমথমে হয়ে দাড়িয়ে। গৃহস্থ বাড়ীর কাজ-কৰ্ম্মগুলো এই সময় খানিকক্ষণের জন্তে এক রকম ছাড়া পায় ; তাই কৰ্ম্ম-কৰ্ত্ত বা কত্রীরাও একটু বসে জিরিয়ে বঁাচেন, আর দস্যি ছেলের মতে, গোলমালগুলো একটু ঘুমিয়ে পড়ে চারিদিকের থমথমে ভাবটাকে জমিয়ে তোলে । d কেদার আপনার ঘরে জানলার সাম্নে চেয়ার টেনে নিয়ে চুপ-চাপ বসেছিল ; বাইরে সিঁড়িতে চটি জুতার ফট্‌ফট শব্দ হ’তেই সে যার আগমন সম্ভাবনাকে মেনে নিল, তার আসা তার কাছে মোটেই অনাদরের বস্তু নয় । তবু সে আগন্তুককে মুখ ফিরিয়ে দেখে অভ্যর্থনা করবার জন্য প্রস্তুত হ’ল না। আগন্তুক ঘরে ঢুকেই একটু থমকে দাড়াল, তার পর চটি জোড়া খুলে রেখে, সতরঞ্চের উপর দিয়ে পা টিপে-টিপে হেঁটে গিয়ে পিছন থেকে কেদারের চোখ দুটো টিপে ধৰ্বল। কিন্তু সে এক লহমার জন্তে মাত্র, তখনি চোখ ছেড়ে দিয়ে সে সামনে এগিয়ে দাড়াল। কেদার বললে “ধরলি না কেন, ছেড়ে দিলি যে ওরে