পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] প্রবাল দভ ; তোর হাত আর বউএর হাতে আসমান জমিন সফাৎ । তোর ডাম্বেল ভাজা, কুন্তীলড়া পাঞ্জার সঙ্গে উএর.কচি নরম হাতের কি তুলনা হয়।” প্রবাল হসে বললে—“তা হ’লে প্রেমিকদের নামের লিষ্ট থেকে তার নাম কেটে দে। যদি প্রিয়ার কথা ভাবতে-ভাবতে টুনি মশগুল না হলি, কঠিনকে কোমল না ভাবলি তবে আর তন্ময়ত হ’ল কি ? কবি বিরহীর মুখ দিয়ে ক সব বলিয়েছে জানিস তো ! লতা দেখে তার প্রিয়ার অঙ্গলাবণ্য মনে হ’ত, ফুল দেখে প্রিয়ার ঠোটের কথা স্মরণ হ’ত । পুন্ধরবার প্রেমোন্মাদ পড়েছিস্ ত ?” কদারও হেসে বললে “আমার ত প্রেমোন্মাদ হ’বার অবস্থা নয়, প্রিয়া আমার কাছে ; সুতরাং মলয়-বসন্তে আমি ত বিরহী নই ভাই ।” একখানা চৌকী টেনে নিয়ে ব’সে প্রবাল বললে— ‘শুনেছিস্ আমি পড়া ছেডে দিলাম।” কেদার বললে—“বাঃ কবে থেকে ?” ‘আজ সকাল থেকে । বাবার শরীর বডড খারাপ, উনি আর পড়াতে পারবেন না। অথচ ছমাস ছুটি নিয়ে-নিয়ে কাটুল, আর ছুটী পাওয়া যাবে কেন ?” “ত—তুই কেন পড়া ছাড়লি ? এফ, এ-টা ও বি, এ-টা কোনোরকমে পাশ ক’রে নিলেই ভাল হ’ত ।” “ভাল হ’ত কিনা বিচার করবার যে সময় পাওয়া গেল না। বাবার অমুখে চার দিকে ধার কর্জ দাড়িয়েছে আমিও তাই মাষ্টারী নিলাম। তবে তোর মাষ্টারীতে আর আমার মাষ্টারীতে ঢের তফাৎ । তোর মাত্র একটি ছাত্রী, আর সে ছাত্রীটির পড়া ভুল হ’লেও তোকে চোখ রাঙ্গাতে হয় না ; আমার কিন্তু দণ্ডধারী যমরাজের মতন বেত্ৰধারী মাষ্টার মশায় হ’তে হবে ।” কেদার হেসে বললে –“তা আর দুঃখু কিসের ? আমার মতন তুইও এইবার একটি ছাত্রী আমদানী করিস। তোর মা বলেছিলেন ছেলে চাকরী না করলে বিয়ে দেবেন ন। এইবার ত চাকরী করতে চললি।” * "ভারী চল্লিশ টাকার চাকুরী। না রে, বিয়ে টিয়ে এখন কিছুতেই করছি না। তা তুইত রাত্ৰিতে মাষ্টারী কবি, সঙ্গীত চর্চা কবি, প্রেম চর্চা কবি, দুপুর বেলা ক’রে মা সরস্বতীর সঙ্গে কদিন লুকোচুরী খেলবি ভাই ? আজ ছুটীর দুপুরটাতেও ত বই খুলে বসিস্নি, দিব্যি আম বাগানের দিকে তাকিয়ে কোকিলের কুস্থ ডাক শুনে প্রাণ ভরাচ্ছিস ।” কেদার প্রথমে এই অসুযোগ শুনেই একটু নড়ে-চড়ে বসূল, ক’ড়ে আঙ্গুলটা দাত দিয়ে চেপে মনে-মনে কি যেন একটা ভাবলে, তারপর হঠাৎ বলে উঠল “তুই না পড়িস্ত আমিও আর পড়ছি না। এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন হ’তে যাবে? সেই ছোট বেলা থেকে এদিন এক সঙ্গে পড়ে এসে--" কেদার থেমে গেল, বাকী কথাটা আর শেষ করলে না। প্রবাল বন্ধুর পিঠে আদরের চাপড় মেরে বললে—“আহা বন্ধু-বৎসল বটে, দেখিস ভাই শ্লোকট ভুলিস্নি যেন, ‘রাজদ্বারে শ্মশানে চ যঃ তিষ্ঠতি স: বান্ধবঃ।’ তা শোন বলি, চল স্কুলে তুইও মাষ্টারী কর্বি।" মাথা নেড়ে কেদার বললে, “দাদার রাজী হবেন না ; তরে পড়া ছেড়ে এ বয়সে শুধু-শুধু ঘরে বসে থাকাটাও ভালো দেখাবে না।” প্রবাল বললে,—“পড়াশুনো ছেড়ে দেওয়া তোর ঠিক হবে না কেদার। তবে একথা ঠিক যে, যে ভাবে তুই পড়াশুনো করছিস্ এতে তোর কিছু হবে না । পরীক্ষা তো এগিয়ে এল, পাশ ত হবিই না ; আর বাড়ী শুদ্ধে লোক বউটাকে অপয়াবউ ব’লে দোষ দেবে। বেচারী লজ্জায় ম’রে যাবে।” কথাটি খুব ঠিক । এই কিছুক্ষণ আগে নির্জনে বসে কেদার ঠিক এই কথাই ভাব ছিল । তার সময়ে অসময়ে কলেজ হ’তে চলে আসাটা দাদাদের দৃষ্টি এড়ায়নি । তারাও নবীন দাম্পত্যজীবনের ভুক্তভোগী, সে জন্ত কেদারকে কাল একটু কটাক্ষ ক’রেই বড়দাদা মাকে বলেছে “ছোট বউমাকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দাও মা, আর কেদার, তুমি একটু মন দিয়ে পড়, result যেন ভাল হয়। নেহাৎ থার্ডডিভিসনের পাশ লিষ্টে নামটা রেখো ন যেন।” মধুমতী আর কেদারকে কিছু না বলে প্রিয়ত্রতাকে বলে ছিলেন “বউ মা, কেদার রাত্তিরে যাতে পড়াশুনেতে একটু মন দেয় তার ওপর চোখ দিও ত”–এই সামান্ত কথা -কয়টির আড়ালে যে কত প্রছন্ন ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে তা