পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লীতে এক দিন * স্ত্রী অমিয় বসু তখন সকাল ৮ট। ৯টা হবে । দমস্ত আকাশটায় বিছিয়ে গিয়ে সূর্য্যটাকে গিলতে চলেছে ; তার মাঝে মাঝে এখানে সেখানে লাল কালো শিশে-রঙের মেঘ যাক বাকা বিদ্যুৎ চম্কে উঠছে। যেন বহু দুর থেকে একটা গুড় গুড় শব্দ আসছে। গরম জোরালো একটা বাতাস ঘাসের উপর দিয়ে খেলে যাচ্ছে, গাছ-পালা সব দুমড়ে দিচ্ছে আর ধুলো-বালি উড়িয়ে চলেছে। এখনই ভয়ানক ঝড়-বৃষ্টি মুরু হবে। ফীয়কৃল,—ছ’ বছরের এক ছোটো ভিখারী-মেয়ে সে—, গ্রামের ভিতর দিয়ে ছুটে চলেছে টেরেন্ট মুচিকে খুঁজতে খুজতে । মাথায় এক রাশ কটা চুল, পা-দুটো খালি, মেয়েটার চেহারা ফ্যাকাশে ; চোখ-দুটো তার ধেন বেরিয়ে এসেছে, ঠোঁট-দুটো তার কঁপিছে । যার সঙ্গেই দেখা হয় তাকে সে জিজ্ঞেস করে—“কাকী, টেরেন্ট কোথায় জানে ?” কেউ তার জবাব দ্যায় না। তারা সকলেই যে ঝড় আসছে বুঝে ব্যস্ত হ’য়ে পড়েছে, আর যে যার কুঁড়েতে আশ্রয় নিচ্ছে। অবশেষে সে দেখতে পেলে গির্জার তোষাখানার রক্ষী টেরেন্টর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিলান্ট সিলিচ বাতাসে কাপতে কাপতে আসছে। মেয়েটা জিজ্ঞেস করল,—“কাক, টেরেন্ট কোথায়?” সিলান্‌টা বললে,—“শঙ্গীর বাগানে ৷” ভিখারী-মেয়ে কুঁড়ে ঘরগুলার পিছন দিয়ে ছুটুতে ছুইতে শব্জী-বাগানে গিয়ে টেরেন্টকে দেখতে পেলে । ট্যাঙ বুড়ো লোকটির সরু মুখখান বসন্তের দাগে उब्रा, প। ছটো তার খুব লম্বা ; থালি পায়ে, মেয়েদের একট। শেখভের ইংরেজী অনুবাদ থেকে । ছেড়া জ্যাকেট গায়ে দিয়ে, তরকারি-বাগানের কাছে সে দাড়িয়ে আধ-ঘুমন্ত মাতালের মতো চোখে সেই কালো ঝড়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার সেই লম্ব} বকের মতন পায়ের উপর দাড়িয়ে সে শালিথের বাসাটির মতোই দুলছে । কটা চুলো সেই ভিখারী-মেয়েটা তাকে ডাক্ল,— “টেরেন্ট-কাকা! আমার কাক ?” টেরেন্ট ফায়ুকুলার দিকে ঝুকে পড়ল, তার কঠিন মাতালে মুখটা হাসিতে ভরে উঠল ; এমন হাসি আমাদের মুখে কেবল তখনই আসে যখন আমরা একটা ছোটো নিৰ্ব্বোধ অর্থশূন্ত অথচ অতি প্রিয় কোনো জিনিষের দিকে তাকাই। আদর করে অৰ্দ্ধ-স্ফুট স্বরে সে বললে,— “ও ! ফীয়কৃল ? কোথা থেকে আসচিস্রে ?” কাদতে কাদতে মুচির কোটটায় টান দিয়ে ফায়ক্ল বললে, “টেরেন্ট-কাকা, চলো তুমি, ডানিলুকা-দাদা ভারি বিপদে পড়েছে, চলে৷ ” “কি বিপদ রে ?...উঃ কী বাজই পড়ছে! প্ৰভু দয়াময় ।...উ, কি বিপদ রে ?” “জমিদারদের সেই জঙ্গলে একটা গাছের গৰ্ত্তে ডানিলকা হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিল, আর বার করে আনতে পারছেন ; এস, কাক, লক্ষ্মীটি, তার হাত টেনে বার করে* দাও ।” “কি রকম ? সে গর্তে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিল ? কেন, কিসের জন্যে ?” “গৰ্ব থেকে আমার জন্যে একটা কোকিলের ডিম বার করতে গিয়েছিল।” "সকাল সবে হয়েচে কি না-হয়েচে আর এরি মধ্যে সব হ্যাঙ্গামে পড়েছ.?” এই না বলে টেরেন্ট মাথা নাড়তে লাগল আর ‘খু খু করে থুতু ফেলতে লাগল।