পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిషి 8 “তোমাকে নিয়ে এখন করতে হবে কি ? আচ্ছা, আমি যাচ্চি------যাচ্চি, নেকড়ে তে গিলে খায় যেন তোমাদের, দুষ্ট ছেলে মেয়ে সব ! চল, দেখি !” টেরেন্ট শব্জী-বাগান থেকে বেরিয়ে এসে তার লম্বীলম্বা পা ফেলতে ফেলতে গ্রামের রাস্ত দিয়ে হন-হন করে’ হেঁটে চলল। খুব তাড়াতাড়ি সে হাটুতে লাগল, হাটুতেহাটুতে কোথাও থামে না এপাশ-ওপাশ দ্যাথেও না, যেন তাকে কেউ পিছন থেকে ঠেলে নিয়ে চলেছে বা তার যেন কেউ পিছু নিয়েছে আর তারই ভয়েই সে চলেছে। ফীয়কৃলা অতি কষ্টেই তার সঙ্গে-সঙ্গে চলতে পারছিল। তারা গ্রামের বাইরে এসে মোড় ফিরে জমিদারের জঙ্গলের দিকে একটা ধুলে-ভরা রাস্ত ধরে বরাবর চলতে লাগল। দূর থেকে জঙ্গলটা দেখতে গাঢ় নীল রঙের ; সুর হবে প্রায় মাইল দেড়েক । এতক্ষণে স্বৰ্য্য মেঘে ঢেকে গেছে, কিছু পরেই আকাশে এক বিন্দুও নীল আর রইল না ; আঁধার ক্রমে ঘনিয়ে আসছিল। টেরেন্টর পিছনে ছুটুতে ছুটুতে ফীয়কৃলা আস্তেআস্তে বলতে লাগল, “প্ৰভু দয়াময় ! প্রভু!...” বৃষ্টির প্রথম ফোটাগুলো—বড় বড় ও ভারী—ধূলোভরা রাস্তায় কালো-কালো বিন্দুর মতে পড়ছে। একটা বড় ফোটা ফীয়কৃলার গালে পড়ল, সেটা অশ্রুর মতোই তার চিবুক বেয়ে গড়িয়ে গেল । মুচি তার হাড়-বেরনো খালি পা দিয়ে ধুলো উড়িয়ে বিড় বিড় করে’ বললে, “বিষ্টি স্বরু হ’ল ; এ বেশ স্বন্দর রে ফীয়কৃল বুড়ী। ঘাস আর সব গাছ বিষ্টি খেয়েই বঁাচে রে, আমরা যেমন রুট খাই না ! বাজ ? ওতে ভয় পাসনে যেন খুকী ; তোর মতন একটা ছোট্রো জিনিসকে ও মেরে ফেলতে যাবে "কেন ?” - বৃষ্টি আরম্ভ হ’তে না হ’তেই ঝড় থেমে গেল। একমাত্র শব্দ যা শোনা যাচ্ছিল তা ঐ নতুন রাই-গাছে ও তৃষ্ণাৰ্ত্ত রাস্তায় তীক্ষ গুলি বর্ষণের মতো বৃষ্টি-পড়ার ঝুপ-ঝুপ শব্দ। টেরেনট আস্তে বলে উঠল, “আমরা ভিজে জাব হয়ে যাব ফীয়কুল, আমাদের শরীরের একটুও শুকনো থাকবে প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ আর ঐ ! [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড না......হোঃ হোঃ খুকী, আমার ঘাড় বেয়ে বিষ্টি পড়েছে দ্যাখ। কিন্তু ভয় পাসনে যেন রে বোকা... --ঘাস আবার শুকৃনো হবে, মাটি আবার শুকোবে, আমরাও আবার শুকনো হবো। ঐ একই স্বৰ্য্য আমাদের সবার জন্যে ।” প্রায় ১৪ ফুট লম্বা এক ঝিলিক্ বিদ্যুৎ তাদের মাথার উপর দিয়ে খেলে গেল, ঘন-ঘন বাজের খুব জোর এক চোট শব্দ হ’ল ; ফীয়ুকলার মনে হ’ল যেন একটা বড় ভারী আর গোলাকার কিছু আকাশে গড়িয়ে বেড়াচ্চে, আর ঠিক মাথার উপরেই আকাশটাকে যেন ছিড়ে খুলে ফেলছে। হাত দিয়ে ক্রুসের চিহ্ন করে টেরেনটি বলে উঠল, "প্রভু, দয়াময়!... তুই ভয় পাসনে খুকু ; ভাবিস নি যেন আমাদের উপর ভগবানের কোনো রাগ হয়েছে বলে’ এ রকম বাজ পড়ছে।” টেরেন্ট ও ফীয়কৃলার পা ভারী-ভারী ড্যালা-ড্যাল ভিজে কাদায় ঢেকে গেছে ; রাস্তাও পিছল হয়েছে, তার উপর দিয়ে ইটো কঠিন, কিন্তু টেরেন্ট ক্রমেই দ্রুতবেগে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলতে লাগল। দুৰ্ব্বল শিশু সেই ভিখারী-মেয়েটা একদম ইপিয়ে গেছে, এমন হয়েছে যে এখনি বুঝি বা সে মাটিতে পড়ে যাবে। অবশেষে তার জমিদারের জঙ্গলটায় এসে পৌছল। বর্ষণ-ধেীত গাছগুলো একটা দমকা হাওয়ায় নড়ে উঠে তাদের উপর একটা নিখুত জল-ধারা ঝরিয়ে দিল । টেরেনট কাটা-গাছের গোড়ায় হেঁচোট খেয়ে' খেয়ে’ এখন আস্তে হাটুতে স্বরু করল । সে বললে, “কৈ, কোথায় ডানিস্ক ? চল তার কাছে নিয়ে চল আমাকে ৷” ফীয়কৃলা তাকে ঝোপঝাড়ের ভিতর দিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রায় সিকি মাইলটাক ঢুকে, ডানিলকাকে দেখিয়ে দিল । তার ভাই, আট বছরের ছোটাে একটি ছেলে,—চুলগুলো তার গেরামাটির মতোই লাল, আর মুখখান তার রুগ্ন পাণ্ডুর—একটি গাছে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে, এক পাশে মাথা ফিরিয়ে আকাশের দিকে দেখছে। এক হাতে সে তার ছেড়া পুরোণে টুপিটা ধরে রয়েছে, আর একটা হাত তার একটা বুড়োলেবু গাছে ঢাকা । ছেলেটি ঝঞ্চ-ক্ষুব্ধ