পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

woSe লোকের দ্বিগুণ কাজ করেন এবং তাহার দুঃখ এই যে তিনি একদিনে তাহার যৌবনকালের মত সাধারণের তিন গুণ কাজ করিতে পারিতেছেন না । এডিসনের আবিষ্কারগুলি যেমন চমৎকার আসল লোকটি আরো চমৎকার । তিনি যদি জীবনের অবশিষ্টাংশ কোনো কাজ না করিয়া কেমন করিয়া কাজ করিতে হয় এ সম্বন্ধে আমেরিকাবাসীদিগকে উপদেশ প্রদান করেন তাহ হইলেও আমেরিকার প্রভূত উপকার সাধিত হয় । বৰ্ত্তমান সভ্যতার অঙ্গীভূত আবিষ্কারগুলির অৰ্দ্ধেকের জন্মদাতা এডিসন, শুধু দিনের খাওয়া পর সম্বন্ধে উপদেশ দিলেও উপকার কম হইবে না । অরেঞ্জ, এন, জে গবেষণাগার হইতে র্তাহার সহিত আলাপ করিয়া মনে হয় যেন একসঙ্গে মোজেস, কলম্বাস ও ডারউইনের সঙ্গে কথা বলিয়৷ অসিলাম। ঐতিহাসিক জগতেও তিনি বৰ্ত্তমানের সব চাইতে প্রসিদ্ধ লোক । ওঁহিীর সম্বন্ধে উপকথা পৰ্য্যস্ত রচিত হইতেছে, তাহাকে অনেক স্থলে দেবতার পদে বসান হইয়াছে। তবে টম এডিসন যে বেশ সাদাসিধে সাধারণ লোক তাহ দেখাইবার জন্ত র্ত্যহার সঙ্গে আমার যে কথাবাৰ্ত্ত হইয়াছিল তাহা লিখিতেছি । তাহার গবেষণাগারের কৰ্ম্মীদের তিনি নিত্য সঙ্গী ও বন্ধু । টমাস এডিসন তাহার চেহারা ছবিতে হয় ত সকলেই দেখিয়া পাকিবেন । এখানেও উহার ৭৯ বৎসর বয়সের একটি ছবি দেওয়া হইল। গম্বুজের মতে প্রকাণ্ড মাথায় বরফের মতে সাদা চুল। লালচে রঙ ; কটা চক্ষুর দৃষ্টি অনির্দিষ্ট ও স্বপ্নময় । মাঝারি গোছ চেহারা, পোষাক পরিচ্ছদ খামখেয়ালী রকমের ; টুপীর ব্যবহার করেন না বলিলেই হয়, গলার স্বর খুব চড়া। এডিসন যেন কারণ্যের অবতার, শিশু-স্বলভ স্বভাব, প্রায়ই অসংবদ্ধ কথা বলিয় থাকেন এবং সব মহাপুরুষদের মতই তিনি আত্মভোল৷ সদাশিব গোছের লোক । তিনি প্রায় এক হাজার আবিষ্কার পেটেণ্ট করিয়া লইয়াছেন এবং তাহার অধিকাংশই মানব-সভ্যতার বহু উন্নতি সাধন করিয়াছে । এখনও প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড র্তাহার মাথায় অনেক গুলি আবিষ্কারের মতলব আছে। আমি ঘুরাইয় ফিরাইয়৷ একথা তাহার নিকট হইতে বাহির করিয়া লই । আরো আবিষ্কার নাই বা করিবেন কেন ? যিনি জীবনে মানুষকে এত দিয়াও এখনো দৈনিক সাধারণ মামুষের দ্বিগুণ পরিশ্রম করিতেছেন তিনি মানুষের জ্ঞান ভাণ্ডারে আরো দুই একটি রত্ন উপহার দিতে না পরিবেন কেন ? এবং তদ্বার। আমি, আপনি, সমস্ত পৃথিবী কি লাভবান হইবে না ? শোনা যায় যে একজন ভ্রমণকারী, একজন এস্কিমো ও একজন দক্ষিণ মেরুদেশবাসীকে ইউনাইটেড ষ্টেটসএর প্রেসিডেন্টের নাম জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন । দুজনেই এডিসনের নাম বলিয়াছিল । আমি তাহাকে সৰ্ব্বপ্রথমেই প্রশ্ন করিলাম, “আপনার কোন্‌ আবিষ্কারটি আপনার সব চাইতে প্রিয় ?” তিনি উত্তর করিলেন, “ফনোগ্রাফ-বয়স্কোপ,” মধ্যে একটি ‘এবং কিম্বা ‘ও’ বলিবার খেয়াল পর্য্যন্ত নাই ! অনেকেই হয়ত জানেন না যে এই অভূক্ত বৈজ্ঞানিকই চলচ্চিত্রের জন্মদাতা। সম্ভবতঃ ১৮৮৭ সালে প্রথমে ইনিই তাহা আবিষ্কার করেন ; তখন লোকে কল্পনাও করিতে পারিত না যে ছবি দিয়৷ গতিকে প্রকাশ করা যায়। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম “আপনি ফেনোগ্রাফ ও বায়স্কোপকে পছন্দ করেন কেন ?” তিনি বলিলেন “আমি গান ভালবাসি বলিয়াই ফোনোগ্রাফকে ভালবাসি ; এই যন্ত্রের আরো অনেক উন্নতি করিবার আছে। চলচ্চিত্রের দৃষ্ঠগুলিই অবসরকালে আমার চিত্ত বিনোদন করে । আমি যে বদ্ধকাল-শ্রবণ-মুথে বঞ্চিত ।” কিন্তু আশ্চৰ্য্য এই যে গ্রামোফোনের আবিষ্কৰ্ত্ত শুধু যে সঙ্গীতপ্রিয় তাহ নহে তিনি গ্রামোফোনের রেকর্ড তেয়ারীর জন্য নিজে গায়ক ও গান নির্বাচন করিয়া থাকেন; তাহার বধিরত র্ত্যহকে কিছুমাত্র দমাইতে পারে নাই । তিনি বহুদিন যাবতই বধির। প্রসিদ্ধ সঙ্গীতবেত্তা বেঠোফেনও নাকি জীবনের অধিকাংশকাল বধির ছিলেন । একেবারে স্বয্য হইতে বরাবর তাপশক্তি সংগ্ৰহ করার সম্বন্ধে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “আপনার সেই সুৰ্য্যযন্ত্রের কি হইল ?” তিনি সেই যন্ত্রের একটি নমুনা তৈয়ার করিয়া সুৰ্য্যের প্রচণ্ড তাপের কিয়দংশ ধরিতে সক্ষমও হইয়াছেন । তিনি বলিলেন “ জ্বালানি দ্রব্য দুষ্প্রাপ্য হইলেই সেটি সংসারে প্রচারিত হুইবে ।” কোনো হস্তরসিক হয়ত বলিতে পারেন কয়লাখনিতে বর্তমানে যেরূপ ধৰ্ম্মঘট স্বরু হইয়াছে তাহতে এই যন্ত্র বাজারে চালানো দরকার। কিন্তু এটা ঠিক যে জিনিষটি অসম্ভব নহে ; মরুভূমিতে কিম্বা মেঘবিহীন দিনে আমরা সুর্য্যতাপ সহজেই সংগ্ৰহ করিতে পারি। দৈনিক সংবাদপত্রের খবর বদি সত্য হয় গত গ্রীষ্মকালে ওয়াসিংটনের ফুটপাতের উপরে সুর্য্যতাপে একটি ডিম সিদ্ধ করা হইয়াছিল। এই যন্ত্রের নামে আমরা এখন হাসিতে পারি কিন্তু আমাদের পরবর্তীয়ের হয়ত আমাদেরই অজ্ঞতায় হাসিবে --- [ মিঃ ম্যাকমোহন ঠাহীকে তাহার অন্যাস্ত গবেষণা বিষয়ে আরো অনেক প্রশ্ন করেন ও তাহার যথাযথ উত্তর পান। তাহার অন্যান্য । প্রশ্নোত্তরের আরো দুই একটি তুলিয়া দিতেছি। ] আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “আপনি সম্প্রতি কি কোনো মুক্তন আবিষ্কারে মন দিয়াছেন ?” তিনি বলিলেনঃ “অনেক গুলিতে, মাছ ডাঙ্গায় না তোলা পয্যন্ত অপেক্ষা কর, জানিতে পরিবে ।”