পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্য। ] আমাকে আমন্ত্ৰণ করিয়া লইয়া যাইতে । বেশীর ভাগ জায়গায়ই প্রায় জবাব পাইলাম যে, আমার কষ্ট করিয়া যাইবার কোনো দরকার নাই, কারণ ওবিষয়ে সে জেলায় কাহারও কিছুমাত্র আগ্রহ নাই । কিন্তু আমি দমিবার পাত্রী ছিলাম না ; আবার লিখিলাম যে, মেয়েদের অবস্থা যদি এমনই সঙ্গীন হয় যে, এ-বিষয়ে তাহীদের কিছুমাত্র আগ্রহই নাই, তাহা হইলে ত আমার সে-সব জায়গায় যাওয়া আরোই অধিকতর প্রয়োজনীয়। স্বতরাং সেই সব জায়গায় আমার যাওয়ার বন্দোবস্ত হইল । এইরূপে আমি সুইডেনের নারীর অধিকার আন্দোলনের অগ্রণী হুইলাম । আমাকে যথাসাধ্য সস্তায় ঘোরফেরার কাজ করিতে হইত, কারণ মহিলা-সংধের কাছে কিছুই সাহায্য পাইবার আশা ছিল না ; কাজেই আমার ভঙ্গুর স্বাস্থ্য আরোই ভাঙ্গিয় পড়িল । কয়েক বৎসর বরিয়া আমি দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য পথে ঘুরিতে লাগিলাম, অনেক দুঃখ ভোগ করিলাম, কিন্তু সৰ্ব্বত্রই সাদর অভ্যর্থনা পাইয়াছিলাম। কখনও বা মস্ত বড়লোকের ধরে অতিথি হইতাম, আবার কখনও বা কোনে দরিদ্র অসহায় রমণী তাহার ক্ষুদ্র কুটীরে আমাকে নিমন্ত্ৰণ করিয়া লইয়৷ ঘাইত। এই প্রকারে আমি নানা সামাজিক অবস্থার ও নানা কৰ্ম্মে ব্ৰতী মেয়েদের সঙ্গে মিশিতে ৭ তাহাদের চিনিতে শিখিলাম ; বুঝিলাম কত বাধাবিপত্তির সহিত তাহাদের সংগ্রাম করিতে হয় ; ফলে নিজের কাজে নিষ্ঠা আমার আরোহ বাড়িয়া গেল । সৰ্ব্বত্রই শ্রোতা ও সমালোচক উভয় দলেই আমার বক্তৃত৷ সাদরে গ্রহণ করিতেন । রক্ষণশীল কাগজগুলি অবশ্য আমাদের বিরোধী ছিল, কিন্তু কখনও একটি ও শক্রজনোচিত কথা বলে নাই । লোকের মনে যাহা আঘাত দিতে পারে অথবা যাহা আক্রমণের মত শোনাইতে পারে, বক্তৃতায় এমন সকল কথা আমি সযত্বে এড়াইয়া চলিতাম । মেয়েদের ভোটের অধিকার দিলে সকলেরই যে মঙ্গল এবং এই অধিকার দেওয়া যে প্রয়োজন এই বিষয়ে অনমার আন্তরিক বিশ্বাসের সহিত আমি বলিয়া যাইতাম । এইরূপে অনেককে দলে টানিতে সক্ষম হইয়াছিলাম ; এবং বাটটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সংঘ স্থাপন করিয়াছিলাম। وS ھ -سے-8b মহিলামজলিস—-হুইডেনের নারীকল্মীর চিঠি vo۹6* ১৯০৩ খৃষ্টাব্দে সুইডেনের উত্তরতম এক প্রদেশে বক্ত তা দিতে যাইবার আয়োজন করিতে করিতে ধাতায়াতের ব্যবস্থার জন্য রাষ্ট্রীয় রেলপথের এক উচ্চ কৰ্ম্মচারীর পরামর্শ লইতে গিয়াছিলাম । এই শীতের গোড়ায় মেরুবৃত্তের চেয়েও উত্তরে যাইবার ব্যবস্থা করিতেছি শুনিয়া তিনি ত আতঙ্কিত হইয়া উঠিলেন ; জিজ্ঞাসা করিলেন, সেপানে হয়ত কয়েকদিনের জন্যই তুষার বর্ষণের জন্য আর্টু কাইয় পড়িবার সম্ভাবনা আছে, এ বিপদের কথা কি আমি বুঝিয়াছি ? তিনি আরো বলিলেন যে, অল্প দিন আগেই মাতাল নাবিকদের চালান দিবার সময় ট্রেনে বিষম দাঙ্গ হইয়া গিয়াছে । সৰ্ব্ব শেষে তিনি বলিলেন, “বৎসরের এমন সময় স্বয় সয়তান ও এ-পথে যাইবার কথা স্বপ্নেও ভাবে না ।” কিন্তু তখনকার রাজনৈতিক অবস্থা এমন, যে, তাড়াতাড়ি যাহা করা দায় তাঙ্গাই করা দরকার। তখন কাহার ও দূরদৃষ্টিতে চোপে পড়িত না যে আমাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আমাদিগকে আরও আঠারো বংসর অপেক্ষা করিতে হইবে । আপাদমস্তক মুড়ি দিবার জন্য পশুলোম সংগ্ৰহ করিতে বাধ্য হইলাম, তুষারপাতে আটক পড়ার ভয়ে এক ঝুড়ি পাবার মোগাড় করিলাম। ট্রেন ছাড়িল, কিন্তু পথে একদল বলগ। হরিণ রেললাইনের উপর আসিয়া পড়ায় এক ঘণ্ট{ আটক ছাড়া আর কোনো দুর্ঘটনার সাক্ষাং আমাদের পাইতে হয় নাই। কিন্তু এই দারুণ শীতে আর নিরানন্দময় অন্ধকারে বার ঘণ্ট যাত্র আর যাহাই হউক সুখকর নয় । কিন্তু আমার মন যখন নারীর অধিকারের ন্যায্য দাবীর আগুনে জলিতেছে, তখন ইহাতে কিবা আসে যায় ? অবশ্য এই সব দুর্গম পথে এমন ভাবে ঘোরাফেরার জন্য পরে আমি অস্থস্থ হইয়া পড়িয়াছিলাম এবং এমন কষ্টকর যাত্রায় আর বাহির হইতে পারি নাই । এই কয়েক বৎসরে আরো অনেকগুলি বক্তার আবির্ভাব হয় এবং প্রায় ২৫০ ( আড়াই শত ) সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় । লোকে যে আমার কথা শুনিতে এবং হওয়া