পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] কাপুরুষতা ও পৌরুষ, এবং প্রত ক্রমণ কেহ যদি আমাদিগকে আক্রমণ করে, কিম্বা আত্মরক্ষায় অসমর্থ কাহাকেও আমাদের সাক্ষাতে বা গোচরে আক্রমণ করে, এবং যদি সে ক্ষেত্রে আমাদের আত্মরক্ষার ও দুৰ্ব্বলের রক্ষার সাহস না থাকে, তাহা হইলে আমরা নিশ্চয়ই ভীরু ও কাপুরুষ । আমাদের বা অন্তের ধৰ্ম্মমন্দির কিম্বা বাসগৃহ বা অন্য সম্পত্তি আক্রান্ত হইলে তৎসম্বন্ধেও এই মন্তব্য প্রযোজ্য । অবশু সাহস থাকিলেও আক্রমণ নিবারণ বা প্রতিরোধ করিবার যথেষ্ট ক্ষমতা আমাদের না থাকিতে পারে, এবং সেই কারণে আমাদের চেষ্টা সফল না হইতে পারে । কিন্তু sেষ্ট নিফল হইলে তাহার জন্য কাপুরুষতাজনিত নৈতিক অধোগতি ও অপযশ জন্মে না । আক্রমণ নিবারণ ও প্রতিরোধ করিবার সাহস থাকিলে এবং তদৰ্থ যথেষ্ট ক্ষমতা থাকিলে মানুষ কেবল আত্মরক্ষা ও দুৰ্ব্বলের রক্ষা করিয়াই নিবৃত্ত হইতে পারে, কিম্বা প্রত্যাক্রমণ ও করিতে পারে। আত্মরক্ষা ও দুৰ্ব্বলের রক্ষা কোন কালে কোন অবস্থাতেই অনুচিত বা নিন্দনীয় নহে, বরং সাধারণতঃ তাহাই কৰ্ত্তব্য । আক্রমণের পর আত্মরক্ষা ৭ দুৰ্ব্বলের রক্ষা করিয়৷ তদনন্মর প্রত্যাক্রমণ না করাই ভাল ; কিন্তু তাহ যদি কেহ করে, তা হা কাপুরুষতার মত লজ্জাকর ও নিন্দনীয় নহে। আততায়ী হইয়া, গায়ে পড়িয়া, চড়াও করিয়া, দুৰ্ব্বলকে আক্রমণ অতিশয় ঘৃণ্য, গর্হিত ও নিন্দনীয় ; ইহা এক প্রকারের কাপুরুষতা বই আর কিছু নয়। ঐ প্রকারে কেহ যদি সবলকে আক্রমণ করে, তাহা সাহসের হিসাবে ভীরুত অপেক্ষ ভাল হইলেও, অদ্য কোন রকম প্রশংসা তাহার করা যায় না ; তাহাও নিন্দনীয় । ভীরুতা ও কাপুরুষতা অতি অধম অবস্থা। সাহস ও পৌরুষ তাহী অপেক্ষ ভাল । সাহস ও পৌরুষের দ্যায্য প্রয়োগ যাহা হইতে পারে, তাহার কিছু আভাস উপরে দিলাম । সাহস ও মনুষ্যত্বের সর্ববাপেক্ষা সাত্ত্বিক ব্যবহার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আততায়ীকে, বিরোধীকে, শক্রকে ক্ষমা । ভীরু কাপুরুষ এইরূপ ক্ষমা করিবার অধিকারী নহে ; কারণ, তাহার বাধা দিবার সাহসই যে নাই । নারীর অপমান ও চূড়ান্ত অনিষ্ট যে করিতে আসে, তাহার ক্ষমা নাই ; তাহার চেষ্টা ব্যর্থ করাই একমাত্র ধৰ্ম্ম । অন্য উপায়ে তাহ সম্ভব ন হইলে, তাহাকে এরূপ আঘাত করা একান্ত কৰ্ত্তব্য যাহাতে তাহাকে নিবৃত্ত হইতে হয়। আঘাত হঠাৎ গুরুতর বা সাংঘাতিক হইয়া গেলে বিবিধ প্রসঙ্গ—ধৰ্ম্ম-যুদ্ধ ও পুণ্য আহরণ eRS তাহা অনভিপ্রেত এবং দুঃখের বিষয় হইলেও তাহার উপায় নাই । খুব দৃঢ়চেতা সাহসী মানুষই প্রকৃত সত্ত্বগুণ লাভ করিতে পারেন, ভীরু কাপুরুষ পারে না। দৃঢ়চেতা সাহসী মামুষের মানবপ্রেম বন্দনীয় এবং মানবজাতির অশেষ কল্যাণের কারণ। যে জাহ্নবীৰ্যমুন আর্য্যাবৰ্ত্ত, মগধ ও বঙ্গদেশকে ধনধান্তে কবিত্বে আধ্যাত্মিক ঐশ্বর্ষ্যে সমৃদ্ধ করিয়াছেন, দৃঢ় কঠিন পাষাণের হৃদয় হইতেই তঁাচাদের উৎপত্তি, কাদার ঢিবি হইতে নহে । ধৰ্ম্ম-যুদ্ধ ও পুণ্য আহরণ মানব ইতিহাসের অতি প্রাচীন কাল হইতেই ধৰ্ম্মযুদ্ধের মহিমা প্রচারিত হইয়া আসিতেছে। ধৰ্ম্মযুদ্ধ অর্থে যে শুধু ধৰ্ম্ম-সংক্রাস্ত ব্যাপার লইয়। ধে-যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাহাই বুঝাইয়াছে, তাহী নহে । যুদ্ধেৰ নিয়মকানুন মানিয়া যেকোন কারণেই যুদ্ধ করিলে মানুষ অনেক স্থলে তাহাকে ধৰ্ম্মযুদ্ধ বলিয়াছে। যুদ্ধই এক প্রকার ধৰ্ম্ম বলিয়া এক শ্রেণীর লোকের নিকট গুঙ্গীত হইয়া আসিয়াছে । তবে অদ্যায়ের প্রতিকার, আত্ম-সম্মান রক্ষা ইত্যাদি কোন কারণ বৰ্ত্তমান থাকিলে তবেই যুদ্ধ ধৰ্ম্মত করা যায়, এই ধারণা সৰ্ব্বত্রই যোদ্ধাদিগের মধ্যে দেখা গিয়াছে । ধৰ্ম্মপ্রচার, ধম্মরক্ষণ বা অধৰ্ম্মের বিনাশের জন্য বিশেষ করিয়া যে যুদ্ধ হয়, শুধু তাহাবে ই কেহ কেহ ধৰ্ম্মযুদ্ধ বলিয়৷ থাকেন । সে অর্থেই আমরা কথাটি গ্রগুণ করি না কেন, দ্যায়যুদ্ধ বলিয় যে কথাটি চলিত আছে, তাহার বিপরীত প্রকারে যে যুদ্ধ হয়, তাহাকে সকলেই ধৰ্ম্মবিরুদ্ধ বলিয়৷ স্বীকার করিয়া থাকেন । ধৰ্ম্মযুদ্ধে ও ন্যায়যুদ্ধে হত হইলে অক্ষয় স্বৰ্গলাভ হয়, এ ধারণ কুরুক্ষেত্র হইতে আরম্ভ করিয়া ইয়োরোপের মহাযুদ্ধ অবধি সকল যুদ্ধেই যোদ্ধাহৃদয়ে পোষিত হইয়াড়ে । যোদ্ধার জন্য বিশেষ বিশেষ স্বগের বন্দোবস্তও প্রায় সকল ধৰ্ম্মেই দেখা যায়। কিন্তু ন্যায়যুদ্ধের নিয়ম রক্ষা করিয়া যুদ্ধ না করিলে সে স্বগে ধোদ্ধার স্থান হয় না, একথাও সৰ্ব্বত্র গ্রাহ হঠয়াছে । কলিকাতার গত হিন্দুমুসলমান দাঙ্গার সময় কোন কোন দাঙ্গার সেনাপতি দাঙ্গাকারী:দিগকে উৎসাহ দিবার জন্য একথা প্রচার করেন, যে, উক্ত দাঙ্গ ‘ধৰ্ম্মযুদ্ধ” এবং দাঙ্কায় “শত্রুপক্ষের’ লোকের প্রাণ নাশ করিতে পারিলে অক্ষয় স্বৰ্গলাভের পথ উন্মুক্ত হইবে, দাঙ্গায় মরিলে স্বৰ্গলাভ এবং নরহত্যা করিয়া বাচিয়া যাইলে বিশেষ পুণ্যলাভ হইবে । এ সকল কথা যাহারা প্রচার করেন,