পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] কোটি সাত্যশি লক্ষ মুসলমানের সঙ্গে স্বাধীন চারি কোটি মুসলমান সবাই যোগ দিলেও এগার কোটির বেশী হয় না। এই এগার কোটি মানুষ একুশ কোটি হিন্দুকে নিশ্চয়ই পরাজিত করিতে পারিবে বলা যায় না। অবশ্য ইংরেজ রাজা থাকিতে এরূপ যুদ্ধ ত হইবেই না। ভবিষ্যতের কথাই হইতেছে । আজকাল যুদ্ধে বিজ্ঞানের খুব দরকার । তাহাতে হিন্দুর মুসলমানদের চেয়ে নিকৃষ্ট নহে। ইহাও মনে রাখিতে হইবে, যে, মুসলমান রাজত্বের উচ্ছেদ ইংরেজদের প্রভূ হইবার আগেই মরাঠা ও শিখেরা কাৰ্য্যতঃ করিয়াছিল । সুতরাং সব হিন্দুই কাপুরুষ নহে এবং যুদ্ধে অনিপুণ নহে । বলা বাহুল্য, আমরা কাহারও সহিত কাহারও যুদ্ধ চাই না ; কোন কোন মুসলমান নেতা ধমক দেন বলিয়াই এই কথাগুলি লিখিলাম । স্বামী শ্রদ্ধানন্দের উক্তি লক্ষ্মেীএ অযোধ্যার দ্বিতীয় প্রাদেশিক হিন্দু সভায় স্বামী শ্রদ্ধানন্দ অস্পৃশ্যতা ও নিম্নজাতির পক্ষে স্কুল, কলেজ,মন্দির ও কুপ ইত্যাদি ব্যবহার-সংক্রান্ত অবিচার দূর করিবার জন্য যে প্রস্তাব উঠে, তাহার সমর্থন করেন । শুদ্ধি আন্দোলন সম্বন্ধে স্বামীজি মুসলমান ও খৃষ্টিয়ানদিগের ধৰ্ম্মপ্রচার প্রণালী বিষয়ে বহু কথা বলেন এবং নিজের কথা যুক্তিতর্কের দ্বারা প্রমাণ করেন। স্বামীজি বলেন যে, এখনও ভারতবর্ষে প্রায় এক কোটি মুসলমান ও চৌত্ৰিশ লক্ষ খৃষ্টয়ান রহিয়াছে, যাহারা জীবনযাত্র-প্রণালী ও সামাজিক সংস্কার প্রভৃতি বিষয়ে ধৰ্ম্মত্যাগ করিবার পূর্বের ন্যায়ই হিন্দুদিগের অনুসরণ করিয়া থাকে। শুদ্ধির প্রথম কাৰ্য্য এই সকল লোককে , হিন্দুধর্মের ক্রোড়ে ফিরাইয়া আনা। হিন্দুধর্মের আদর্শ উদার ও বিশ্বব্যাপী, সুতরাং সনাতন ধৰ্ম্মের আশ্রয় ইহারা পাইবেই। বঙ্গীয় মুসলমান “পার্টি” স্যর আবদার রহিম ও র্তাহার দলের অন্যান্য সকলে মিলিয়া একটি নূতন “পার্টি” গঠন করিয়াছেন। এই পার্টির নাম বঙ্গীয় মুসলমান পার্টি । মুসলমানদিগের পক্ষে, বিশেষতঃ স্তর আবদার রহিমের ন্যায় মুসলমানের পক্ষে, এইরূপ কাৰ্য্য করায় কেহই আশ্চৰ্য্য হন নাই। কিন্তু এই পার্টির যথার্থ উদ্দেশু যাহা, তাহ গোপন করিয়া লোকের মনে অন্য প্রকার বিশ্বাস জন্মাইবার যে চেষ্ট হইয়াছে, তাহা সত্যই হাস্যকর। পার্টির উদ্দেশ্য এইরূপ বলা श्हेब्राप्छ : “স্বায়ত্ব শাসন লাভের প্রথম ধাপ গভর্ণমেণ্ট অফ ইণ্ডিয়া এক্টের কার্য্যদেখিয়া ইহা বুঝা যাইতেছে যে,হিন্দু,মুসলমান, বিবিধ প্র ঙ্গ—বঙ্গীয় মুসলমান “নাট” ۹ سازع খৃষ্টিয়ান, এংলোইণ্ডিয়ান, রায়ত, কুলিমজুর, অস্পৃশ্বজাতি, নিম্নশ্রেণী সকলের হইয়া চিন্তা করিবার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় দলের প্রয়োজন আছে। এই দলের কার্য্য হইবে সকল শ্রেণীর লোকের অাথিক ও মানসিক উন্নতির চেষ্টা করা ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমত। এরূপ করিয়া সকলের মধ্যে ভাগ করিয়া দেওয়া যাহাতে উহা কোন শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ক্ষুদ্র গণ্ডীর একাধিপত্যের মধ্যে থাকিতে না পারে।” একথা সকলেই স্বীকার করিবেন যে এইরূপ একটি পার্টি হইলে তাহ আদর্শ পার্টিই হইবে । কিন্তু স্তর আবার রহিম এবং তাহার সাঙ্গোপাঙ্গেরা তাহাদের কোন গুণ, ক্ষমতা ও অতীত কার্য্যের সাহায্যে প্রমাণ করিবেন, যে, সকল শ্রেণীর লোকের হইয়া তাহারা চিন্তা করিতে “ সক্ষম হইবেন ? অন্য সব শ্রেণীর লোকের কথা ছাড়িয়া দিলাম, কিন্তু বাংলার শুধু মুসলমান মজুর ও চাষাদিগকেই কি এই সকল মহাপুরুষগণ দুদিনের বন্ধুরূপে দুর্ভিক্ষে, বন্যায়, ঝড়ে বা ভূমিকম্পে কোন দিন সাহায্য করিয়াছেন ? ইহারা কি শুধু মুসলমানদিগের উপকারের জন্যও কোন বেসরকারী স্কুল কলেজ স্থাপন করিয়া অমুসলমানের মুসলমানদিগকে প্রদত্ত সাহায্যের সমতুল্য সাহায্যও মুসলমানকে কখনও করিয়াছেন ? আমরা যদি দেখি, যে, স্তর আবদার রহিম তাহার প্রসিদ্ধ আলিগড়ের বক্তৃতার পরে অকস্মাৎ নবরূপ প্রাপ্ত হইয়৷ উদার ও উন্নতমনা হইয়া গিয়াছেন, তাহা হইলে আমাদের মুখের সীমা থাকিবে না। কিন্তু যদি তিনি নব গুণে গুণী হইয়া থাকেন, তবে তাহার উচিত অগ্রে সে গুণের কোন পরিচয় দেওয়া ও তৎপরে বড় বড় কথা বলা । তিনি শ্রেণীবিশেষের একাধিপত্য দমন করিবার কথা বলিতেছেন । এরূপ একাধিপত্য এক বৃটিশ ও এংলোই গুয়ানদিগেরই ভারতে আছে। কিন্তু মেদিনীপুরব নাইটপ্লবর যে বৃটিস ও এংলোইণ্ডিয়ানদিগের বিরুদ্ধে দাড়াইবার মত দুঃসাহসের কাৰ্য্যে ব্রতী হইবেন, তা - আমাদের মনে হয় না । স্বতরাং মনে হয় শিক্ষিত f.দুগণই তাহার লক্ষ্য। কিন্তু স্তর আবদার যদি চক্ষু মেলিয়। দেখেন, তাং হইলে দেখিবেন কোন কোন প্রদেশে হিন্দুগণ সংখ্যা ও শিক্ষার তুলনায় অল্প সরকারী কাজই পাইয়া থাকেন। যথা, যুক্ত-প্রদেশে মুসলমানগণ সংখ্যায় মাত্র শতকরা ১৪ জন ; কিন্তু অনেক বিভাগের সরকারী চাকরী তাহারা ইহার তুলনায় অনেক অধিক পাইয়। থাকেন। বিহারে মুসলমানের সংখ্যা শতকরা দশ এগার জন, কিন্তু সরকারী চাকরীর শতকরা একুশটি তাহার দখল করিয়া আছেন। স্বতরাং তিনি এমন কোন প্রদেশের কথা লইয়াই মাথা ঘামাইতেছেন যেখানে মুসলমানগণের চাকরীর সংখ্যা হিন্দুদের অপেক্ষা কম।