পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२** ংলগ্ন থান ; ছাতনা গ্রাম হইতে শালতোড়া গ্রাম ৭৮ ক্রোশের মধ্যে । এইসকল হইতে মনে হয় বীরভূমের “বাশুলীর" সহিত চণ্ডীদাসের “বাসলীর” কোন সংস্রব নাই ; ছাতনার “বাসলী’ই চণ্ডীদাসের “বাসলী” । ছাতনা বা সামন্তভূম, মল্লভূমেরই অঙ্গীভূত সামন্তরাজ্য । মল্লভূমে বৌদ্ধপ্রভাব বিশেষরূপেই লক্ষিত হয়। বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম গ্রুণের পূৰ্ব্বে বীরহাঙ্গীর ও তৎপূৰ্ব্ববন্ত্রী মল্লরাজগণ মনসার উপাসক ছিলেন । আজিও বিষ্ণুপুরের রাজাদের ছাড়-দেওয়া নিস্কর জমির আয় হইতে বিষ্ণুপুর পরগণার প্রায় প্রতি হিন্দু গ্রামেই মনসার পূজা হয়। কিছু দিন পূৰ্ণ পর্যন্ত বহুপ্রচলিত “মনসার ঝাপান” এপনও অনেক স্থানে সমারোঙ্গের সঠিত সম্পন্ন হয় ; “মনস-মঙ্গল” এখনও কোথা ও কোথা , গীত হয়। পৰ্ম্ম পূজার প্রসার ও মল্লভূমে বড় কম নয় ; বিনোদরাম, কৌতুকরায়, বাকুড়ারায় প্রভৃতি বহু নামে ধৰ্ম্মঠাকুরের পূজা অনেকস্থানেই সমারোষ্টের সঠিত সম্পন্ন হয়। এইসকল ধৰ্ম্মের পজক ব্রাহ্মণ আছেন এবং ব্রাহ্মণেতর জাতি ও তাছেন । তবে “মনসা” ও “বাসলী’ বৌদ্ধতন্ত্রের চইলে , যেখানেক্ট তাঙ্গর গ্রাম্যদেবতারূপে পূজিতা সেখানে সৰ্ব্ব এই ইহাদের পূজক ব্রাহ্মণ ; তাহার হিন্দুর দেবীরূপেই পূজিত। হইতেছেন। ঐ সকল দেবতার মূলে যে বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রভাব আছে, একথা অনেকেই স্বীকার করেন না বা জানেন না । মল্লভূমে ধৰ্ম্মঠাকুরের ভিতর দিয়া বৌদ্ধ প্রভাবের কথা অনেকেই জানেন। রমাই পণ্ডিতের “শুন্যপুরাণ” বিষ্ণু পুরের নিকটবর্তী শল্দা-ময়নাপুরে রচিত হইয়াছিল ; রমই পণ্ডিত জাতিতে ডম ছিলেন ; আজিও রমাই পণ্ডিতের বংশধরগণ বৰ্ত্তমান ; এই বংশের জীবন ডম বিখ্যাত বাদ্যকর। ( এই ডিমু কথাটার সহিত কি ধৰ্ম্মধম্ম-ধম্ এর কোন যোগ আছে ? ) মল্লভূমেরই ইন্দাস থানার অন্তর্গত স্থপসায়ুর গ্রামে সীতারাম দাসের “ধৰ্ম্মমঙ্গল” রচিত হইয়াছিল। যাহারা মল্লভূমের গ্রামে গ্রামে পাটাতন বাধিয়। ধৰ্ম্মমঙ্গল গীত হইতে শুনিয়াছেন তাহাদের কেহ কেহ কিছু দিন আগেও জীবিত ছিলেন দেখিয়াছি। দেখিতে পাওয়া যায় একজন মল্লনুপতিও কতকগুলি ধৰ্ম্মের গান রচনা করিয়াছিলেন । দক্ষিণারায়, প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড মনসা ও বাসলী গ্রাম্য দেবতারূপেই পূজিত হইয থাকেন। গৃহদেবতা ও গ্রাম্য দেবতার পার্থক্য হিন্দুমাত্রেই জানেন । তবে এ দুৰ্দ্দিনে, যখন হিন্দুসস্তান আমরা আমাদের ঘরের সব পবর রাখি না ; অথবা এ স্বদিনে, যখন বাঙ্গালী ভিন্ন অন্যেও বাংলাভাষার চর্চা করিতেছেন, তখন গু দেবতা ও গ্রামা দেবতার পার্থক্য বিবৃত করিবার চেষ্টাকে বিশেষ দুঃসাহসের কার্য্য বলিয়া মনে করি না। গুহস্বামীর প্রকৃতি ও রুচি অতুসারে অভীষ্ট দেবতারূপে যে-দেবতার প্রতিষ্ঠ তাঙ্গর নিজের গৃহে হয় তাহাই গৃহদেবতা ; ঐ দেবতার নিত্য ও নৈমিত্তিক পূজা-পাৰ্ব্বণাদি ঐ গৃঙ্গস্বামীর অর্থব্যয়েই নিৰ্বাহ হয়। গ্রাম-দেবতা গ্রামের সকলেরই পূজিতা , তাঙ্গর নিত্যসেবা সাধারণের বা রাজার প্রদত্ত দেবোত্তর সম্পত্তির আয় হইতে নিৰ্ব্বাহ হয় । দেবোত্তর সম্পত্তি বেশী থাকিলে লঙ্গর আয় ইনে নৈমিত্তিক পাৰ্ব্বণাদিও নিম্পন্ন হয় ; মদি দেবোত্তরের আয়ে সংকুলান না হয়, গামবাসিগণ চাদ দিয়া সে-বায় নিৰ্ব্বাত করেন। ঐ দেবতা গ্রাম্য সাধারণের, কাহার ৭ নিজস্ব নতেন । যিনি চণ্ডীদাস ও রামীরজকিনীকে সঃ জসাধনায় প্রবৃত্ত করিয়াছিলেন, সেই “বাসলী” গ্রাম্য দেবতা ছিলেন ;– “গ্রামাদেব বাসলীরে, জিজ্ঞাস গে করজোড়ে রামী কহে...... সাধন ।” “হাসিয়ে বাসলী কয় শুন চণ্ডী মহাশয় অামি থাকি রসিক নগরে । সে গ্রামে দেবত আমি ইহ জানে রজকিনী জিজ্ঞাস গে যতনে তাহারে।” ইহা হইতে মনে হয় তাহার আসন ও প্রভাব সিদ্ধেশ্বরী, সৰ্ব্বমঙ্গল, নিত্যকালী, জয়দুর্গ প্রভৃতি দেবীগণের সমানই ছিল । কাজেষ্ট ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্য জাতির পূজারী হওয়ার সম্ভাবন ছিল না। সে যাচাই হউক, বাসলী যে গ্রাম্য দেবতা ছিলেন সে-বিষয়ে সন্দেহ করিবার কোনই কারণ নাই । ভূমিকম্পে বা অন্য কোন কারণে মন্দির ভাঙ্গিয় পড়িলে গ্রাম্যদেবতার পুজা বন্ধ হয় না, ইঙ্গ হিন্দুমাত্রেই জানেন । কারণ গ্রামবাসী সকলেই এবং পাশ্ববর্তী গ্রামেরও অনেকে তাহার সেবাইত। অবশু কোন নৈসর্গিক কারণে গ্রামবাসী মাত্রেই গ্রাম্যদেবতার সহিত