পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ— বর্তমান উন্নতিশীলতা ও মধ্যযুগের জ্ঞানালোক-বিরোধিতা ৩৯৫ হয় সেইজন্য বিশেষ চেষ্টা হইতেছে। যাহাতে বৃটিশ সাম্রাজ্যের সর্বত্র পূর্বের ন্যায় অল্প খরচে চিঠি পত্র যাতায়াত করিতে পারে তাহার জন্য বৃটিশ অর্থনীতিবিদগণ উঠিয়া পডিয়া লাগিয়াছেন। কিন্তু দরিদ্র ভারতবর্ষে ডাক মাশুল কমার কোনই লক্ষণ দেখা যাইতেছে না। যুদ্ধের সময় যে ডাক মাশুল বৃদ্ধি করা হইয়াছিল, তাহ বজায় রাখিবার জন্যই গভর্ণমেণ্ট ব্যস্ত,কেন না ডাক মাশুল কমাইলে সামরিক বিভাগের জন্য অপব্যয় করি বার জন্য অর্থের কিছু কম্‌তি হইতে পারে । জাপানের লোকের ভারতবাসীদিগের অপেক্ষ অনেক অধিক ধনবান। তাহারা আমাদিগের তুলনায় অল্প ডাকমাশুল দিয়া থাকে। কিন্তু আমাদের এই জ্ঞানালোকবর্জিত দরিদ্র দেশে সস্তায় চিঠিপত্র প্রেরণ করা যাইবে না ; কেননা সরকার বাহাদুর এ জন্য অর্থ “নষ্ট” করিতে রাজি নহেন। রাজি না হইবার কারণ সম্ভবত এই যে, সস্ত ডাকমাশুল ন হইলেণ্ড ভারতে র্তাহাদের ব্যবসা ও রাজত্ব পূরামাত্রায় বজায় থাকিবে । গভর্ণমেণ্ট ১৮৫০-৫১ খৃঃ অব হইতে আরম্ভ করিয়া ১৯২৩-২৪ খৃঃ অব অবধি ৩২২৮ কোটি টাকা রেলওয়ের জষ্ঠ লোকসান দিয়াছেন। অর্থাৎ বৎসরে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা রেলওয়ের জন্য আমাদের ভারত গভর্ণমেণ্ট লইয়াছেন। কিন্তু ডাকমাশুল হ্রাস করিবার বেল গভর্ণমেণ্ট অর্থাভাব বোধ করিতেছেন, যদিও এই কাৰ্য্য সাড়ে চার কোটির তুলনায় অতি অল্প খরচেই হইতে পারে। রেলওয়ের সাহায্যে ভারতের ধনসম্পদ গ্রাস ও ভারতবাসীকে অধীন করিয়া দাবাইয়া রাখা স্বসিদ্ধ হয়। } সেইজন্যই রেলের জন্য সরকারী টাকা অবাধে ব্যয় করা } হয় । ডাকমাশুল হ্রাসের সহিত দেশের লোকের মুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও উন্নতি আরও ঘনিষ্ঠরূপে সংশ্লিষ্ট থাকিলেও তাহার সামরিক গুরুত্ব নাই এবং বৃটিশ বাণিজ্যের সহিত তাহার সম্বন্ধ প্রগাঢ় নহে। সুতরাং আমরা অধিক ডাকমাশুল দিতে থাকিব । ইহার নাম বৃটিশ বদীনাতা ও ন্যায়পর য়ণ । yপণ্ডিত গণপতি শাস্ত্রী ত্রিবন্দরমের পণ্ডিত গণপতি শাস্ত্রীর নাম সংস্কৃতের বিদ্যার্থী মাত্রেরই বিদিত আছে। ত্রিবন্দরমের রাজপ্রাসাদলাইব্রেরীর, সংস্কৃত কলেজের ও সংস্কৃত গ্রন্থ প্রকাশ বিভাগের অধ্যক্ষরূপে ইনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। শেষোক্ত গ্রন্থ-প্রকাশ-বিভাগের সংস্কৃত গ্রন্থমালা পৃথিবীর সৰ্ব্বত্র প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে। এই গ্রন্থমালার নব্বইটি পুস্তক অদ্যাবধি প্রকাশিত হইয়াছে। yগণপতি শাস্ত্রী কবি ভাসের নাটকগুলি আবিষ্কার করিবার পূৰ্ব্বে পণ্ডিত-মহলে ধারণা ছিল যে মৃচ্ছকটিকই ংস্কৃত ভাষার পুরাতনতম নাটক । মৃচ্ছকটিক সম্ভবতঃ (আন্দাজ) খৃঃ পূৰ্ব্ব ২০০ অব্দে শূদ্রক রাজার দ্বারা লিখিত হয় । ৬/গণপতিশাস্ত্রী প্রমাণ করেন যে ভাসের নাটক গুলি আরও পূৰ্ব্বে রচিত। তিনি কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের এক সংস্করণ প্রকাশ করিয়া টুবিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর উপাধি লাভ করেন। ভারত গভর্ণমেণ্টও তাহার অগাধ পাণ্ডিত্য এবং সংস্কৃত ভাষার জন্য পরিশ্রমের মূল্য স্বীকার করিয়া তাঙ্গকে মহামহোপাধ্যায় উপাধি দান করেন । বর্তমান উন্নতিশীলতা ও মধ্যযুগের জ্ঞানালোকবিরোধিতা বঙ্গীয় মুসলমান পার্টির ইস্তাহারে দেখা যায়, মুসলমান নেতৃবৃন্দ বলিতেছেন : আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, বিজ্ঞান ও শিল্পকলায় ভারতবর্ষের পক্ষে ইয়োরোপের সহিত একত্র অগ্রসর হইয়৷ চলিবার চেষ্টা করার বিশেষ প্রয়োজন আছে এবং ভারতবর্ষকে বর্তমান জগতের উন্নতিশীলতা হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া প্রচীনকালের বা মধ্য যুগের জ্ঞানালোকবিরোধিতার (-olsonrantism এর ) পথে চালাইবার আমরা সম্পূর্ণরূপে বিরুদ্ধে । আমরাও তাই । কিন্তু মুসলমান নেতাগণ ভুলিয়া যাইতেছেন, যে, ধৰ্ম্মঅনুযায়ী রূপে ভোটের ব্যবস্থা, ধৰ্ম্মসমাজের জনসংখ্যা দেখিয়া-চাকুরী বণ্টন, বিশেষ ধৰ্ম্মমতবিশিষ্ট লোকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি কাৰ্য্য উন্নতিশীলতার ঠিক উল্টা ; এবং এই প্রকার কার্ষ্যের ফলেই ভারতবর্ষ প্রাচীন কালের অন্ধকারাচ্ছন্নতার ভিতর অনেকটা থাকিবে বা গিয়া পড়িবে। স্তর আব্দার রহিমের উচিত প্রথমতঃ এরূপ একটি আধুনিক উন্নত জাতি খুজিয়া বাহির করা যাহারা ধৰ্ম্মমতকে রাষ্ট্রীয় নানাবিধ ক্ষেত্রে বঙ্গীয় মুসলমানদিগের স্থায় বড় বলিয়া ধরিয়াছে। তাহার পর তিনি উন্নতির কথা আলোচনা করিতে পারেন। ইয়োরোপীয় জাতিগণের সহিত সমকক্ষত রক্ষা বিষয়ে আমরা বলিতে চাই যে, পারিলে এরূপ করা নিশ্চয়ই উচিত। কিন্তু মুসলমানগণ যখন দেশবাসী হিন্দুগণের সহিতই চাকুরীর যোগ্যতামূলক প্রতিযোগিতায়