পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83 s. বর্ষার ফাকে একটু রোদ পেতেই টপ করে কাজটা সেরে যাচ্ছিলুম। পড় বি ত পড় তোমার কাছেই ধরা পড়ে গেলুম। তা কি করুব বল মা, শুভকৰ্ম্ম কি চাপ থাকে ? তাতে তুমি হ’লে বাড়ার মাথা ।” তরঙ্গিণীর বুক ঠেলিয় একট দীর্ঘনিশ্বাস বহিয়া গেল। মেয়ের বিবাহ যে শুভকৰ্ম্ম তাহা তিনি ভুলিয়া গিয়াছিলেন, অশুভ পৰ্ব্বটাই তখন তাহার সমস্ত মন জুডিয়া বসিয়াছিল । আজ যদি তাহার মেয়ের বিবাহ না হইয়। যাইত তাহা হইলে তাহার ভাগ্যে এত বড় অশুভ ঘটনাটা ত বিধি ঘটাইতে পারিতেন না । তাহার মনের এমন অবস্থায় ছোট জ। যে র্তাহার কাছে নিজের মেয়ের বিবাহের কথা পাড়ে নাই, এটা খুব স্বাভাবিক বলিয়াই মনে হইল ; তবু লুকাইয়। ঘটুকী আনাগোনার খবরে একটু যে অভিমান তাহার মনে আসে নাই, তাহ বলা যায় না। কিন্তু কোথাকার কে ঘটুকীর কাছে তিনি সে কথা বলিতেই বা যাইবেন কেন আর কৌতুহলই বা দেখাইতে যাইবেন কেন ? তাই ঘটুকীকে কিছু না বলিয়া বিদায় দিবার জন্যই তিনি বলিলেন, “আচ্ছা, আজ তবে এস বাছা । শুভ কাজে দশবার আসা-যাওয়া ত অাছেই ।” গোপনীয় খবরটার অৰ্দ্ধেক প্রকাশ করিয়া ফেলিয়া ঘটুকীর কিন্তু সবটা বেশ সালঙ্কারে বলিবার জন্য প্রাণ আকুলি-বিকুলি করিতেছিল। সে তরঙ্গিণীর কথার জের টানিয়া চাকাপারা মুখখানা নাড়িয়া বলিল, “আসব বই কি মা, হাজার বার আস্ব ; বিশেষ যখন বড় ঘরে কাজ হচ্ছে তখন আমরা গরীব দুঃখী কত আশা করেই আস্ব। তোমার গা ছুয়ে বলছি মা ! এত ধন দৌলত দেখিনি কখনও । মেয়ের বিয়ে দিতে হয় ত এমনি ঘরেই হয় । কি বলব মা, বরের যে মাসী বিধবা মামুষ, তা সেও ছাপর খাট থেকে নেমে বসে না । গলায় হার দিয়েছে ষোল ভরির কম হবে না, ধোবো কাপড় ছাড়া ত পরেই না ; দাসী-বাদী অষ্ট প্রহর পিছন-পিছন ঘুরছে। আর জেঠি খুড়ার ত কথাই নেই। তেনাদের গয়নার ভারে দেহ নড়ে না। আর মা, স্বখের শরীর, দুধে ঘিয়েই তৈরি, বলতে নেই, কিন্তু গড়ন সব যা। এই, এই—“ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড ঘট কী হাত নাড়িয়া নিজের বিশাল দেহ দুলাইয়। অঙ্গভঙ্গী সহকারে সে বাড়ীর মেয়েদের মাংসল বৰ্ত্তল দেহের একটা পরিষ্কার ছবি দেখাইবার চেষ্টা করিতে লাগিল। তরঙ্গিণীর এত দুঃখেও হাসি পাইল । তিনি বলিলেন, “বাপ রে, অত মোট শরীর নিয়ে বেঁচে থাকাই যে দায় ।” ঘটুকী হাসিয়া বলিল, “কি যে বল মা, রাজা-রাজড়ার ঘরে কি তা না হ’লে মানায় ? ও সব ছিনে-পড়া হাত পায়ের রূপ ক্যাঙ্গলে গরীবের ঘরেই শোভা পায় । ভগবানের ত বিচার নেই মা, নইলে তোমার মেয়েকে ও ঘরে যেমন সেজেছিল, তেমন সাজন্ত কেউ হবে না।” তরঙ্গিণী চমকিয়া উঠিলেন । তবে কি সেই ঘরেই আবার দুইদিন না যাইতে দেওর জী লোক হঁাটাইতে স্বরু করিয়াছে ? মানুষ এমনি স্বার্থপর বটে ! কিন্তু এই আনাগোনা কথা বাৰ্ত্তার মাঝখানে গৌরীকে যে আর তেমন করিয়া সব লুকাইয়া সধবা মেয়েটির মতই রাখা চলিবে না, সেই ভাবনাটাই তাহার সব চেয়ে প্রবল হইল। ঘটুকী তখনও বকিয়া চলিয়াছে, “তোমার অমন দুর্গ গোঠাকুরুণের মতে মেয়ে মা, তা শাশুড়ী মাগী বলে কিনা—রাক্কসের ঝাড় ছেলেটাকে নাম করতেই চিবিয়ে খেলে ! কি করবে বল মা ? সবই তোমার অদেষ্ট। ছোট মা নেহাৎ ধ’রে পড়েছে নইলে এমন দিনে তাদের মুখের সাম্নে কি আমি এগুই! কত কুকথাই ন শুনতে হয় ।” ঘটুকীর বর্ণনায় তরঙ্গিণী ভিতরে ভিতরে শিহরিয়া উঠিতেছিলেন । তিনি সেখানে আর দাড়াইতে না পারিয়া ভাড়ার ঘরের ভিতরে চলিয়া গেলেন । র্তাহার চোখ ফাটিয়া জল আসিতেছিল । হায় ! তাহার নিষ্পাপ দুধের মেয়েটার কপালে বিধাতা কি কিছু কম দুঃখ লিখিয়া দিয়াছেন যে, তাহার নামে এই সব কথাও তাহাকে শুনিতে হইবে । গ্ৰী হইয়া মা হইয়া যে সংসারের স্বখের স্বাদ পাইয়াছে সে কি বোঝে না যে সংসার না চিনিতে না বুঝিতে শুধু তার কাটা আর জালাটুকু যে মূঢ় শিশুকে মুখ বুজিয়ী আজীবন সহিয়া যাইতে হইবে, তাহাকে গালি দিয়া দুঃখের বোঝা বাড়াইবার আর প্রয়োজন নাই ?