পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ফিরে আসে। ঠাকুর এদিনের পরে সে মানং পূর্ণ করায় তার মন আজ ভারী খুলী । প্রিয় যখন সই-মাকে প্রণাম করতে গিয়ে ডাকূলে “সই নাইতে যাবি না কি ?” সেবা তখন তাড়াতাড়ি হাতের কুটুনে ফেলে রেখে গামছা থান টেনে দিতেই তার ম৷ ব’লে উঠলেন—“অত তাড়া তাড়ি কিসের? পুকুর কিছু পালিয়ে যাচ্ছে না, মাথায় গায়ে তেল মেখে নাইতে যা । প্রিয় তুই একটু বসে শ্বশুর বাড়ীর গল্প কর।” সেবা খুব চট্‌পট্‌ তেল মেখে নিয়ে “আয় সই” বলে সই-এর হাত ধ’রে নাইতে চলে গেল। এত দিন পরে দেখা দু’জনে একটু নিরিবিলিতে কথা কইতে হবে ত । তখন আষাঢ় মাসের প্রথমে সবে বর্ষ। মুরু হয়েছে । নতুন মেঘের ডাক হঁাকে চারদিক জমজম্ ক’রে উঠেছে। 5iসীদের আনন্দ দেখে কে ? মাঠের কাজের কামাই আনন্দের রোমাঞ্চ স্বরূপ কচি-কচি সবুজ ঘাসগুলি, পথ ঘাট সব ছেয়ে ফেলেছে । মাটীর রোদ-পোড় তামাটে রঙ মুছে দিয়ে যেন কে এক পোচ সবুজ রঙ লাগিয়ে দিয়েছে। পুকুরগুলোর জল বড় ড কমে গিয়েছিল, তিন চার পশলা জোর বৃষ্টিতেই জল বেড়ে উঠেছে। দুই সই ঝপ ঝপ ক’রে জলে লাফিয়ে পড়েই স তার কাটুতে লাগল। খানিকক্ষণ মনের আনন্দে সাতার কাট, জল ছোড়া ছুড়ি খেলা হবার পর দুজনেই গলা জলে স্থির হয়ে দাঁড়াল। সেবা বললে, “তোর জন্যে আমার যে ভাই কী মন কেমন কবুত তা’ আর কী বলব, কেবলি মনে হ’ত যদি পাখী হতাম ত একদণ্ডে উড়ে তৈার কাছে চলে যেতাম।” প্রিয় বললে—“আর আমারি বুঝি করত না ? কতদিন দুপুর বেলায় জানালার ধারে একলাটি দাড়িয়ে ভাবতাম সই হয়ত এতক্ষণ মীর কাছে বসে কাথা সেলাই করছে নয় ত বই পড়ছে, নয়ত আমার কথা ভাবছে । (.siを | সেবা বললে,-“ইস্ ! কই, আমি কিন্তু একদিনও দুপুর বেল বিষম খেয়েছি ব’লে ত মনে হয় না তোর কথা মোটেই বিশ্বাস হচ্ছে না! তুই নিজের বর নিয়েই অস্থির থাকতিসূতা আমার কথা ভাব বি কি ; চিঠির প্রবাল 866. জবাব দিতিস্ দশদিন বিশদিন পরে—আর এদিকে আমি তীখির কাকের মতন তোর চিঠির জন্যে ই ক’রে থাকতাম।” প্রিয় সইয়ের গালে একটা ঠোক্কর দিয়ে বল লে— “আর একজনের চিঠি যদি পাবার আশা থাকৃত ত। হ’লে কি আর আমার চিঠির জন্তে তীথির কাক হ’য়ে পথ চাইতি সই !" সেবা উত্তর দিলে না । মুখপান। তার বর্ষার আকাশের মতন মান হ’য়ে উঠতেই প্রিয় ব্যথা পেয়ে বললে— ষ্ট্য। সই পাগলের খবর টবর পীয়ে গেল ?” সেবা মুখের কথার উত্তর না দিয়ে শুধু ঘাড় নেড়ে জানিয়ে দিলে যে পাওয়া যায়নি। সেবার স্বামীর পাঠ্যাবস্থায় মাথ। গরম হওয়ায় হিতৈষী বাপ মা বুদ্ধি ক’রে ছেলের বিয়ে দিয়ে ফেলেছিলেন। অবশ্য তার ভালর দিকটাই ভেবে নিয়েছিলেন ; বন্দর দিকটা তাদের ভাববার দরকারই ছিল না । যদিই ছেলে এর পর পাগল হ’য়ে যায় তা হ’লেও বিয়ে কর। স্ত্রী কিছু তার পাগল স্বামীকে অযত্ব করবে না। বাঙালী দেশে কানা হোকু খোড়া হোকু কুঁজে হোক রুগ্ন হোক অক্ষম হোক পুরুষ যে পুরুষ এই পরিচয় নিয়ে অনায়াসে কনের বাজারে বেরুলেই বাঙ্গী মাং । স্বতরাং ঘরবাড়ীর অবস্থা ভাল, একট-পাশ-কর ছেলে— —কি নাকি, একটু মাথা গরম মাত্র হয়েছে বলে তার সঙ্গে বিয়ে দিতে সেবার বাপ মা একটুও পেছ-পা হলেন না। বিয়ের মাস দুই পরে পাগল যখন ঘোর উন্মাদগ্ৰস্ত হ’ল তখন সেটা ক’নের অদৃষ্ট ব’লেই সবাই মেনে নিলে। তার পর হঠাৎ একদিন পাগল নিরুদেশ ! পাগলের বাপ মা অপয়া বউএর মুখ দেখতে চাইলেন না। সেবার মা চোখের জলে ভেসে রূপের ডালি একমাত্র মেয়েকে নিজেরই বুকের উপর টেনে নিলেন। পেটে যখন ঠাই দিয়েছেন, হাড়িতেও স্বচ্ছন্দে ঠাই দিতে পারবেন বললেন। এই হচ্ছে সেবার স্বামী ভাগ্য ! হঠাৎ প্রিয় ব’লে উঠল “আমার সেই প্রবাল ঠাকুরপো সই, এখনো বিয়ে করেনি, আশ্চৰ্য্য মানুষ ভাই ! এক ঝলক হাসির আভায় সেবার মান মুখ উজ্জল হ’য়ে উঠল,