পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] প্রবাল 8@ዓሉ শিখরের দিদি রমার সঙ্গে যে ভাবটা জমল সেটা বেশ পরকুংসা প্রভৃতি অভ্যাসগুলে। মোটেই ক’রে উঠতে 外g1 প্রিয়র বাসার আঙ্গিনায় বেশ একটি বড় কুলগাছ ছিল। সেই গাছটির স্বপক নারকুলে-কুল পাড়ার ছোট বড় সবারি লোভের জিনিষ, তবে ছোটর সে লোভ অকপটে প্রকাশ করতে সঙ্কোচবোধ করে না, বড়দের সঙ্কোচ লোভকে ছাপিয়ে যায় । একদিন সকালবেল শীতের প্রথম রোদে বসে প্রিয় কি-একটা সেলাই করছে, নন্দ এসে আঙ্গিনায় দাড়াল, সঙ্গে তারই সমবয়সী একটি বছর দশেকের ছেলে। প্রিয় জিজ্ঞেস করলে, “ছেলেটি কে রে নন্দ ? বেশ ফুটফুটে তো।” নন্দা বললে— “মিত্তির গিন্নির ছোট ভাই, কুল খেতে এসেছে।” এক ঝলক রোদ কুলগাছের ফাক দিয়ে ছেলেটির মুখের ওপর পড়েছিল । প্রিয়র ছোট ভাইটি প্রায় অত বড়ই হবে, তবে সে সুন্দর ন—শু্যামবর্ণ। প্রিয়র চোখে ছেলেটিকে ভারী ভাল লেগে গেল । সে সেলাই রেখে কাছে গিয়ে ছেলেটির চিবুকে হাত দিয়ে স্নেহমাথা স্বরে জিজ্ঞেস *বুলে—“তোমার নাম কি ভাই ?” ছেলেটি মিষ্টিগলায় বললে “শিখর।" রমার সঙ্গে ইতিপূৰ্ব্বে প্রিয়র দু' চারবার দেখাশুনা ইয়ে গেছে। রমা প্রিয়ুর চাইতে বয়সে বছর দুয়ের বড়ই হবে। তাতেই রমাকে প্রিয় দিদি বলতে চাইত। রমার ভাইকে সহজেই সে নিজের ভাই বলেই স্বাকার করলে । শিখরকে কুল পেড়ে খাবার হুকুম দিতেই তার আর আনন্দ দেখে কে ? প্রিয়র বড় মেয়ে মিন এসে মার আঙ্গুল ধরে জিজ্ঞেস্ করলে “ও কে মা ?” মা পরিচয় দিলেন “মামাবাবু।” মিনা খুলী হ’য়ে তখনি মামাবাবুর সঙ্গে ভাব ক’রে নিলে । এই পরিচয়-স্বত্রটি ধ’রে বিশেষ ক'রে কুলের টানে সকালে বিকালে রোজই শিখর নূতন দিদির বাড়ী আসা যাওয়া জর করে দিলে। এক বিদেশে প্রিয় এমনি ক’রে চারদিক থেকে, ভাই-বোন প্রভূতিব অভাব পুরিয়ে নিতে লাগ ল । কিন্তু প্রতিবাসিনীদের সঙ্গে প্রিয়র খুব বেশী খাপ পেলে না, কেননা সে পল্লীবধু, পল্লীবালা হলেও পরচর্চা, পারেনি। তার আনুষঙ্গিক ব্যাপার তাস্ টাস্ খেলা ও পান দোক্তার শ্রাদ্ধ করাতেও স্ েঅভ্যস্ত ছিল না, কাজেই সবার সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তায় প্রাণখুলে যোগ দিতেও পারত না, হাসাহাসিও জমিয়ে তুলত না। এদিকে তার চেষ্টাও কিছু ছিল না সুতরাং দু’দশদিনের মধ্যে “ইনিস্পেক্টার-গিন্নির যে বেজায় দেমাক,” এই তথ্যটি চার দিকে র’টে গেল। প্রিয়র গায়ে কতকগুলি দামী দামী গহনা ছিল। সেগুলো কেদারের দেওয়া মোটেই নয়, জমিদার শ্বশুরের দান। পল্লীগৃহিণীর মেনে নিলেন “দামী দামী অমন গহনা তো পাড়ার কারুর নেই, তাতেই বড়মানুষের-গিন্নি তাদের সঙ্গে ভাল ক’রে মিশতে চান না।” প্রিয় বাড়ীতে বসেই সবার মন্তব্য গুলি সহজেই শুনতে পেতে ; কারণ নন্দ পাড়ারই মেয়ে আর প্রতি গৃহে তার সাক্ষ্য-সকাল ভ্রমণ নিয়মিত ভাবে হ’তে থাকে, যেখানে যা শোনে সে আবার নিয়ম মতন সে খবরগুলি “ইনিস্পেক্টার-মার্সী"কে শুনিয়ে যায়। আবার খিড়কীর পুকুরে জয় যেখানে বাসন মাজ তে বসে, সেখানে পাচ ছয় বাড়ীতে দাসীরা সমবেত হ’য়ে হাতের কাজের সঙ্গে সমানে মুখের গল্প চালায় । সেই গল্পগুজবের মধ্যে নিজেদের ঘলা ও সুখ দুঃখের কথা থেকে আপন আপন মনিবদের বাড়ীর সংবাদপত্র ও দেওয়৷ নেওয়া করে । এত গেল নতুন দেশে নতুন গৃহিণী প্রিয়র নতুন ংসার স্থাপনের কথা। এইবার কেদারের অবস্থার সঙ্গেও একটু পরিচয় করতে হয় । কেদারকে এখন দেখলে আগেকার সেই গৌরবর্ণ ছিপছিপে দীর্ঘাকায় যুবক ব’লে চেন যায় না, এখন তার শরীরটি বেশ স্থূলাকার হ’য়ে উঠেছে, গোফ কামিয়ে মুখের শী বদলে গিয়েছে। বড়লোকের ছেলে হ’লেও চালচলন তার খুব সাদাসিধে ছিল। প্রবালের স্ব ভাবের প্রভাব সে বেশ একটু মেনে চলত, সেইজন্তে যুব বয়স পয্যন্ত তামাক-সিগারেটটিও ধরতে পারেনি। এখন দিনে সে এক বাক্স সিগার ত নিত্যই খায়, বরং সিগাবের ওপর আর কিছু যায় না ব’লে পুলিশে তার নাবালক নাম রটে গেছে। নতুন দেশে আসতেই দলে দলে বাবুরা এসে তার সঙ্গে আলাপ ক’রে