পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] প্রবাল 8dS বাজে কথার আডডা । আচ্ছা দেখুন এ-সহরে অনেক ভদ্রলোকের বাস দেখছি, একটা লাইব্রেরী কি-কিছু এখানে নেই কি ? ভদ্রলোকরা সন্ধ্যের পর সময় কাটান কি ক’রে ?” নবীন উৎসাহের সহিত বললে—“কেন মশাই, থিয়েটারের আখড়। ঘর রয়েছে, ধৰ্ম্মকথা কইতে ইচ্ছে করেন হরিসভা রয়েছে, বার লাইব্রেরী রয়েছে, আমাদের দেশে নেই কি ?” কেদার বললে,—“হরিসভার ঠাকুর ত ঐ রাধারমন গোসাই ? ত। তিনি ত সন্ধ্যে সাতটা না বাজ তেই পাশার আড্ডায় এসে জোটেন , ঠাকুরের সন্ধ্যারতি শীতল এগুলো কথন সারেন ?” ভূধর বললে—“তার একটুও ক্রটি করেন না। সব ঠিক ঠিক পুজে। সেরে তবে আড্ডায় আসেন।” কথা কইতে কইতে সকলে কেদারের বাসার কাছে এসে গিয়েছিল। বাবুকে পৌছে দিয়ে সেলাম ঠুকে থানার কনেষ্টবল আলো নিয়ে চ’লে গেল। কেদার বাইরের ধরে ঢকে ভূধর ও নবীনকে বসিয়ে বাড়ীতে পোষাক ঈড়ি তে গেল। রম তখন প্রিয়র কাছে বেড়াতে এসেছিল কেদারের সাড়। পেয়েই প্রিয়র মেয়ে মিনাবাব বাবা’ ব’লে নাচতে নাচতে বাপের কাছে ছুটুল। রমা একটু মুচ কে হেসে প্রিয়কে ঠেলে দিয়ে বললে—“মেয়ের সঙ্গে মেয়ের মা না দৌড়লে ভাল দেখাচ্ছে না যে ।” প্রিয় হাসির পাণ্ট জবাব দিয়ে বললে—“মাসির বুঝি দৌড়মারার অভ্যেসটি বেশ পাক ?” রমা বললে— “পাকা হ’লেও ত পিছিয়ে র’য়ে গেছি। নাগাল আর পেলাম কই? তবে নতুন নতুন যে না পেয়েছি তা নয় ।” প্রিয় একটু অবাক হ’য়ে বললে—“আচ্ছা ভাই সত্যিই কি কৰ্ত্তাটি তোমার—” প্রিয় লজ্জায় আর কথাটি শেষ করতে পারলে না। মতি-বাবুর চরিত্র-সম্বন্ধে এদিকে সেদিকে অনেক কথাই সে শুনতে পাচ্ছে ; কিন্তু রম। যেমন সদা হাস্যমুখে ঘরকন্নার কাজ করে, প্রিয়র সঙ্গে কৌতুক তামাসা করে, তাতে প্রিয়র একটুও বিশ্বাস হয়নি যে, তার স্বামী কুচরিত্র। مراصد هج 6 তাহ’লে কি সে এমন ভাবে হেসে খেলে দিন কাটাতে পারে ? যার বুকে জগদ্দল পাথরের বোঝা—তার সাধ্য কি সহজভাবে চলা ফেরা করে ? গল্প উপন্যাস প্রিয়র অনেক পড়া হয়েছিল ; তাতেই সে প্রথমে মনে কবুত বুঝি রমার হাসির আড়ালে অশ্রীর অফুরন্ত ধারা লুকিয়ে আছে । কিন্তু নিজের তীক্ষ দৃষ্টিতেও তা সে কোনো দিন ধরতে না পেরে ভাবত তবে এসব বাজে গুজব । প্রিয়র কথার অর্থ সহজেই ধরে নিয়ে রমা বললে— “আচ্ছা ভাই, তোমার বরটির যদি বাইরের টান থাকে তা হ’লে তুমি কি কর?” “কি করি ?” ফল্‌ ক’রে এই কথাটা ব’লে ফেলেই প্রিয় চুপ হ’য়ে গেল। সে যে কি করে তা ত সে নিজেই জানে না, তবে অন্তকে তার কি জবাব দেবে ? তবে সইতে যে পারে না এইটে খুব ঠিক কথা ; রমার মতন হাসিখুসি নিয়ে সে দিন কাটাতে কিছুতেই পারে না, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। কথাটা ভাব বামাত্রই প্রিয়র চোখ দুটি জলে ভ'রে এলো । রম তা দেখে খপ করে প্রিয়র হাতথান ধরে ফেলে বললে—“ছি ভাই, হাসির কথায় কি কাদতে আছে ? আমি একটু ঠাট্টা করেছি বইত না ।” ব’লেই রমা থেমে গেল। একবার নিজের অতীত জীবনের দিকে চাইতেই নিজের বধু-জীবনের একদিনকার ছবি মনের চোখে ভেসে উঠ ল—স্বামীর চরিত্র-দোষের কথা প্রথম জানতে পেরে কি কান্নাটাই সে কেঁদেছিল। আজ ভাবতে গেলে সে কান্নাটাকে ছেলেমানী ব’লেই মনে হয় ; অথচ সেদিন সে ননদদের ডাকাডাকি, শ্বাশুড়ীদের ইঁাকাহঁাকি সব উপেক্ষা ক’রে একটা কোণেরঘরের মেঝেতে মুখ গুজে পড়েছিল। পিসশ্বাশুড়ী খনূখনে গলায় বলেছিলেন—“এসব কেমন সোয়ামীকামড়া মেয়ে গো ? পুরুষ মানুষ কোথায় কি করে সেদিকে তোর চোখ দেওয়ার কি দরকার ? তোর ঘরের খী পর, সোয়ামী এখন যদি পাচ জায়গায় যায় তোর তাতে কি দুঃখু ? এমন নয় যে ঘরে আসে না, বসে ন-” খুড়শ্বাশুড়ী বলেছিলেন—“আমাদের কালে এমনটি ছিল নী বাপু । এমন কেঁদে ঢলাঢলি, ছিঃ ম্যাগে৷ ”