পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eয় সংখ্যা ; কাব্য কথা 8ჯY গুলির নাম করা ভিন্ন অন্য উপায় নাই। আমাদের দেশেও উৎকৃষ্ট কাব্যের লক্ষণ-বিচার করিয়া, কাব্যের একটি আদর্শ গড়িয়া উঠিয়াছিল। এই আদর্শ ও তদনুযায়ী কবিকৰ্ম্মের ধারণা একটু বুঝিবার চেষ্টা করিলে ভালো হয়, কারণ পুরাতনের সহিত নূতনের প্রভেদ কোথায় তা : স্থিরীকৃত না হইলে, কাবাপরিচয়ের ভিত্তি দৃঢ় হইবে না । এসম্বন্ধে যতটু বুঝিবার স্থযোগ পাইয়াছি তা:ার জন্য আমি প্রধানত: ডাঃ শ্ৰীযুক্ত স্বশীলকুমার দে মঙ্গশয়ের বহু গবেষণাপূর্ণ স্ববুহুং গ্রন্থের নিকট ঋণী । * অবশ্য এই আলোচনায় আমার মতামতের জন্য সেই পণ্ডিত ব্যক্তিকে দায়ী করা যাইবে না। কাব্যের মূলে কবিকল্পনা, এবং কবিকল্পনার কারণ কবির প্রতিভা---এমন কথা বলিতে কোন ও আপত্তি নাই। কিন্তু, এই কবিকল্পন। কি এবং কতটকু জিনিষ, তাহার নির্ণয়ের উপর কবিশক্তির মূল্য বা গৌরব নির্ভর করিতেছে। আমরা যাহাকে কবিকল্পনা বলি কবির সেই অন্তর্গত ভাবকৰ্ম্মকে সংস্কৃত আলঙ্কারিক ‘কবিব্যাপার কবিকৰ্ম্ম বা ‘কবিকৌশল বলিয়াছেন। ‘কল্পনা’ এই শব্দটি কুত্রাপি এই সম্পর্কে ব্যবহৃত হয় নাই। কারণ, আধুনিক কাব্যজিজ্ঞাসার যে প্রধান বিষয়—কবিমানস ও কাব্যবস্তু, সংস্কৃত কাব্যশস্বের প্রয়োজনের বহির্ভূত। এ সম্বন্ধে উঃ দে তাহার গ্রন্থের এক স্থানে পাদটীকায় বলিতেছেন— The Indian theorists have almost neglected an important part of their task.viz., to find a definition of the nature of the subject of a poem as the product of the noot's mind ; this problem is the main issue of Wostern Aesthetics. [ অর্থাৎ ভাবতীয় পণ্ডিতগণ কাব্যশাস্ত্র আলোচনীর একটা ঠিক প্রায় লক্ষ্যই কবেন,নাই,—প্রত্যেক কাবই কবিমানসপ্রস্থত অতএব তাহার বিষয়-বস্তুর যে বিশেষত্ব নির্দেশের প্রয়োজন সে দিকে উহার যত্নবান ঈন নাই ; পাশ্চাত্য সুন্দর-তত্ত্বের ইহাই প্রধান সমস্ত । ] এসম্বন্ধে বেশী কিছু বলিবার পূৰ্ব্বে কাব্য ও কবিপ্রতিভা সম্বন্ধে অলঙ্কার-শাস্ত্রের মত সংক্ষেপে উদ্ধত করা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না প্রথমেই কবিপ্রতিভা বিষয়ুক কয়েকটি উক্তি চয়ন করিয়া দিলাম।

  • Studios in the History of Sanskrit Poetics. Wol, II.

ভাম ও দণ্ডী এই প্রতিভাকে নৈসর্গিকী’ ও ‘স জা বলিয়াছেন । বামনের মতে এই প্রতিভা —“জন্মান্তরগত সংস্থাবলিশেম: কশ্চিং”, ইহারই মধ্যে কাব্যের বীজ নিহিত থাকে। মৰ্ম্মট ইহাকে ‘শক্তি’ বলিয়াছেন । অভিনব গুপ্ত ইহার নাম দিয়াছিলেন প্রজ্ঞ' বা উৎকৃষ্ট বুদ্ধি, ইহাই অপূৰ্ব্ব বস্তুনিৰ্ম্মাণক্ষম’, ইহার প্রধান পরিচয়— “রসাবেশ-বৈশদ্য-সৌন্দর্য্য কাব্যনিৰ্ম্মাণক্ষমত্বং ” ইহাই ভরতনির্দিষ্ট কবির অন্তর্গত ভাব । এই প্রতিভাকেই অভিনব গুপ্তের গুরু ভট্ট তেীতের একটি শ্লোকে “প্রজ্ঞা নবনবোল্লেখশালিনী” বলা হইয়াছে। পরবত্তী আলঙ্কারিকগণ এই শ্লোকটিকে শাসবাক্যের মত মানিয়া লইয়াছেন, কেবল কেচ কেহ ইহার উপর আর একটি বিশেষণ যোগ করিয়াছেন --‘লোকত্তর ; এবং ইহা রচনার বৈচিত্র্য ‘বিচ্ছিত্তি’ ‘চারুত্ব’ ‘সৌন্দর্য্য’ বা ‘রমণীয়ুত্ব’ সম্পাদন করে বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন । রাজশেখরের ‘কাব্যমীমাংসায়’ কবি সম্বন্ধে, শক্তি, প্রতিভা (রচনাকৌশল) ব্যুৎপত্তি,(culture) ও অভ্যাসএই চারি গুণের উল্লেখ আছে। এই চারিটি ছাড়া ‘সমাধি’ বা চিত্তের একাগ্রতা ও একটি গুণ বলিয়া কেহ কেহ উল্লেখ করিয়াছেন । যাযাবরীয়গণের মতে, কবিত্বের কারণ ‘শক্তি”–এই শক্তির ফলেই প্রতিভা’ ও ‘ব্যুৎপত্তি’র উন্মেষ হয় । এই প্রতিভার আবার দুই দিক আছে – একদিকে ইহা ‘কারয়িত্ৰী’, আর এক দিকে ইহা ‘ভাবয়িত্ৰী’ । অলঙ্কারশাস্থের এই বচনগুলিতে প্রতিভার যে পরিচয় আছে তাহা এক হিসাবে যথার্থ। কবি প্রতিভা দিব্য প্রধত্ব হইলেও, এমন কি প্রাক্তন-সংস্কার বলিয়া মানিলেও ইহা যে অভ্যাস ও ব্যুৎপত্তি দ্বারা মাজ্জিত হয়, একথাও সকলে স্বীকার করিবেন। কিন্তু কবিব্যাপার বা 'কবিকৰ্ম্মে’র স্বরূপ অনুসন্ধান করিতে হইলে, ওই নিবনবোল্লেখ শালিনী’ ও ‘অপূৰ্ব্ব বস্তু নিৰ্ম্মাণক্ষম বিশেষণ দুইটি ভালো করিয়া বুঝিতে হয় । এজন্য সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রে কাব্যের যে ধারণা প্রথম হইতে শেষ পর্য্যন্ত দাড়াইয়া গিয়াছে, তাহার একটু আলোচনা আবশ্বক। কোনও মতবাদের মূল্য নিরূপণ আমার উদ্বেশু নয়, আমি চাই,