পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“8○や -সহিত যুক্ত করিয়াছে। প্রাচীন কাব্যশাস্থের বিধিনিষেধ এখন অচল । এখনকার কাব্যে অলঙ্কার আছে, কিন্তু ব্যাকরণ নাই ; সে গুণদোষসমন্বিত রীতি আছে তাহা কবির ব্যক্তিগত ভাবপ্রেরণার অনুগত, শাস্বনিয়মের অধীন নয় ; যে রস আছে, তাহাতে পদে পদে রসাভাস খটিয়াছে। আধুনিক রুচি বিশ্ববিদ্যাবাৰ্ত্তাবিধির দ্বারা মার্জিত। সৰ্ব্বদেশের সর্বযুগের সাহিত্য-সম্ভার এক্ষণে রসিকচিত্তের গোচরীভূত । কালিদাস ভবভূতির কবিপ্রতিভা এখন আর সংস্কৃত অলঙ্কারের মানদণ্ডে যাচাই হইবার নয়, নিখিল রসিকচিত্তের রসবিলাসে তাঙ্গার প্রকৃত মূল্য নিরূপিত হইয়াছে। তাই কাব্য সমালোচনায় -নূতন আদর্শের—কবিকল্পনার—নূতন করিয়া মূল্য নিরূপণের প্রয়োজন আছে । কিন্তু আমার উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হঠল জানি না । কবিকল্পনার স্বরূপ-পরিচয়ই ছিল আমার উদ্দেশ্য । এ সম্বন্ধে এ পর্য্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক যত কথা বলিয়াছি, তাহতে ব্যাপারটা অস্থত; কতক পরিমাণে পাঠকের মনে ধরিয়াছে বলিয়া আশা করিতে পারি। কোনও তত্ত্বালোচনা বা মনস্তত্ত্ব ঘটিত বিশ্লেষণ অামার সাধ্য নয় । ‘কল্পনা" কথাটির প্রচলিত পরিচিত অর্থ সকলের জান আছে। কবি-প্রতিভার বিশিষ্ট শক্তিরূপে ইহার যে ধারণ আধুনিক কাব্য-বিচারে স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে তাছাই আমার আলোচনার বিষয় । ইহার সঙ্কীর্ণ ও ব্যাপক দুই অর্থেরই ইঙ্গিত আমি ইতিপূর্বে করিয়াছি। সংস্কৃত অলঙ্কার-শাস্ত্র অনুসারে এই বস্থর মূল্য কতটুকু দাড়ায় তাহার আভাস দিয়াছি। ইয়ুরোপীয় কাব্যসাহিত্যে ইহার স্বরূপ কি, তাহারও একট, পরিচয় দিয়াছি। এ প্রসঙ্গে সংস্কৃত আলঙ্কারিকের ধারণা ও ইয়ুরোপীয় সাহিত্যের যুগ বিশেষের ধারণা তুলনা করিয়া দেখিবার ভার পাঠকের উপরেই রাখিলাম। এক্ষণে ‘কল্পনার’ কোনো সংজ্ঞা নির্দেশের চেষ্টা না করিয়া মানব মনের এই আদিম প্রবৃত্তি সাহিত্যে কতরূপে প্রকাশ পাইয়াছে, তাহার মূলে কাব্যস্থষ্টির কত বিভিন্ন প্রেরণা রহিয়াছে, সেই সঙ্গে কবিপ্রতিভার বৈচিত্র্য ও তাহার পরিচয় স্বরূপ, কবিকল্পনার কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৩ { ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড নিদর্শন উদ্ধত করিব—এই নিদর্শন সমূদ্র হইতে জলগগুষের মত। কারণ মানবের মনোজগৎ বিশাল বহিজগৎ অপেক্ষ বিস্তৃত ; মানুষের জ্ঞান-অজ্ঞানের যত দিক ও যত পথ আছে সৰ্ব্বত্র এই কুহকিনী কল্পনার অবাধগতি । মনুষ্যচিত্তের সেই বিরাট বিশ্বরূপ দেখিয়া কবি ও সন্ত্রস্ত হইয় উঠেন— Not chaos, not The darkest pit of lowest Erebus Nor aught of blinder vacancy scooped out By help of dreams—can loroet such fear and awe As fall upon us often when we look Into our minds into the Mind of Man.” প্রলয়ের একাকার তলাতল পাতালের অন্ধতম গুহt. কিম্ব সেই অনাহুষ্টি আরো শস্যময় পুড়ে তুলি স্বপনের খনির সঙ্গীয়ে— সেও নাহি পারে হেন করিতে বিহ্বলল ভয়ত্রীসে, যথা যবে করি আঁখিপাত আপনার চিত্তমাঝে, মানব-মানসে । ] —এই অখিল মানব-চেতনার উপরেই কাব্য-লোক প্রতিষ্ঠিত ; ইহা যেমন আদি অন্তহীন, কল্পনার স্বষ্টি ও তেমনি বহুবিচিত্র । আমি এই কল্পনার পরিচয় স্বরূপ কয়েকটি কাব্যাংশ এখানে উদ্ধত করিব—কোনোরূপ মনস্তত্ত্বঘটিত বিশ্লেষণ অথবা অলঙ্কার-শাস্বসম্মত শ্রেণীনির্দেশ আমার কৰ্ম্ম নয় । প্রাকৃতিক ব্যাপারগুলির মূৰ্ত্তিকল্পনা, জড়বস্তুতে চিদবুদ্ধির আরোপ—মানবমনের অতি আদিম প্রবৃত্তি। রূপকথার সোণার কাঠি, রূপার কাঠি, পক্ষীরাজ ঘোড়। প্রভৃতি বোধ হয় এই কল্পনারই আর এক স্তর। দশমুণ্ড রাবণ, কচ্ছপীর দুগ্ধ—এমন কি অতি পরিচিত অশ্বডিম্বের কথাও এই স্বত্রে স্মরণযোগ্য । আমাদের কবিকঙ্কণের কমলে-কামিনীর রূপ বর্ণনা মনে করুন—কল্পনা যে কেমন অঘটঘটনপটিয়সী তাহা বুঝিতে পরিবেন। পৌরাণিক দেবদেবীর রূপ-কল্পনায়, জপ-বিবর্জিতের যে রূপ ধ্যানের দ্বারা কল্পিত হইয়াছে তাহাতেও এই কবিমানসক্রিয় বৰ্ত্তমান। আবার কোনও জ্ঞানকে হৃদয়ঙ্গম করিবার জন্য, চিন্তাকে ভাবে এবং ভাবকে রূপে ধরিতে গিয়া এই কল্পনাবৃত্তি কেমন বিরোধাভাস ফুটাইয়াছে – “শিবের গলে সর্প, নিকটেই সর্পভুক ময়ূর ; মন্তকে শীতলয় গঙ্গা,