পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏜᏄ8 আমাদের আটের ভিতর যে ভেজাল ঢুকেছে, তাকে প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রকৃতির ভিতর, জীবনের ভিতর ফিরে যেতে হবে ; মুক্ত করবে কে? তার ভিতর নবীন প্রাণের স্পন্দন দিবে তার রং ও রেখা শিল্পীকে ফোটাতে হবে। তবেই কে ? আমাদের আর্টে আবার নবীন প্রাণের চেতনা জাগবে । মৃত্যু-দূত সেলমা লাগরলফ, তৃতীয় পরিচ্ছেদ মৃত্যু-থান গীর্জাচুড়ার ঘড়িটি বারোবার ঢং ঢং করিয়া দিগন্ত ধ্বনিত করিয়া তুলিতে না তুলিতেই একটি তীক্ষ্ণ তীব্র শব্দ শ্রত হইল ; তাহ যেন আকাশকে চিরিয়া ফেলিতেছিল । শব্দটি ঘন-ঘন শোনা যাইতে লাগিল ; অল্প একটু অবকাশের পর দ্বিগুণ তীব্র ইয়। কানে বাজিতে লাগিল ; ঠিক ধেন কোন গাড়ীর তৈলহীন চাকার ক্যাচর্কোচ শব্দ ; এত তীব্র ও এমন বীভৎস যে মনে হইতেছিল, এখনই গাড়ীখানি চুরমার হইয়া ভাঙিয়া পড়িবে। ঠিক ধেন ব্যথিতের তীব্ৰ আৰ্ত্তনাদ । এ শব্দ কল্পনাতীত ব্যথা ও অনাগত যন্ত্রণার আশঙ্কা মনে জাগাইয় দেয় । সৌভাগ্যের বিষয়, এই বিজাতীয় শব্দ সকলের কানে পৌছিল না ; পুরাতন বৎসরকে বিদায় দিয়া নূতন বৎসরকে অভিনন্দত করিবার জন্য যাহার পথে-ঘাটে সমবেত হইয়াছিল তাহারা কেহ এই শব্দ শুনিল না। যে আনন্দোন্মত্ত যুবকের পথে-পথে, বাজারের ধারে কিম্বা গীর্জার প্রাঙ্গণে কোলাহল করিয়া পরস্পরকে নূতন বৎসরের শুভকামনা জ্ঞাপন করিতেছিল, এই শব্দ শুনিতে পাইলে তাহীদের আনন্দ-কলোচ্ছ্বাস বিষাদ-সম্ভাষণে পরিণত হইত ; নিজেদের ও আত্মীয়স্বজনের সমূহ বিপদাশঙ্কায় তাহারা •ি হরিয়া উঠিত। গীর্জামণ্ডপে যে ধৰ্ম্মধবজীদল “আহোরাত্রে মাতিয়াছিল, ও এইমাত্র যাহারা ভগবানের প্রশংসায় ও তাহার প্রতি কৃতজ্ঞতায় নববর্ষের বন্দনা-গান স্বরু করিয়াছিল তাহারা এই শব্দ শুনিতে পাইলে সভয়ে স্তব্ধ হইত ও ইহাকে নরক-বাসীদের বীভৎস আৰ্ত্তনাদ ও ক্রর পরিহাস মনে করিয়| চমকিয়া উঠিত । নগরের আনন্দ-সম্মিলনে মদের পাত্র-হস্তে দণ্ডায়মান হইয়া যে বক্তা নব-বৎসরের উদ্বোধনে হর্যধ্বনি করিয়া মদের পাত্র ওষ্ঠে তুলিতেছিলেন, এই কদৰ্য্য শ্মশান-ধ্বনি কর্ণগোচর হইলে শুদ্ধ হইয়া তিনি সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষার বিফল ও ভবিষ্যতের ভগ্নোদ্যমের চিত্র স্পষ্ট দেখিতে পাইতেন ; গৃহে বসিয়া যাহার। নীরবে নববর্ধকে অভিনন্দিত করিয়া পুরাতন বৎসরের ন্যায়, অন্যায়, বিফলতা পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে বিচার করিতেছিল তাহারা নিজেদের অসহায় অবস্থা ও দুর্বলতার পরিচয় পাইয়া বিদীর্ণ বক্ষে গভীর হতাশা অনুভব করিত। সৌভাগের বিষয় সেই শব্দ মাত্র একটি প্রাণীর কর্ণগোচর হইল ; বিবেকদংশন ও আত্মগ্লানিতে পীড়িত হইবার তাহার যথেষ্ট কারণ ছিল । প্রচুর শোণিত-ক্ষয়ে লোকটি মৃতের মতন পড়িয়ছিল ও সজ্ঞানে আসিবার জন্য ছটফট করিতেছিল। সহসা সে অনুভব করিল যেন কেহ তাহাকে জাগাইবার চেষ্টা করিতেছে — যেন, কোনো নিশাচর পাখী কিম্বা ওই ধরণের কিছু তাহার মাথার উপরে উড়িয়া-উড়িয়া চীৎকার করিতেছে। সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল— হয়ত ইহা স্বপ্নও হইতে পারে।' অল্পপরেই সে বুঝিতে পারিল সেই চীৎকার কোনো পার্থীর নহে ; তবে নিশ্চয়ই সেই যমের গাড়ী ! ইহারই