পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মৃত্যু-দূত 8ፃፃ আসছে—আমাকে দেখছি মাড়িয়েই যাবে, সেটা খুব সুখের হবে ব’লে তো মনে হচ্ছে না ।” পরমুহূৰ্ত্তে গাড়ীখানি দৃষ্টিগোচর হইল—ভয়ে তাহার বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পাইতে বসিল । শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো তাহার চোখের তারাও নিশ্চল হইয়া গিয়াছে—ঠিক সামনের জিনিষ ছাড়া সে আর কিছুই দেখিতে পাইতেছেন । গাড়ীখানি পাশের দিক ইষ্টতে আসিতেছিল। প্রথমে তাহার একটিধার মাত্র দেখা গেল—একটি অতিবৃদ্ধ ঘোড়ার মুর্থ—কপালের চুলগুলি কটা ইয়। গিয়াছে এক চোখ কাণ । তার পর দেখ গেল শুকুনে রলার মত একপানি প—গিঠের উপর গিঠ দৈ গুয়া একটা লাগাম—অদ্ভুত জোড়াতাড়া দেওয়া পোড়ার সাজ ! ক্রমে ঘোড়াসমেত সমস্ত গাড়ীখানি নজরে পড়িল ; সেটিতে আর কোনো পদার্থ নাই ; চাকা গুলি ঢল-ঢল করিতেছে ; ঠিক সাধারণ ময়ল-ফেল-গাড়ীর মতো । এই পুরাণে] ও জীর্ণ যে কোন ভদ্রলোক সেটিকে কাজে লাগাইতে পারে না । কোচবাক্সে গাড়োয়ান বসিয়া ছিল। কিছুক্ষণ আগে সে নিজে চালকের যে বর্ণনা দিয়াছে মামুযটা হুবহু তাই ; গাড়ীখানি ও তার বর্ণনামাফিক । গাড়োয়ানের হাতে আপাদমস্তক গ্রন্থিবিশিষ্ট সেই লাগাম—মাথায় সেই পারে টুপী । সে ধমুকের মত বাকিয়া গিয়াছে ; নিদারুণ প্লাস্তিতে মাথা বুকের উপর ঝুকিয়া পড়িয়াছে। অপৰ্য্যাপ্ত বিশ্রামেও যে তাহার বিশেষ কিছু উপকার হইবে বলিয়া বোধ হয় না । মৃচ্ছ ভঙ্গের পরই একবার তাহার মনে হইয়াছিল নিৰ্ব্বাপিত দীপশিখার মত তাহার আত্মা দেহ ত্যাগ করিয়াছে। এখন সে ভাবটা কাটিয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু আত্মা দেহের মধ্যে বেশ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে বলিয়া মনে হইতেছে না ; নাড়াচাড়া খাইয়া সব উলটপালট হইয়া গিয়াছে। মনের এমন অবস্থায় অদ্ভূত অলৌকিক কিছু দেখা বিচিত্র নয়—ডেভিডও এই ধরণের কিছু প্রত্যাশা করিতেছিল। তবে এই দুৰ্ব্বলতাকে বেশীক্ষণ সে আমল দেয় নাই। এখন নিজের বর্ণিত অপদেবতাকে স্বচক্ষে দেখিয়া সে হতবুদ্ধি হইয়া গেল । সে ভাবিতে লাগিল, “আরে, আমি কি ক্ষেপে গেলুম নাকি ? দেখছি আমার শরীরটাই শুধু অসাড় হয়নি— মনের অবস্থা ও ভাল নয়।” চালকের মুখপানি তাহার দৃষ্টিগোচর হইতেই ভয়ে সে ঠাৎকাইয়। উঠিল। ঠিক তাহার সামনে আসিয়া ঘোড়াটি থামিয়াছে। গাড়োয়ান যেন স্বপ্ন হইতে জাগিয়া নড়িয় চড়িয়া বসিল ৷ শীর্ণ হাত দিয়া মুখের আবরণ সরাইয়ু সে কিসের সন্ধানে এদিক-ওদিক চাহিতে লাগিল । চোখোচোখি হইতেষ্ট ডেভিড তাহার বন্ধুকে চিনিতে পারিয়া শিহরিয়া উঠিল । সে মনে মনে বলিল, “আরে এ যে দেখছি জর্জ, —সাজপোষাক অদ্ভুত হ’লেও—জর্জই বটে। আশ্চৰ্য্য— লোকটা আসছে কোথেকে ? বছর খানেকের ওপর ওর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাং নাই । বিদেশ ভ্রমণ ক’রে ফিরছে হয় ত। আমার মতন স্ত্রী পুল পরিবার দিয়ে তে। আর ওকে বেঁধে রাখা হয় নি ; ওরা স্বাধীন লোক । উত্তর-মেরু হ’তেই বেড়িয়ে ফিরছে বোধ করি ; দারুণ শীতে খুব শুকনে আর ফ্যাকাশে ব’লেই মনে হচ্ছে ।” ডেভিড গভীর মনোযোগের সহিত জর্জকে লক্ষ্য করিতে লাগিল। তাহার মুখে কেমন একট। অদ্ভুত অস্বাভাবিক ভাব ছিল । কিন্তু, এ তাহার দোস্ত জর্জ ন হইয়াই যায় না ! সেই বাধাকপির মত মাথা, খাড়ার মত নাক, সেই বিপুল গোফ ! কিন্তু লোকটার মুখে এমন একটা জাদুরেলা ভাব আছে যে দোস্ত বলিয়। ইহাকে সম্বোধন করিতেও ভয় হয় । সহসা তাহার মনে হইল পাগলের মতো সে ভাবিতেছে কি ? সে কি শোনে নাই, গত বৎসর ঠিক নববর্ষের পর্বদিনে ষ্টকহলমের হাসপাতালে জর্জ মারা পড়িয়াছে ; এই গাড়োয়ানটিও জর্জ ছাড়া কেউ নয় ; জীবনে জর্জকে চিনিতে এই প্রথম গোলমাল ঠেকিতেছে। আচ্ছা, দেখাই থাকু, লোকটাতে উঠিয়া দাড়াইল । না, আর কেউ নয়, সেই শীর্ণ ক্ষীণ শরীর, সেই মাথ, ওই সে কোচবাক্স হইতে লাফাইয়। মাটিতে নামিল ;