পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬ প্রবাসী —বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড তাদের খেলাফং কমিটির একজন বিশেষ পাণ্ডা ; তার এলাকা থেকে তিনি মাসে ত্ৰিশ জন লোককে আইন অমান্য করিবার জন্য স রে পঠাইবেন বলিয়া নিজ হইতে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন । —করিম সব কথা বুঝিল না, তবে বিশ্বাস করিল ধে, গান্ধী মহারাজের নামে সে যেমন শুনিয়াছে যে অনেক সুদস্তি লোক ও রা তারাতি শুধরাইয়। গিয়াছে, হাজী সাহেবও হয়ত তেমনি সাধু হইয়৷ উঠিয়াছেন। জেল হইতে বাহির হইয়। করিম তিন বংসর পরে একট। নূতন উল্লাসের স্বাদ পাইণ-আশায় তার বুক ভরিয়া উঠিল, সঙ্গে-সঙ্গে উদ্বেগে তার বুক কঁাপিতে লাগিল । বাড়ী যাইবার ভাড়াট। সরকার দয়া করিয়া দিয়া দিয়াছিলেন । করিম কলিকাতার পথে শতবর পণিকদের জিজ্ঞাস করিয়৷ শত বার ভুল করিয়া অবশেষে পুষ্টশনে যাইয়। পেছিল, এবং একেবারে বাড়ার ষ্টেশনের টিকিট কাটিয়া গাড়ী চাপিয় বসিয়া রহিল । রাত্রিশেষে গাড়ি পৌছাইবার কথা– কন্তু তার চোখে সমস্ত রাতে এক পলকের জন্যও ঘুম আসিল না । টলিতে-টলিতে ভোরের আলোয় চির-পরিচিত গায়ের মধ্য দিয়া সে বাড়ীতে যাইয়। পৌছাইল । নিজের বাড়ী সে আজ নিজে আর চিনিতে পারিল মা। সবিস্ময়ে সে দেখিল সকালের আলে উঠিন্তে-ন।-উঠিন্তে তার অপরিচ্ছন্ন আঙিনায় ‘বন্দেমাতরম্ ও ‘আল্লাহে-আকবর’ এবং মহাত্ম। গান্ধী হইতে স্বরু করিয়! যত অজ্ঞাত লোকের নামে প্রধপনি চলিল। তাঙ্গার দিকে কেহ ফিরিয়া ও তাকায় না । শুল্লার শেষ ছিল না। করিম অনেকক্ষণ দাড়াইয়| পারে ধীরে অগ্রসর হইল। এদের যিনি মোড়ল এবং পেন্সিল লইয়। অনেক কথ। লিখিতেছিলেন তি করিমকে চিনিতে পারিলেন, দু-একটা কথা ও কহিলেন । করিম তাকে জিজ্ঞাস করিয়া জানিল এ বাড়ী এখন কংগ্রেস ও খেলাফং আফিস । খাজনার দায়ে করিমের বাড়ী-ঘর নীলাম হইয় গেলে হাজী সাহেব তাহ কিনিয়৷ *াইলেন এবং কংগ্রেস ও খেলাফতের আফিস এখানে প্রতিষ্ঠিত করিলেন । কবে যে খাজনা বাকী পড়িল এবং নীলাম হইল, করিম সে-সম্বন্ধে অনেক বিস্ময় প্রকাশ করিল এবং জানাইল যে, তাহার ভিট। সে যে-করিয়াই হোক উদ্ধার করিবে ; কিন্তু তাহাতে মোড়ল শুদ্ধ সমস্ত চীংকার-পরায়ণ ভলাণ্টীয়ার-সমাজ রুখিয় উঠিল । বচস যখন হাতাহাতিতে ঘাইয় ঠেকিতেছিল, তখন মোড়ল তার চেলাবৃন্দকে হাকিলেন, “ভাইসব, ভুলে না আমর। অহিংস-ব্রতধারী। এ আহাম্মক যা খুলী বকিয়। যাক । এ বাড়া হ’তে আমরা নড়ব না।”-করিম হতাশ হইয় চলিয়। যাইতেছিল, একবার ফিরল, জিজ্ঞাসা করিল--- “আমার বিবি ও মেয়ে – তার কোথা ?” “তোর বিবি –বেশ বলছিস্ । তুই ন৷ তাকে বিনদোষে মার-ধর করে তালাক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলি । এপন আবার জিজ্ঞাসা করছেন, আমার বিবি কোথ। -- যা : ও কথা মূপে আনিস না –সে এপন হাজী সাহেবের নিকে-করা বিবি ।” সে তালাক দিয়াছিল---সাথিনাকে ? কবে ? কোথায় ? মিথ্য জুয়াচুরী । “ছলিমুল্ল মৌলবী সে তালাকের সাক্ষা” । সে মিথ্যাবাদী ? সে আজ কমবপত ন্যাসরেসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ক’রে জেলে গিয়েছে ; কিন্তু তার শিষ্যদল তার এ অপমান সক্টবে না । অহিংস-ব্রতীদের অৰ্দ্ধ-চন্দ্রে করিম বিদায় লইয় গেল । বলিল, সে খুন করিবে । নীচেকার মাটি হইতে উপরের আকাশট পয্যন্ত সমস্ত দাউ-দাউ করিয়৷ জলিয়। উঠিল--তার পর তা একেবারে চুর চুর হইয়া ভাঙিয় এক প্রলয়-বিলোড়নে অগণিত স্ফুলিঙ্গের মত ছুটয় চলিতে লাগিল । সব শেষে রহিল একটা পাণ্ডুর তাভা, আর সমস্ত গাছ-পাল, লতা-পাত, ফুল-ফল, নদী-খাল-বিল মুছিয়া ফেলিয়া একটা শূন্তত । গ্রামের শেষ সীমার গাছটির নীচ হইতে করিম যপন উঠিয় দাড়াইল তখন সামনের দূর-বিস্তৃত ধান-ক্ষেতগুলির উপরে অস্তগত স্বর্য্যের হলদে রঙেব আভাটি নিবিতেছে । করিম চলিয়া গেল । পলাইয়া বিন টিকেটে কয়েদ থাকিয়৷ শেষে আবার কলিকাতার পথে আসিয়া দাড়াইল । পথে পথে হাটিয়া বসিয়| শুইয়। ভিক্ষা করিয়া খাইয়। করিম সজ্ঞাহীন, বোধহীন, নিশ্চল পাথরের মতন চলিল । কিন্তু বেশী দিন এভাবে কাটে না । মনের আগুন নিবিল ন এবং ক্ষুধার তাড়া দিনদিনই উৎকট হইতে লাগিল ।