পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8సిశి প্রবাসী—অষিাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড কোণে ঘনপত্র বৃহদাকার একটি গাবগাছ—তাহার সৰ্ব্বাঙ্গে জোনাকি হাজারে হাজারে অদৃশু জীবের অসংখ্য চক্ষুর মত টিপ, টিপ করিয়া নিবিয়া-নিবিয়া জলিতেছে ; আলোকের ঐটুকু স্পর্শে সেই স্থানের অন্ধকার গাঢ়তর হইয়া আছে ; সে যেন কি বলিতে চায়—কিন্তু না বলিতে পারিয়া প্রাণপণ ব্যাকুলতায় হাপাইতেছে। লক্ষ্মীর স্বায়ুকেন্দ্র নিরতিশয় তীক্ষু হইয়া এই নিঃশব্দ অন্ধকারের ভিতর হইতে গুপ্ত অথচ অবিশ্রান্ত একটি চঞ্চলতার আঘাত । গ্রহণ করিতে লাগিল –প্রত্যেক অলক্ষিত স্থানেই যেন একটি অতীন্দ্রিয় গতিবিধি চলিতেছে ; কি একটা যেন গা ঢাকা দিয়া লুকাইয়া আছে—সে ছায়া নয়, বস্তু নয়, অথচ যেন তা’ ছায়। বস্তু দুই-ই ; ঐ সে সরিয়া গেল, ঐ অগ্রসর হইতেছে, ঐ দেখা যায়, ঐ মিলাইয়া গেল—এমনি একটা লুকোচুরি লক্ষ্মীর চোখের সাম্নে অবিরাম চলিতে লাগিল। লক্ষ্মী ধীরে ধীরে যাইয়া শ্বশ্রীর গা ঘেসিয়া বসিল । কিন্তু সেস্থান হইতেও ওদিক্কার শুইবার ঘরখানার ভিতর পর্য্যন্ত তাহার চোখে পড়িতেছিল । লক্ষ্মীর মনে হইল, সেখানেও একটা নড়াচড়া, চলাফেরা, উকিঝুকি চলিতেছে—ঘরের বদ্ধ বাতাসে যেন কার মৰ্ম্মান্তিক দীর্ঘনিঃশ্বাসের তরঙ্গ বহিয়া চলিয়াছে। আর কোনো দিকে না চাহিয়া স্বমুখের প্রজ্জলিত বাতিটার দিকে লক্ষ্মী অপলকনেত্রে চাহিয়া রহিল। রাত্রে খুব সতর্ক হইয়া সকলে শয়ন করিলেন। মানুষ মনে করে, পরলোকের যে-স্তর পর্য্যন্ত সংসারিক বন্ধন-মায়ার আকর্ষণলীলা চলিতে থাকে তাহার গণ্ডী অতিক্রম কমিতে মৃতাত্মা সহজে পারে না ; সুতরাং আসক্তির দুর্শিবার টানে তাহার পক্ষে নিকটতম প্রিয়তম জনের একান্ত সমীপবৰ্ত্তী হওয়া কিছুমাত্র অস্বাভাবিক নহে। কিন্তু অনেকগুলি তুক্‌ আছে—তাহার। নাকি মূতাত্মাকে দূরে দূরে রাখে। সে-রাত্রি ও পরের দিবাভাগটি অম্নিই কাটিল । কিন্তু চতুর্থ দিন সন্ধ্যার সময় লক্ষ্মীর মনে হইল বায়ুমণ্ডল যেন সেই অমামুষিক চঞ্চলতার তাড়নে চিড় খাইয়া কঁাপিয়া-কঁাপিয়া উঠিতে লাগিল। বাড়ীর অন্ধকার যেন ঠিক অন্ধকার নয়—যেন বিশালপক্ষ একটা পক্ষী বাড়ীর এ-প্রান্ত হইতে ও-প্রাস্ত পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত ডানায় ঢাকিয়া গোপন ও অগণ্য আনাগোনার একটা ষড়যন্ত্রের উপর হুমুড়ি খাইয়া পড়িয়া আছে—সে যেম উঠি-উঠি করিতেছে, সে উঠিয়া গেলেই ষড়যন্ত্রকারীর ভগ্নস্ত,প ক্রিমির মত পৃথিবীময় ছড়াইয়া পড়িবে। এমনি ধারা ভয়ঙ্করের দুশ্চেন্ত একটা মোহ আছে ; সে যেন মন্‌টাকে ফঁাদে জড়াইয়া ফেলে। আবিষ্ট বন্দী মনের প্রাণান্তকর ছটফটানির শেষ হয় কেবল তখন যখন এই দুঃসহ শীতল আবহাওয়ার মধ্যে সে মূচ্ছিতের মত এলায়িত শ্লথ অসাড় হইয়া আসে। লক্ষ্মীর মনও এমুনি বাধা পড়িয়াছিল-হঠাৎ স্বামীর খক্‌ খক্‌ কাশীর প্রচণ্ড শবে তাহার মন একটানে বন্ধনজাল ছিড়িয়া স্বস্থানে ফিরিয়া আসিয়া ধক্ ধকৃ শব্দে দুলিতে লাগিল। সে জোর করিয়া নিজেকে সবেগে টানিয়া লইয়া ঘরের মধ্যে ছেলের কাছে যাইয়া শুইয়া পড়িল । নিকটেই আড়ালে স্বামী ও শ্বশ বসিয়া শ্রাদ্ধসম্পৰ্কীয় কথাবাৰ্ত্ত কহিতেছিলেন, কিন্তু তবু লক্ষ্মী ঘরের মধ্যে তিষ্ঠিতে পারিল না। অত্যন্ত্রকাল পরেই সে ছেলেটিকে লইয়া তাড়াতাড়ি বারান্দায় আসিয়া শাশুড়ার পাশে ঝুপ করিয়া বসিয়া পড়িল । কাশীশ্বরী জিজ্ঞাসা করিলেন—কি বেীমা ? লক্ষ্মী কথা কহিতে পারিল না। কাশীশ্বরী বলিলেন—অমন ক’রে চ’লে এলে যে ? লক্ষ্মী কষ্টের সহিত বলিল,—কিছু না, মা, অম্নি । তাহার বুকের মধ্যে কি করিতেছিল তাহা সেই জানে —ঘোমটার মধ্যেও তাহার চোখের দু’পাতা যেন এক হইতে চাহিল না। লক্ষ্মীর এই সত্রাস পলায়ন অকারণ নহে । ছেলের পাশে শুইয়াই তাহার মনে হইতে লাগিল— ওদিক্কার খোলা জানালাটির ঠিক ও-ধারে আসিয়া কে যেন নিঃশব্দে দাড়াইয়া আছে, সে কেবলি গলা বাড়াইয়া উকি মারিয়-মারিয়া ঘরের ভিতর তাহাদেরই উপর দৃষ্টি ফেলিতেছে। লক্ষ্মী মুখ তুলিয়া চাহিলেই দেখিতে পাইত জানালায় কেহই নাই ; কিন্তু এই