পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] তৃষিত আত্মা 8ఫిలి নিদারুণ অনিশ্চিতকে ভালমন্দ যে-কোনো প্রকার সুনিশ্চিতে পরিণত দেখিবার মত দৃঢ়তা তার অবশ মনের ছিল না। আতঙ্কট উত্তরোত্তর উৎকট হইয়া লক্ষ্মীর শ্বাসপ্রশ্বাসের রন্ধ পথটি চাপিয়া-চাপিয়া তাহাকে যেন অজ্ঞান করিয়া ঠেলিয়া লইয়া বাহিরে ফেলিল । কাশীশ্বরী মনে মনে বুঝিলেন, বধূ ভয় পাইয়াছে। তিনি লক্ষ্মীর পিঠের উপর সস্নেহে হাত রাখিয়া বলিলেন,—শ্রাদ্ধটি না শেষ যাওয়া পৰ্য্যন্ত সন্ধ্যার পর একৃলা কোথাও থেক না, মা । সীতাপতি শিশুর নাম রাখিয়াছিলেন আলো । সেই রাত্রে সীতাপতিরই কণ্ঠের শব্দে লক্ষ্মীর ঘুম ছ্যাৎ করিয়া ভাঙিয়া গেল। লক্ষ্মী যেন শুনিল, সীতাপতি বাহির হইতে গভীরস্বরে ডাকিতেছেন, আলো ? ঐ একটিবার মাত্র,-লক্ষ্মী ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া বসিয়া আৰ্ত্তকণ্ঠে ডাকিল,—ম ? শাশুড়ী জবাব দিলেন,—কি, বৌমা ? —কে যেন খোকাকে ডাকূলে, শোননি ? —না, আমি ত শুনিনি, জেগেই আছি । লক্ষ্মী বলিল,—আলো ব’লে ডাক্‌লে । বাড়ীর অপরাপর সবাই শিশুকে খোকা বলিয়া ডাকে কেবল সীতাপতি ডাকিতেন আলে। বলিয়া। লক্ষ্মীর কথা শুনিয়া এবং তাহার কণ্ঠস্বরে অপরিমিত একটি উদ্বেলতা লক্ষ্য করিয়া কাশীশ্বরী উঠিয়া তেলের প্রদীপটি জালিলেন এবং দ্বীপ হস্তে লক্ষ্মীর শয্যাপ্রান্তে যাইয়া শিশুর মুখের দিকে তীক্ষদৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিলেন, শিশুরা যেমন ঘুমায় সেও তেমনি নিশ্চিন্ত আরামে মুস্থ নিদ্রায় অভিভূত । - কাশীশ্বরী খোকার ও লক্ষ্মীর শিয়রে বসিয়া রহিলেন, সে-রাত্রি তাহাদের জাগিয়া কাটিল । পরদিন মধ্যাহ্নে হঠাৎ একবার শিশুর মুখের দিকে চাহিয়া কাশীশ্বরী চমকিয়া উঠিলেন ; শিশুর চোখে জ্ঞানের ও ধারণাশক্তির অভাবের যে সহজ স্বচ্ছ সরল নিস্তেজ দৃষ্টি থাকে খোকার চোখে তাহ যেন নাই – জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলি তার সম্যক বিকশিত জাগ্ৰত কৰ্ম্মক্ষম হইয়া পৃথিবীর সঙ্গে শিশু আত্মাটির পরিচয় সম্পূর্ণ দিয়া গেছে, এমুনি তার সজ্ঞান দৃষ্টি। দেখিয়া কাশীশ্বরী যেমন বিস্মিত হইলেন তেমনি ভীতও হইলেন, কিন্তু মুখে তিনি মনের ভয় ঘূণাক্ষরেও প্রকাশ করিলেন না । সেইদিনই তিনি গোপনে একটি মাদুলি সংগ্ৰহ করিয়া শিশুর গলায় পরাইয়া দিলেন । লক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিল,—মাজুলী কিসের, মা ? কাশীশ্বরী নিস্পৃহস্বরে বলিলেন –তুমি যে কাল ভয় পেয়েছিলে, বেীমা, তাই । কথাটি ঠিক পরিষ্কার হইল না, কিন্তু লক্ষ্মী মনে মনে বুঝিল অকল্যাণকর একটি ভয়ের ছায়াপাত শ্বাশুড়ীর প্রাণেও হইয়াছে। বুকটি তার হঠাৎ কঁাপিয়া উঠিল। রাত্রের প্রথমভাগে লক্ষ্মীর চোখে ঘুম আসিল না। প্রবল বেগে বাতাস বহিতেছিল । রাত্রির অন্ধকার যেন এই দুদিনে তার অন্তরস্থ শূন্ত ক্ষুধিত মহাগহরটির মুখের আবরণ তুলিয়া ধরিয়াছে আর পৃথিবীর কঠিন অকঠিন সমুদয় বস্তু বায়ুবেগে ক্ষয় হইয়া তাহারই মধ্যে হুহু শব্দে ঢলিয়া পড়িতেছে। দূরে কোথায় একটি কুকুর তারস্বরে চীৎকার করিয়া থামিয়া-থামিয়া কঁাদিতেছিল—সে-শব্দটা যেন আসন্ন অনিবাৰ্য্য বিনাশের শঙ্কায় আতুর ধরণীরই সবিরাম আৰ্ত্ত হা হা রব । ঘরে দীপশিখাটি নাচিতেছিল, সে-দিকে চাহিয়া লক্ষ্মীর সহসা মনে হইল যেন কাহার রক্তাক্ত লেলিহান জিহবা লক্ লক্ করিয়া বায়ুর স্তরপ্রান্ত লেহন করিতেছে। সে পাশ ফিরিয়া শুইল । শাশুড়ীর সঙ্গে কথা কহিতেকহিতে লক্ষ্মীর কখন ঈষৎ একটু তন্দ্রার ঘোর আসিয়াছিল---ঘোর ভাঙ্গিয়া হঠাৎ সে জাগিয়া দেখিল ঘরের প্রদীপ নিবিয়া গেছে এবং ঘোর অন্ধকারেও সে পষ্ট দেখিতে পাইল কে যেন দ্বারের বাহির হইতে চৌকাঠের ফাক দিয়া হাত বাড়াইয়া ঘরের ভিতরকার মাটি হাত ড়াইতেছে। ---ম, আলো ---বধুর ভীত চীৎকারে কাশীশ্বরী, “কি হ’ল কি হ’ল বলিতে শশব্যস্ত উঠিয়া বসিয়া প্রদীপ জালিলেন, দেখিলেন, বধু উঠিয়া দাড়াইয়া পাতাটির মত হি হি করিয়া কঁাপিতেছে, তার চক্ষু মুদ্রিত, মুখ বিবর্ণ,