পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্য। ] ধ্রুবতারা 8షిణ


চাপা গলায় গর্জন করিয়া মা বলিলেন, “আলো জাল্ব কি আমার হাড় কখানার আগুন দিয়ে ? মিনসে নিজে মরে জুড়িয়েছে, আমাকে রেখে গেছে তিল তিল ক’রে দগধে মরবার জন্যে ।”

পরলোকগত পিতার উল্লেখ এমন শ্রদ্ধার সহিত হইতে দেখিয়া ছেলেটি আর কোনো কথা না বলিয়া হাংড়াইতে হাংড়াইতে সিড়ি বাহিয়া উপরে উঠিয়। পড়িল । দোতলার ছোট একটা ঘরের কোণে একটা মোমবাতির টুকুর। জলিতেছে। তাহারই কাছে ছেড়ামনুল বিছানায় একটি তেরো চৌদ্দ বৎসরের ছেলে শুইয়। পাশে বসিয়া একটি আট দশ বৎসরের মেয়ে মোমবাতি গলিয়া তলায় যে চাপ বাধিয়া যাইতেছে সেচ গুলি সংগ্ৰহ করিতেছে । যুবক ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “কি করছিস্ রে চারু ?” চারু বলিল, “নৃতন বাতি তৈরি করব বলে মোম নিচ্ছি ।” “নৃতন বাতি তৈরি করুবি ? মস্ত লোক দেখছি ঘে তুষ্ট ! কি ক’রে করুবি ?” মেয়েটি বলিল, “ওম, তুমি জাননা বুঝি দাদা ? ভরি ত শক্ত ! সেই যে ছোড়দার পায়ের মলমের বাটিটা সেইটাতে এই টুকুরো গুলো রেখে উকুনের পশি রেখে দেব, তারপর গ’লে গেলে বেশ মোট ক’রে স্বাকড় পাকিয়ে তার মধ্যে দিয়ে, বাটিটা উকুনের ধার থেকে সরিয়ে নেব। জমে গেলে চারপাশ দিয়ে ঠুকলেই বেশ বাটির মতন গোল মোমবাতি বেরিয়ে আসবে।” যে ছেলেটি বিছানায় শুইয়া ছিল, সে এই সময় পশি ফিরিয়া নিদ্ৰাজড়িত স্বরে বলিল, “দাদা, আমার জন্যে কিছু খাবার এনেছ ?” যুবক ব্যস্ত হইয়া বলিল, “কেনরে, তুই এখনও কিছু খাস্নি নাকি ?” তাহাদের মা ঘরে ঢুকিতে ঢুকিতে আবার ক্রুদ্ধ স্বরে বলিলেন, “কি খাবে শুনি ? ওবেলার বাসি ভাত ছিল, তাই চারু খেয়েছে, আর তোর জন্তে আছে। এতটুকু বার্লির গুড়ে পড়ে ছিল, তাই সেদ্ধ ক’রে দিলাম, তা নবাবপুত্রের মুখে রুচল না, তিনি আঙর বেদান খাবেন ।” যুবকের মুখ বেদনায় বিকৃত হইয়া উঠিল। সে কথা না বলিয়া আস্তে আস্তে বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । ঘর হইতে মা বলিলেন, “কোথা যাস নরু, খাবি না ?” নরেন বলিল “ধীরু খায়নি, আমি আর কি খাব ? চারু তোর তৈরি একটা মোমবাতি জালত, নীচে এসে দরজা বন্ধ ক’রে যা, আমি বাইরে যাচ্ছি।” চারু বাতি জালিয়। দিল, নরেন আস্তে আস্তে নামিয়া গেল। গলির মুখের কাছে দাড়াইয়। সে এক বার আকাশের দিকে তাকাইল, কলিকাতার ধূমাচ্ছন্ন আকাশ তাহাকে কোনই সাস্তুনার কথা কহিল না । সে চলিতে আরম্ভ করিল। এবার সে যে বাড়ীর দরজার কাছে আসিয়া দাড়াইল, তাহার অঙ্গেও দারিদ্র্যের চিহ্ন তাহার নিজের বাড়ী অপেক্ষা কম পরিস্ফুট নয় । তবে নীচে রান্ন৷ ঘরে হারিকেন লুণ্ঠন জলিতেছে, রান্না চড়িয়াছে, এক পাশে বসিয়া তরকারি কুটিতেছে একটি মেয়ে। তাহার বয়স চৌদও হইতে পারে, আঠার ও হইতে পারে ঠিক করিয়া বলা শক্ত। পরণের কাপড় মলিন, ছিন্ন, গায়ে ও কোন গহনার চিহ্ন নাই, হাতে দুগাছি হাতীর দাতের চুড়ী, বহুদিন ব্যবহার করার জন্য সেগুলির রং মান হুইয়া গিয়াছে । মেয়েটিকে স্ন শ্ৰী লাগে না, কিন্তু সে কুৎসিতও নয় । আদর-যত্বে থাকিলে ও যৌবনের উপযোগী বেশভূষা করিতে পাইলে তাহাকে দেখিতে যে কিছুই মন্দ হইত না, সে বিষয়ে দশকের সন্দেহ থাকে না । নরেন রান্নাঘরের সম্মুখে আসিয়া বলিল, “সতীশ কোথায় সরযু ?” মেয়েটি মুখ তুলিয়া বলিল “ওম, আপনি কখন এলেন ? আমিত শুনতে পাইনি ? সদর দরজাট খোলাই রয়েছে বুঝি ?” নরেন বলিল, “হঁ্যা খোলাইত দেখলাম । বেশ সাবধান মামুষ তোমরা, আমি না হ’য়ে যে কোন ও চোর